লালগ্রহে প্রথম পা দেবে মানুষ, ২০ বছরের মেয়ে এখনই বলছেন, স্বপ্ন তা হলে সত্যি হয়!
‘The Backyardigans’ কার্টুন সিরিজ তাঁর ছোট থেকেই খুব পছন্দ। সেই অ্যানিমেটেড কার্টুন সিরিজের কোনও এক পর্বে দেখানো হয়েছিল, পাঁচ বন্ধু মিলে মঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছে। কল্পনার টাইম মেশিনে চড়ে তাঁরা ঘুরে আসে লালগ্রহে। সেই পর্ব ছোট্ট অ্যালিসার মনে দাগ কাটে। ছোট্ট অ্যালিসার মনে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে কৌতুহল জাগে। সেই কৌতুহলের বিস্ফোরণে স্বপ্নের জন্ম। অ্যালিসা এর পর থেকে কতবার যে কল্পনায় লালগ্রহে ঘুরে এসেছেন!
ছোট্ট অ্যালিসার স্বপ্ন ছিল একটাই। একদিন লালগ্রহে যাবে। বাবাকে প্রথমবার ছোট্ট অ্য়ালিসা তাঁর ইচ্ছের কথা জানাতেই মিস্টার বার্ট কার্টসন আনন্দে নেচে উঠেছিলেন। লালগ্রহের জন্য বাবা ও মেয়ের হৃদপিণ্ড যেন সেদিন থেকেই একসঙ্গে স্পন্দিত হতে শুরু করে। সাত বছরের অ্যালিসাকে নিয়ে আলাবামার হান্টসভিলেতে একটি স্পেস ক্যাম্পে নিয়ে যান বার্ট। সেই থেকে শুরু।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কার কথা বলা হচ্ছে! Alyssa Carson. প্রথম মানুষ হিসাবে তিনিই পা রাখবেন মঙ্গল গ্রহে। তবে স্বপ্ন সত্যি করার জন্য তাঁকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে থাকতে হয়েছে। লক্ষ্য স্থির রাখতে হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। ২০১৩ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সেই NASA-র সব ভিজিটর ক্যাম্পে প্রবেশের জন্য পাসপোর্ট পেয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলেছিলেন অ্যালিসা।
নভোচার ক্রিস হ্যাডফিল্ড ১৯৬৯ সালে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলে মানুষ চাইলে পা রাখতেই পারে। ষাটের দশকের প্রযুক্তিতে ভর করেই মানুষ মঙ্গলে পা রাখতে পারত বলে মনে করেছিলেন তিনি। এখন তো প্রযুক্তি অনেক উন্নত। তবে মঙ্গলে পা রাখার পর বিপদের আশঙ্কা রয়েছে নভোচরের। অর্থাত্, মঙ্গল থেকে নভোচরদের ফিরে আসার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে এসব তুচ্ছ ঝুঁকি নিয়ে একটুও ভয় পাচ্ছেন না অ্যালিসা।
অ্যালিসা কারসন মঙ্গলে থাকবেন দু থেকে তিন বছর। এক্সপ্লোরেশন, ট্রি প্ল্যান্টেশন, মাটি পরীক্ষা, প্রাণ ও জলের খোঁজ, সবই তাঁকে করতে হবে একা। বুঝতেই পারছেন, কত বড় চ্যালেঞ্জ! কিন্তু অ্যালিসা এটাকে চ্যালেঞ্জ বলে ধরছেনই না। বলছেন, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার।
২০৩৩ সালে অ্যালিসার মঙ্গলে যাওয়ার কথা। অ্যালিসার বয়স তখন হবে ৩৩ বছর। ততদিনে অবশ্য প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। আর অ্যালিসাকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা সবরকম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে জলের খোঁজ পেয়েছিল। মঙ্গল গ্রহ ঠান্ডা ও শুষ্ক বলে ধারণা ছিল গবেষকদের। কিন্তু কিউরিওসিটি রোভার-এর দেওয়া তথ্য তাঁদের ধারণা বদলে দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মঙ্গলে বিশেষ ধরনের লবণের অস্তিত্ব রয়েছে। সেই লবণ জলকে ফ্রিজিং পয়েন্টের নিচে কোনও এক অবস্থায় পৌঁছতে সাহায্য করে। মঙ্গলে জলের খোঁজে আরও অনেক পরীক্ষা করবেন অ্যালিসা।
পৃথিবী থেকে মঙ্গলের গড় দূরত্ব প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মাইল। বেশিরভাগ সময় এই দূরত্ব বজায় থাকলেও প্রতি ১৫ বছরে পৃথিবী ও মঙ্গল ঘুরতে ঘুরতে বেশ কাছাকাছি চলে আসে। তখন দূরত্ব হয় প্রায় ৩৩.৯ মিলিয়ন মাইল। ২০১৮ সালে এমনটি হয়েছিল। ১৫ বছর পর ২০৩৩-এ ফের পৃথিবী ও মঙ্গল কাছাকাছি আসবে। সেই সময়ই অ্যালিসাকে পাঠাতে চায় নাসা।
মঙ্গলে যাওয়ার আগে একের পর এক প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে অ্যালিসাকে। মাইক্রোগ্র্যাভিটি, অক্সিজেনের অভাবে দেহে বিভিন্ন পরিবর্তন হয়। সেসব সমস্যার সঙ্গে তাঁকে জুঝতে হবে। তাছাড়া দিনের পর দিন শূন্যে ভেসে থাকাটাও বড় চ্য়ালেঞ্জ। সেসবের জন্য বছরের পর বছর ধরে ট্রেনিং করছেন অ্যালিসা।
একেবারে নতুন পরিবেশে সম্পূর্ণ একা। মানুষের দুনিয়া থেকে অনেক দূরে। অভিজ্ঞতা কেমন হবে তাঁর! যে কাজ কোনও মানুষ করতে পারেনি, সেটাই করার সুযোগ পাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার হ্যামন্ডে জন্মগ্রহণ করা অ্যালিসা। দুচোখ ভরে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সত্যি হবে। অ্যালিসা তো এখন থেকেই বলছেন, স্বপ্ন তা হলে সত্যি হয়!