Steve Banerjee: মার্কিন পুরুষদের প্রথম `নগ্ন` নাচিয়েছিলেন এই বাঙালি-ই!
নিজস্ব প্রতিবেদন : হরেক মায়াবী আলোর রোশনাই। সঙ্গে বাজছে মিউজিক। আর তার তালে তালে স্ট্রিপটিজ নাচছেন এক মার্কিন পুরুষ। শুনতে অবাক লাগছে? মার্কিন পুরুষদের এভাবে 'নগ্ন' করে নাচতে বাধ্য করেছিল এক বাঙালি-ই! নাম স্টিভ ব্যানার্জি। তবে তাকে নায়ক না বলে 'খলনায়ক' বলা-ই ভালো।
১৯৭৯ সালে স্টিভ ব্যানার্জি তৈরি করে প্রথম ও বিখ্যাত পুরুষ স্ট্রিপ ড্যান্সারদের ট্রুপ। ভারত থেকে মার্কিন মুলুকে অভিবাসী। আর সে-ই কিনা বদলে দিল লোকসানে চলা একটা বারের ভাগ্য! লস অ্যাঞ্জেলসের লোকসানে চলা একটি বারে প্রথম পুরুষ স্ট্রিপটিজের শুরু করে স্টিভ ব্যানার্জি। রাতারাতি ব্যবসায়িক সাফল্য।
যদিও পরবর্তীতে তার দাম চুকাতে হয়েছিল স্টিভ ব্যানার্জিকে। পুরুষ স্ট্রিপটিজ বারের সাফল্য পেতে মরিয়া স্টিভ লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ থেকে খুন, কোনওকিছুই বাকি রাখেনি। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, স্টিভ যেমন লোক ভাড়া করতে থাকে তার প্রতিযোগীদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য, তেমনই তার প্রতিযোগীদের খুন করতে হিটম্যানদেরও নিযুক্ত করে।
১৯৪৬ কি ১৯৪৭, ভারতের মুম্বইতে জন্ম হয় সোমেন ব্যানার্জির। পরবর্তীতে মার্কিন মুলুকে যে-ই কিনা হয়ে ওঠে স্টিভ ব্যানার্জি। ১৯৬০ সালে আমেরিকায় চলে যায় স্টিভ। সেখানে পৌঁছে ম্যাটেলে কাজ করার পাশাপাশি গ্যাস স্টেশনেও কাজ করে সোমেন স্টিভ ব্যানার্জি। তারপরই তার নজরে আসে লোকসানে চলা ক্লাবটি। আর সেই ক্লাবের হাত ধরেই ১৯৭০ সাল থেকে স্টিভ ব্যানার্জির ভাগ্য বদলের শুরু। রাউন্ড রবিন নামে লস অ্যাঞ্জেলসের ওই ক্লাবটি কিনে নেয় সে।
পল স্নাইডার নামে এক প্রোমোটারের পরামর্শে তারপর সেখানেই মার্কিনী মহিলাদের একাংশের জন্য শুরু করে শুধুমাত্র পুরুষদের স্ট্রিপটিজ। ক্লাবের নাম বদলে রাখা হয় চিপেনডেলস। রাতারাতি লোকের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে চিপেনডেলসের নাম। সেখানে তখন স্বল্পাবৃত পুরুষ স্ট্রিপ ড্যান্সাররা সুরা ঢেলে দিচ্ছেন মহিলা দর্শকদের গ্লাসে। ধরিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের সিগারেট। তখনকার দিনে ১৯৮০ সালে প্রতি মাসে ১৫ হাজার খদ্দের ভিড় জমাতেন স্টিভের রবিন রাউন্ডে।
কিন্তু সাফল্যের শিখরেই প্রথম তাল কাটে ১৯৭৯-তে। বারে 'অশালীন' কাজের জন্য ৩ জন ড্যান্সার ও ৩ জন খদ্দেরকে গ্রেফতার করা হয় বার থেকে। এরপর মুডিজ ডিস্কো নামে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী নাইটক্লাব পুড়িয়ে দিতে লোক ভাড়া করে স্টিভ। ৫ বছর বাদে রেড ওনিয়ন নামে একটি রেস্তরাঁ ও বারও পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সে। এখানেই শেষ নয়। এরপরই ঘটে হাড়হিম করা চিপেনডেলস খুন।
তার বারের ড্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দিতে নিক ডে নোইয়া নামে একজন কোরিওগ্রাফার ও প্রযোজকের সঙ্গে পার্টনারশিপ করেন স্টিভ। পার্টনারশিপের চুক্তি অনুযায়ী চিপেনডেলসের মালিকানা সত্ত্ব ভাগ করে নেন নিকের সঙ্গে। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই নিকের জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে স্টিভ। নিককে খুনের ছক কষে। রে কোলন নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়া করে। কোলন গিলবার্তো রিভেরা লোপেজ নামে এক শুটারকে ভাড়া করে। যার কোড নেম ছিল 'স্ট্রবেরি'।
নিউ ইয়র্কের ১৫ তলা অফিসে গুলি করে নিক ডে নোইয়াকে খুন করে 'স্ট্রবেরি'। এরপর রে কোলন এই 'স্ট্রবেরি'কে স্টিভের প্রতিদ্বন্দ্বী আরও অনেককে খুনের বরাত দেয়। 'স্ট্রবেরি' সায়ানাইড দিয়ে খুনও করে বেশ কয়েকজন প্রতিযোগী বারের ড্যান্সারকে। পরে এই 'স্ট্রবেরি'-ই FBI-এর এক এজেন্টকে স্টিভের কুকর্ম সম্পর্কে খবর দিয়ে দেয়। তারপর ১৯৯৩-র সেপ্টেম্বরে নিক ডে নোইয়াকে খুনের অভিযোগে স্টিভ ব্যানার্জিকে গ্রেফতার করে পুলিস। এরপর জেলেই আত্মঘাতী হয় স্টিভ। তখন তার ৪০ বছর বয়স।