সমাজতাত্ত্বিক, গবেষক, চিন্তক-- এক অনন্য বাঙালি `কালপেঁচা`
মার্কসীয় সমাজতাত্ত্বিক। সাংবাদিক। চিন্তক, গবেষক। প্রাবন্ধিক। রসসাহিত্যিকও। 'কালপেঁচা' ছিল তাঁর ছদ্মনাম।
তিনি শ্রী বিনয় ঘোষ। তাঁর জন্ম নিয়ে কিঞ্চিত্ বিতর্ক আছে। একদল বলেন, যশোরের গোড়াপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। আর একদল বলেন, কলকাতার মনোহরপুকুরে। যাই হোক, মোট কথা, ১৯১৭ সালের ১৪ জুনই তাঁর জন্মদিবস।
বিনয় ঘোষ বিশ শতকের এক বিশিষ্ট বাঙালি। দৈনন্দিন জীবনে আদর্শবাদী, আপসহীন স্বাধীনচেতা এক মানুষ। বিনয় একাধারে সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্য সমালোচক, লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ, চিন্তক ও গবেষক। এবং স্বয়ং একজন সাহিত্যিকও। তবে ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কিত আলোচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী।
চিন্তার দিক থেকে সদা প্রগতিশীল এই মানুষটি সাংবাদিক হিসেবে Froward, সাপ্তাহিক অরণি, দৈনিক বসুমতী, যুগান্তর প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করেছেন। তবে নিজের স্বাধীন লেখালিখির ফলেই তিনি বেশি করে পরিচিত। বিনয় ঘোষের রচনায় উনিশ শতকের বাংলা ও বাংলার নবজাগরণের ব্যাখ্যাই বিশেষ করে ঠাঁই পেয়েছে। কলকাতাকে ইতিহাসকেও তিনি নতুন করে দেখেছেন এবং দেখিয়েছেন। বাংলার লোকশিল্পের সমাজতত্ত্বও তার রচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
বিনয়কে এক অন্যতম বিদ্যাসাগর বিশেষজ্ঞ বললেও ভুল বলা হয় না। ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালার প্রথম বক্তা ছিলেন তিনিই। পরবর্তীকালে এই চিন্তাই তাঁর বিখ্যাত বই 'বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ'-এর পশ্চাতে কাজ করে। এই বই বিদ্যাসাগর চর্চার ক্ষেত্রে এক মাইলস্টোন।
১৯৫৮-১৯৬০ পর্যন্ত রকফেলার রিসার্চ স্কলার হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গবেষণা করেন বিনয়। 'পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি' (১৯৫৭) গ্রন্থের জন্য ১৯৫৯-এ 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।
এ ছাড়াও আরও বইটির জন্য তিনি মননপ্রেমী বাঙালির চিত্তে সদা বিরাজমান থাকবেন, সেটি হল 'মেট্রোপলিটন মন, মধ্যবিত্ত ও বিদ্রোহ'। এই বইটিও বাঙালি সমাজভাবনার এক আকর। কলকাতায় ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই ( মতান্তরে ২৫ জুলাই) প্রয়াত হন বিনয় ঘোষ।