বন্ধু বাজপেয়ী কলকাতায় এলেই বসত ফুচকা বধের আসর

SUDESHNA PAUL Fri, 17 Aug 2018-9:54 am,

শ্রাবন্তী সাহা : দক্ষ রাজনীতিক থেকে সর্বজনগ্রাহ্য প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু তাঁর কাছে অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন পরম বন্ধু। এক্কেবারে বাড়ির লোক।

সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে ৬ তলা বাড়ি ঘনশ্যাম বেরিওয়ালদের। ১৯৫৬ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত যতবার অটল বিহারী বাজপেয়ী কলকাতায় এসেছেন, প্রত্যেকবারই ঘনশ্যামবাবুদের বাড়িতে উঠেছেন।

ঘনশ্যামবাবু জানিয়েছেন, কোনও একটি নির্বাচন উপলক্ষে ১৯৫২ সালে দিল্লি যান তিনি। বাজপেয়ী এবং তিনি, দু'জনেই আরএসএস-এর সদস্য ছিলেন। আরএসএস-এর সদস্য হিসেবেই বাজেপেয়ীর সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। পরে ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর হয়। গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। ১৯৫৬ সালে প্রথমবার তাঁদের বাড়িতে আসেন বাজপেয়ী।

৬ তলা বাড়ির ৫ তলায় থাকেন ঘনশ্যামবাবুরা। অটল বিহারী বাজপেয়ী এলে, তিনি থাকতেন ৬ তলায়। সেই ৬ তলায় ঘরের লাগোয়া কোনও বাথরুম ছিল না। কিন্তু একেবারে বাড়ির লোকের মতোই মানিয়ে নিতেন অটল বিহারী বাজপেয়ী।

ঘনশ্যামবাবু জানান, তাঁকে "ছোটো ভাই" বলতেন বাজপেয়ী। কোনও রাজনীতিকের মতো ব্যবহার করতেন না। তাঁদের বাড়িতে এলে একেবারে ঘরোয়া আড্ডায় মেতে উঠতেন।

ফুচকা খেতে ভালোবাসতেন বাজপেয়ী। তিনি কলকাতায় ঘনশ্যামবাবুদের বাড়িতে এলেই বসত পানিপুরি আসর। বেশি লঙ্কা দিয়ে ঝাল ঝাল ফুচকা ছিল তাঁর প্রিয়।

নিরামিষের পাশাপাশি আমিষ খাবারও খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু ঘনশ্যামবাবুদের বাড়িতে আমিষ রান্না হত না। তাই আমিষ খেতে ইচ্ছে হলে চলে যেতেন পার্কস্ট্রিটের রেস্তরাঁয়। আরেক বন্ধু কোনও এক ভট্টাচার্যের বাড়িতে গিয়ে মাছের ঝোল-ভাতও খেতেন। খুব ভালো রান্না জানেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। এমনকি রান্না নিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন পরামর্শও দিতেন।

ঘনশ্যামের বেরিওয়ালের ছোটো বউমা প্রতিভা বেরিওয়াল। প্রতিভা বেরিওয়ালের বিয়ের সময় হঠাত্ই একদিন ঘনশ্যামবাবুর বাড়ির লোকেরা দেখেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে চা করছেন বাজপেয়ী। চা-টা কার জন্য? জিজ্ঞেস করলে অটলজি উত্তর দিয়েছিলেন, "ঘরে নতুন বউমা এসেছে তাঁর জন্য।"

প্রতিভা বেরিওয়াল জানান, বাড়ির পুরুষদের সথেকে তাঁদের সঙ্গেই বেশি গল্প করতে ভালোবাসতেন বাজপেয়ী। সেই আলোচনায় কোনও রাজনীতি থাকত না। থাকত খাবার-দাবার আর সিনেমার গল্প।

তিনি আরও বলেন, ১৯৮১ সালে মু্ক্তি পেয়েছিল 'উমরাও জান'। সেইসময় কলকাতায় এসেছিলেন বাজপেয়ী। উমরাও জানের ভিসিডি বাড়িতে আনা হয়। এক রাতে ৩ বার সিনেমাটি দেখেছিলেন বাজপেয়ী।

সিনেমাটি তাঁর এত পছন্দ হয়ে যায় যে, সেই ভিসিডি নিয়ে দিল্লি চলে যান তিনি। বছরখানেক পর যখন আবার কলকাতায় আসেন, তখন সেই ভিসিডি বাজপেয়ী ফেরত নিয়ে আসেন।

ঘনশ্যামবাবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও অটুট ছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে আর ঘনশ্যামবাবুদের বাড়িতে যেতে পারেননি বাজপেয়ী। কিন্তু বিমানবন্দরে পুরো পরিবারকে ডেকে পাঠাতেন। ঘনশ্যামবাবুর বাড়ির ছোটো-বড় সবার সঙ্গে কথা বলতেন। তখন সেখানে অন্য কারও ঢোকার অনুমতি থাকত না।

এমনকি মুম্বইয়ের ব্রিজ ক্যান্ডি হাসপাতালে ঘনশ্যামবাবুর অস্ত্রোপচারের সময় হাসপাতালে তাঁকে দেখতেও গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী। সবসময় বন্ধুর খোঁজখবর রাখতেন।

ঘনশ্যামবাবু জানান, তাঁদের বাড়িতে লালকৃষ্ণ আদবানি থেকে মোদী সবাই এসেছেন। কিন্তু অটলজির মতো ঘরের লোক কেউ হননি। বন্ধুত্বটা বাজপেয়ীজির সঙ্গেই গড়ে উঠেছে।

বন্ধু বাজপেয়ীর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ঘনশ্যামবাবু বলেছেন, কট্টর হিন্দু ছিলেন বাজপেয়ী। কিন্তু সব ধর্মের সঙ্গে সদ্ভাব রাখায় বিশ্বাস করতেন। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলার পক্ষপাতী ছিলেন অটলজি।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link