করোনার ভয়ানক ঢেউতেও virus-proof village-এর সম্মান অর্জন `টিলার ফাঁদে`র

Soumitra Sen Mon, 31 May 2021-8:42 pm,

নরেন্দ্র মোদীর 'স্বচ্ছ ভারত' স্লোগান যখন ঢের দূরের বস্তু তখনই কিন্তু পশ্চিম কার্বি আংলং জেলার (West Karbi Anglong district) এই ছোট্ট গ্রাম  নিজেদের মতো করে শুরু করে দিয়েছিল স্বচ্ছতার অনুশীলন। ফলে অসমের সব চেয়ে পরিষ্কার গ্রামের তকমা জুটেছিল আগেই। পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি পালন আর শৃঙ্খলা-- এই তিন বর্মেই সুরক্ষিত রয়েছেন এই গ্রামের টিওয়া জনজাতি। ৯০ ঘর মানুষ। জনসংখ্যা ছশো।

গ্রামের নাম 'সিকদামাখা'। যার অর্থ-- 'টিলার ফাঁদ' (trap of hillocks)। অসমের লোকশ্রুতি, চারপাশে টিলা-ঘেরা এই গ্রামে অপদেবতা ও ভূতেরা নাকি ফাঁদ পেতে মানুষ ধরত! তাই অতীতে সিকদামাখা ছিল ভয়ের এলাকা। 

নাম যা-ই হোক, ১৯৫৩ সালে তৈরি এই গ্রাম স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছে প্রথম থেকেই। আর এরই জোরে সে প্রথম ঢেউ ঠেকিয়ে দিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় ঢেউও সে আটকে রাখেতে পেরেছে। সিকদামাখাই সম্ভবত অসমের একমাত্র করোনামুক্ত গ্রাম।

যদিও মেঘালয়ের মাওলেনং গ্রামই বহু দিন ধরে সব চেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে পর্যটনের চাপ আর পর্যটনব্যবসার উৎপাত তার পরিচ্ছন্নতায় থাবা বসিয়েছে। সিকদামাখা ধীরে ধীরে জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে।

Shikdamakha-য় আগে হাটবারে গ্রামের চারপাশে জমত আবর্জনা। সেই ময়লার স্তূপ সাফ করত-করতে বিরক্ত হতেন গ্রামবাসীরা। অবশেষে তাঁরা ২০১০ সালে বড়দিনের আগে 'সাফাই অভিযান কমিটি' গড়ে ফেলেন। ২০১২ সালে, 'সেন্ট অ্যান্টনি ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনে'র উদ্যোগে গ্রামে শুরু হয় পরিচ্ছন্নতার প্রতিযোগিতা। ফল মেলে হাতেনাতে। ১ নম্বরে থাকতে সব পরিবারই কোমর বাঁধে। রাস্তায় ঝাড়ু পড়তে থাকে ঘন ঘন। সব ময়লা জমা হয় বাঁশের ঝুড়িতে। ক্রমে প্রতিযোগিতাই পরিণত হয় অভ্যাসে। গ্রামকে প্লাস্টিকমুক্ত বা খোলা জায়গায় শৌচের অভ্যাস থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনকে তাই বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। গ্রামবাসীরাই প্লাস্টিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। পাকা শৌচালয় সব বাড়িতে।

সেই সুঅভ্যাসের সুফলই বেশি করে দেখা গেল এই করোনা-পর্বে। গত বছরেই দেখা গিয়েছিল এই গ্রাম নিজেকে করোনা-মুক্ত (Covid-19) রাখতে পেরেছে। সরকারি লকডাউনে জোর করে ঘরবন্দি হতে হয়নি সিকদামাখার গ্রামবাসীদের। নিজেরাই সচেতন হয়েছেন। নিজেরাই সমস্ত কোভিডবিধি মেনে চলেছেন। সকলের বাড়ির সামনে রাখা হয়েছে স্যানিটাইজার।

এক গ্রামবাসী জানান, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের জমিতে চাষবাস করে জীবনধারণ করেন। পারতপক্ষে বেরোন না। আর বেরোলেও মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করেন। স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন। অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করেন। আর এই সচেনত-লড়াই দিয়েই তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছেন।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link