ত্রিপুরায় বাম বধের ১০ অস্ত্র
মাত্র ৫ বছর আগেও ত্রিপুরায় বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যেত না। সেই বাম রাজ্যেই এবার গেরুয়া ঝড়। ৪০টি আসন পকেটে পুরেছে গেরুয়া শিবির। কোন মন্ত্রে বিজেপির এই অপ্রত্যাশিত উত্থান হল?
শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীর মুখের উপরে ভরসা করে থাকেনি বিজেপি। ত্রিপুরায় জনভিত্তি বাড়াতে কাজে লাগানো হয়েছিল আরএসএসকে। ত্রিপুরার বিভিন্নপ্রান্তে নিজেদের শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছে সঙ্ঘ। ত্রিপুরায় গিয়ে সভা করেছেন সঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। দিন কয়েক আগে অসমের গুয়াহাটিতেও বিশাল জনসভা করেছে আরএসএস। সেখানে এসেছিলেন সরসঙ্ঘচালক। আরএসএসের মোকাবিলা করতে পারেনি বামেরা। হতে পারে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারেনি তারা।
বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ব্যবস্থাপক সুনীল দেওধরকে দেওয়া হয়েছিল ত্রিপুরার দায়িত্ব। আরএসএসের এই নেতা ত্রিপুরায় প্রায় দু'বছর পড়েছিলেন। তৃণমূলস্তর থেকে সংগঠনের উপরে নজরদারি করেছেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে বাম শিবিরের মুখ বলতে মানিক সরকার।
অসমের কংগ্রেস নেতা হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে দলে টেনে মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছিলেন অমিত শাহ। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও রাম মাধবকে। তাঁরাই কৌশল রচনা করেছেন। যোগাযোগ রেখেছেন রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও।
ত্রিপুরার ভূমিপুত্র দিল্লির নেতা বিপ্লব দেবকে দেওয়া হয় রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব। দলকে জেতাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তরুণ বিপ্লব দেব। বর্ষীয়ান মানিক সরকারের বিরুদ্ধে তারুণ্যের স্পর্ধাই ছিল বিজেপির শক্তি।
ত্রিপুরার উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির তেমন উপস্থিতি ছিল না। অথচ ২০টি আসনে নির্ণায়ক এই উপজাতি ভোটই। নির্বাচনী পাটীগণিতে পোক্ত মোদী-শাহ তাই এই উপজাতি এলাকায় সংগঠন তৈরিতে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করে। ভোটের আগে আইপিএফটি-র সঙ্গে জোট বাঁধে বিজেপি। আর তার ফলাফল যত বেলা গড়িয়েছে ততই স্পষ্ট হয়েছে। উপজাতি এলাকায় ঢেলে ভোট পেয়েছে বিজেপি। তাদের জোটসঙ্গী পেয়েছে ৮ শতাংশ ভোট।
ত্রিপুরা নির্বাচনের আগে থেকেই সে রাজ্যে হাজির হয়েছিলেন বিজেপির ভোট ম্যানেজাররা। বলে রাখা ভাল, এই দলে রয়েছেন ম্যানেজমেন্টের ছাত্র থেকে আইটি বিশেষজ্ঞ সকলে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রতি কেন্দ্র ধরে ধরে প্রচারের যাবতীয় কৌশল রচনা করেছে এই 'হাইটেক' দল। এই কৌশলই তৃণমূলস্তরে রূপায়ন করেছেন আরএসএস ও বিজেপির কর্মীরা। শুধুমাত্র কৌশলেই বামেদের হাতে পেন্সিল ধরিয়ে দিয়েছে বিজেপি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
২৫ বছর ধরে বামেরা ত্রিপুরার ক্ষমতায় থাকায় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া তৈরি হয়েছিল। ফলে বিকল্প খুঁজছিলেন ত্রিপুরাবাসী।
প্রায় আড়াই দশক সিপিএম ত্রিপুরা শাসন করলেও উপজাতি এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ। একই অভিযোগ শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষেরও। সেই ক্ষোভই কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন।
৫ বছর আগেও কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই হত সিপিএমের। তবে কেন্দ্রে সিপিএম-কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সুসম্পর্ক ও বাংলায় বিধানসভা ভোটে সিপিএম-কংগ্রেসের জোটের পর রাহুল গান্ধীর দলের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছিল। সিপিএমের বিরোধী হিসেবে প্রবলভাবে উঠে আসে বিজেপি। কংগ্রেসের চেয়ে বিরোধী হিসেবে বিজেপি আরও বেশি আগ্রাসী। ফলে এবার আর প্রত্যাবর্তন করতে পারলেন না মানিক সরকার।
বিরোধী ভোট ভাগাভাগিতে নিজের আখের গোছাতে চেয়েছিল বামেরা। তবে তা হয়নি। বিজেপির সঙ্গে সম্মুখ সমরে পড়তে হয়েছে তাদের। বামেরা পেয়েছে ৪৩.৩ শতাংশ ভোট। ৪২.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। তাদের শরিক দল আইপিএফটি পেয়েছে ৮ শতাংশ ভোট।