`অনশুলাই আমার পৃথিবী`, বোনের নামে হাতে ট্যাটু করলেন Arjun Kapoor
নিজস্ব প্রতিবেদন- বোন অনশুলার নামে হাতে ট্যাটু করলেন অর্জুন কাপুর। সঙ্গে লিখলেন, তাঁর ও অনশুলার নামের আদ্যক্ষর A। তিনি এও জানেন, অনশুলার সঙ্গে তাঁর জীবন এমনভাবে জড়িত, যা শেষ হওয়ার নয়। এবার হাতে ট্যাটু করে তা অনশুলাকে উৎসর্গ করলেন অর্জুন।
অর্জুনের স্পষ্ট মনে আছে, প্রথম দিনের কথা। হাসপাতাল থেকে ছোট্ট অনশুলাকে এনে তার কোলে দিলেন ন্যানি। সেই যে ছোট্ট আঙুল দিয়ে ভাইয়ার আঙুল জড়িয়ে ধরল পুঁচকে বোন, ব্যাস আর তাকে কোল থেকে নামাতে পারলেন কই?
একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া, পার্কে খেলতে যাওয়া, বন্ধুদের জন্মদিনের পার্টিতে যাওয়া, সবই একসঙ্গে। আর এভাবেই জড়িয়ে জড়িয়ে থাকা সারা জীবন।
বাড়িতেও খেলার সাথী সেই ছোট বোন অনশুলাই। তার শাসনে, তার আদরেই অর্জুনের প্রথম উপলব্ধি, বোনের প্রতি তাঁকে দায়িত্বপালন করতে হবে।
বাবা বনি কাপুর বিখ্যাত প্রযোজক, কাকা অনিল কাপুর সুপারস্টার, আরেক কাকা সঞ্জয় কাপুর তাঁর মত করে বলিউডে অভিনেতা হিসাবে জায়গা করে নিচ্ছেন, সকলে ব্যস্ত। তাই ছোট থেকেই বাড়ির সব কচিকাঁচাদের দায়িত্বই অর্জুনের।
কাপুর পরিবার কলেবরে বেশ বড়। আর শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে ভাইয়া-ভাইয়ে মিলও কিছু কম নয়। তাই সব তুতো ভাই বোনেরাই বড় হয়েছেন একসঙ্গে। সেই সময়ে বনি কাপুরের ২ সন্তান, অনিল কাপুরের ১ সন্তান আর সঞ্জয় কাপুর তখনও সন্তানের পিতা নন। ছোটবেলা থেকেই অর্জুন, অনশুলা, সোনমের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা।
পরিবারে ক্রমশ সমস্যা দানা বাঁধে। বাবা বনি কাপুর জড়িয়ে পড়েন নায়িকা শ্রীদেবীর সঙ্গে। গোটা দেশে তাঁদের সম্পর্ক তখন আলোচনার বিষয়। বাড়িতে মায়ের কোলে বসেই ২ ভাই-বোনের শক্ত থাকার চেষ্টা। বনি ও শ্রীদেবীর বিয়ের খবর আসার পর, অর্জুন-অনশুলার মা মোনা সিং তাঁদের নিয়ে চলে যান নিজের বাড়ি। সেখানেই নানির কাছে অর্জুন-অনশুলার বেড়ে ওঠা। যদিও কাপুর পরিবারের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত যোগ ছিল। বাবা বনির সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল অটুট। কিন্তু মায়ের কষ্ট পাওয়াটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন ২ ভাই-বোন। তাই মা জীবিত থাকাকালীন শ্রীদেবী , তাঁর ২ কন্যা জাহ্ণবী ও খুশির সঙ্গে তেমন কাছের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে নি।
অর্জুন-অনশুলার মা মোনা সিংয়ের অকালমৃত্যু দুই ভাই-বোনকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। এবার অনশুলা যে কেবল তাঁরই দায়িত্ব, সেটা বারবার বলে এসেছেন অর্জুন। পাশাপাশি অনশুলাও মনে করতেন যে তাঁর দাদা এত মায়ের ন্যাওটা ছিলেন যে, মায়ের চলে যাওয়া তাঁর দাদার জীবনে বড় শূন্যতা তৈরি করবে। তাই আরও বেঁধে বেঁধে থাকা।
সেই থেকে সিনেমা দেখতে গেলেও সাথী অনশুলা।
বিয়ের পার্টিতেও রং মিলিয়ে ভাই-বোনের ক্যামেরার সামনে সহাস্য উপস্থিতি।
শ্রীদেবীর অকালমৃত্যু হঠাৎই কাপুর পরিবারের সব হিসেবনিকেশ উল্টে দেয়। দুবাইয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত বাবার পাশে সবথেকে বড় স্তম্ভ হয়ে দাঁড়ালেন অর্জুন। দুহাতে টেনে নিলেন জাহ্ণবী আর খুশিকে। অনশুলা হঠাৎই প্রায় মায়ের ভূমিকায় ছোট দুই বোনের পাশে এসে দাঁড়ালেন। বাবা বনি কাপুরের মুখে তখন চওড়া হাসি। চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে যেভাবে সংসার বাঁধতে চেয়েছিলেন, এবার যেন তা ধীরে ধীরে সফল হতে চলেছে।
বলিউডের গোপন সূত্র বলে, এই গোটা পরিস্থিতিটাই তৈরি করেছিলেন অনশুলা। অর্জুনকে বুঝিয়ে বাবার পাশে পাঠানো থেকে ছোট দুই বোনের দায়িত্ব নেওয়া, কাপুর বাড়ির বড় ছেলের পরিবারে অনশুলাই তখন মায়ের ছোঁয়া নিয়ে হাজির। সকলের খেয়াল রাখা, জাহ্নবী-খুশির কোনোরকম অসুবিধা যাতে না হয়, এমনকী তাদের মনখারাপেও পাশে অনশুলা দিদি।
সেই অনশুলাই এই বাড়ির জিয়নকাঠি। সেই অনশুলার জন্যেই এখন কাপুর পরিবারের ফাদার্স ডে-র ছবিটা এইরকম হাসিখুশি। সেই অনশুলার নামেই হাতে ট্যাটু করে কৃতজ্ঞতা জানান বড় ভাই।