বাগ্মী বাজপেয়ীর কিছু আলোচিত বক্তৃতা...
ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী। একধারে দক্ষ রাজনীতিক, বাকপটু, তেমনই অগাধ জ্ঞানের আধার ছিলেন দেশের এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। দলে তাঁর অবস্থান ‘বটবৃক্ষের’ মতো আর সংবিধানিক পরিকাঠামোয় নিজেই ছিলেন একটি ‘প্রতিষ্ঠান’। বৃহস্পতিবার, বিকেল ৫.০৫ নাগাদ দিল্লির এইমস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯৩ বছর বয়সী এই প্রবীণ রাজনীতিক।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সরকার চালিয়েছেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। ১৯৯৬ সালে ১৩ দিনের সরকার এবং ১৯৯৮-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ১১ মাসের সরকারের প্রধানমন্ত্রীত্ব করছেন তিনি। তাঁর প্রায় ৬ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাজপেয়ী। এরমধ্যে রাজস্থানের পোখরানে পরমাণু পরীক্ষা উল্লেখযোগ্য। সে দিন সফল পরমাণু পরীক্ষা হওয়ার পর কী বিবৃতি দিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী?
১৯৯৮ সালে ১১ থেকে ১৩ মে ৩টি পরমাণু পরীক্ষা করা হয়। এ দিন বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন বাজপেয়ী। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “আজ বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে পোখরানে ৩টি পরমাণু পরীক্ষা করা হয়। ফিসন, লো-ইয়েল্ড এবং থার্মোনিউক্লিয়ার এই তিন ধরনের পরমাণু পরীক্ষা করা হয়। এর ব্যাপ্তি চিহ্নিত করা গিয়েছে তবে, বাতাসে বিকিরণ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ১৯৭৪ সালের মে-মাসের মতোই এটি পরীক্ষমূলক বিস্ফোরণ। সফল পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
১৯৯৬ সালে মাত্র ১৩ দিনের সরকার চালিয়েছেন অটল বিহারি বাজপেয়ী। সে সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিজেপিকে সরকার গড়ার প্রস্তাব রাখেন তত্কালীন রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণও করেন বাজপেয়ী। কিন্তু আস্থা ভোটে সমর্থন জোগাড় করতে না পারায় ১৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন তিনি।
সে দিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে বাজপেয়ী বিবৃতি দিয়েছিলেন, “আপনারা দেশ চালাতে চান, ভাল। তার জন্য আপনাদেরকে শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু এর পর দেশের সেবায় সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত হব আমরা। আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, দেশের স্বার্থে যে খালি হাত নিয়ে আমরা লড়াই শুরু করেছিলাম, তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। মাননীয় অধ্যক্ষ, রাষ্ট্রপতির কাছে এখনই আমার পদত্যাগ পত্র জমা দিতে যাচ্ছি। ধন্যবাদ।”
২০০২ সালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে অটল বিহারি বাজপেয়ীর বার্তা: “আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ এই স্বাধীনতা দিবসে একটাই সন্দেশ হওয়া উচিত, দেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে জোট বেঁধে কাজ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য অসীম আকাশের মতো উঁচু হতে পারে কিন্তু জয়ের জন্য হাতে হাত রেখে এক সঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকার করতে হবে সবাইকে। এই শক্তি অর্জন করার জন্য আসুন, সবাই এক সঙ্গে ‘জয় হিন্দ’ বলি। জয় হিন্দ, জয় হিন্দ, জয় হিন্দ- এই স্লোগানে গলা মেলাই সবাই।”
২০০০ সালে মার্কিন কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে যে বক্তৃতা রেখেছিলেন বাজপেয়ী: অকপটে আমাদের (ভারত-মার্কিন) আলোচনার পর, গণতন্ত্র রক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন, শক্তি, পরিবেশ, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, বিশ্ব শান্তি বিষয়ে দুই দেশের জন্য ভবিষ্যতে আলোচনার দরজা খোলা থাকবে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাবে ভারত। এক শতাব্দীর অবসানের নতুন সম্পর্কের সূচনা হল। অতীতের অপ্রীতিকর সম্পর্ক, ক্ষোভ ভুলে নতুন পথে এগোতে হবে।