এই ২৭ ডিসেম্বরেই বদলে গেল মানবজাতির ইতিহাস! কেন জানেন?

Soumitra Sen Mon, 27 Dec 2021-1:57 pm,

একটি বই প্রকাশ মাত্রেই বিশ্বকে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়েছিল। পুরনো ধ্যানধারণা সব লহমায় বদলে দিয়েছিল। ধাক্কা খেয়েছিল চার্চ-চর্চিত ও প্রচারিত সৃষ্টিতত্ত্ব! বিশ্ব জুড়ে জ্ঞানবুভুক্ষু মানুষ চেটেপুটে পড়তে লাগলেন পৃথিবীর জীবজগতের এই নতুন নিয়ম। জীববিজ্ঞানেই শুধু নয়, সামগ্রিক ভাবে বিজ্ঞানের পৃথিবীতেই একটা 'প্যারাডাইম শিফট' ঘটে গেল। 

কে ঘটাল? একটি সমুদ্রযাত্রা। যেটি শুরু হয়েছিল ২৭ ডিসেম্বরে। কে ছিলেন সেই সমুদ্রযাত্রায়? চার্লস ডারউইন। তিনি তাঁর ওই ইতিহাস বদলে দেওয়া অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন। ১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বরে লন্ডন থেকে বইটি বেরিয়েছিল। নাম-- 'অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিসেস'। বইটির পুরো নাম অবশ্য বেশ বড়-- 'অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিসেস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন, অর দ্য প্রিজারভেশন অফ ফেভারড রেসেস ইন দ্য স্ট্রাগল ফর লাইফ'! মানে করলে দাঁড়ায়, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তি অথবা জীবনসংগ্রামে আনুকূল্যপ্রাপ্ত গোত্রের সংরক্ষণ বিষয়ে। বছরতেরো পরে অবশ্য বইটির নাম ছোট করে দেওয়া হয়-- 'দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস'।

বিগল নামের জাহাজটির ক্যাপ্টেনকেও এক্ষেত্রে ধন্যবাদ দিতে হয়। রবার্ট ফিটজয় নামের সেই ক্যাপ্টেনের সাদর আমন্ত্রণেই তরুণ জীববিদ্যাবিদ চার্লস ডারউইন চেপে বসতে পেরেছিলেন সেই জাহাজে। এবং পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন গ্যালাপোগোস দ্বীপে। শুরু করেছিলেন তাঁর অনন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ডারউইনের বাবা চাননি, ছেলে এই সমুদ্রভ্রমণে যাক। বাবার অমতেই ডারউইন নেমে পড়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করতে। 

সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যাই ওই বই। সেই বইয়ের ভূমিকায় ডারউইন আর্মাডিলো, রিয়া নামের এক উড্ডীন-অক্ষম পাখি, কয়েকটি বিলুপ্ত প্রজাতির ঘোড়া এবং অধুনালুপ্ত স্লথের জীবাশ্মের কথা উল্লেখ করেছিলেন। জানা যায়, গ্যালাপোগোস দ্বীপের প্রাণী ও উদ্ভিদদের দেখেই তিনি বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে প্রথম চিন্তাভাবনা শুরু করেন। সেই চিন্তাভাবনাই পরে ক্রমে মহীরুহের আকার নেয়। ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব তো শুধু বিজ্ঞান নয়, দার্শনিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বিপুল সাড়া ফেলেছিল। 

হঠাৎ ডারউইন কেন ভাবতে গেলেন এই সব? তাঁর প্রেরণা ছিলেন লামার্ক। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই জন্মগ্রহণ করে প্রাকৃতিক নিয়মেই জন্মদাতার থেকে একটু আলাদা হয়ে যায় জীব। এবং এই ভাবে চলতে-চলতেই দীর্ঘ সময় পরে বড় ধরনের বদল, বা 'বিবর্তন' ঘটে। এই ভাবনাই ডারউইনকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল। 

 

ডারউইন অবশ্য গুরুর চেয়ে আরও কয়েকধাপ এগিয়ে গেলেন। তিনি দেখালেন, বিবর্তন শুধু পরিবর্তন নয়; এ হল পরিবর্তনের এমন এক ধারা যা অতীতকে সঙ্গে নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে ভেসে চলে। এই পরিবর্তনের ভেসে চলার গতিপথ 'অতি সরল' থেকে 'সরল', 'সরল' থেকে 'জটিল' আবার 'জটিল' থেকে 'জটিলতর' কিংবা 'অনুন্নত' থেকে 'উন্নত', 'উন্নত' থেকে 'উন্নততরে'র দিকে। এই জার্নিতে জীবকে পরিবেশের সঙ্গে লড়তে হয়, খাপ খাওয়াতে হয়। খাপ খাওয়ানোর এইসব কাজ করতে-করতে জীব নানা বৈচিত্র্য অর্জন করে। এবং যোগ্যতমেরাই বেঁচে থাকে। এর সঙ্গেই অন্বিত 'প্রাকৃতিক নির্বাচন'। এই পথেই নতুন এবং উন্নততর প্রজাতির সৃষ্টি হয়। আরশোলা একই অবয়বে সুদীর্ঘকাল টিকে থাকল পৃথিবীতে। আরশোলা খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে বলেই এটা পারল। আবার ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। সে খাপ খাওয়াতে পারল না। অর্থাৎ, এখানে প্রাকৃতিক নির্বাচনই আসল খেলাটা খেলছে বলে মত ডারউইনের।

ইতিহাস তৈরি করা জার্নি শেষ করে প্রায় ৫ বছর পরে ১৮৩৬ সালের ২ অক্টোবর ফিরেছিল বিগল, ফিরেছিলেন জ্ঞানঋদ্ধ ডারউইন। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link