শিল্পোদ্যোগী, ভাষাবিদ, গণিত-রচয়িতা এবং গদ্যকার-- নানা বাঙালির দ্যুতিতে উজ্জ্বল দিনটি

Soumitra Sen Sat, 10 Jul 2021-7:32 pm,

মন্মথনাথে ঘোষের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায়। ১৮৮২ সালের ১০ জুলাই। শিল্পোদ্যোক্তা মন্মথনাথ ঘোষ যশোর জেলার মথুরাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল তাঁর উপরে। স্বদেশের শিল্পোন্নতির উদ্দেশ্যে কলেজে ছেড়ে দিয়ে যশোরের নলডাঙার রাজা প্রমথভূষণ দেবরায়ের আনুকূল্যে ১৯০৬ সালে জাপানে গিয়ে সেলুলয়েডের কাজ শেখেন।

দু’বছর পর দেশে ফিরে যশোরে চিরুণি, বোতাম, মাদুরের কারখানা করেন। যশোরে চিরুণি কারখানা প্রতিষ্ঠায় প্রথম উদ্যোগী ছিলেন রাজা প্রমথভূষণ। সহযোগী ছিলেন নড়াইলের জমিদার রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার ও ভবেন্দ্রচন্দ্র রায়। মাত্র পঁচাত্তর টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে মন্মথনাথ অক্লান্ত পরিশ্রম করে কারখানাটি গড়ে তোলেন। যন্ত্রপাতি বসানো থেকে শুরু করে কারিগরদের শিক্ষাদান সবই নিজের হাতে করতেন। বাংলার যুবকদের শিক্ষার জন্য তিনি 'ক্যালকাটা টেকনলোজিক্যাল কলেজ' এবং 'চুঁচুড়া কৃষি বিদ্যালয়' স্থাপন করেছিলেন। তাঁর জীবনের অন্য উল্লেখ্য অবদান হল যশোরের ঝিনাইদহ মৃতপ্রায় রেললাইনটি সাহেব কোম্পানির হাত থেকে উদ্ধার করা। তিনি সাহিত্যচর্চাও করতেন। 'বিদ্যাবিনোদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ-- 'সুপ্ত জাপান', 'নব্য জাপান', 'জাপান প্রবাস' প্রভৃতি।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহের জন্ম আজ, ১০ জুলাই (১৮৮৫ সাল) একজন স্মরণীয় বাঙালি, বহুভাষাবিদ, বিশিষ্ট শিক্ষক ও দার্শনিক। তিনি অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এন্ট্রান্স পাশের সময় থেকেই মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিভিন্ন ভাষার প্রতি উৎসাহী ও আগ্রহী হয়ে উঠেন। একাধিক ভাষা শিক্ষাও শুরু করেন। শহীদুল্লাহ সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এম.এ পাশ করার পরই তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন। উর্দু অভিধান প্রকল্পেরও সম্পাদক ছিলেন। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বইও লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য--'ভাষা ও সাহিত্য' 'বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত', 'বাংলা ভাষার ব্যাকরণ', 'ব্যাকরণ পরিচয়' ইত্যাদি। বহু ভাষাবিদ, পণ্ডিত ও অন্যতম সেরা ভাষাবিজ্ঞানী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একজন খাঁটি বাঙালিও ছিলেন। জাতিসত্তা সম্পর্কে তাঁর স্মরণীয় উক্তি-- 'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালী।'

আজ আর এক বিশিষ্ট বাঙালির জন্মদিন। শরত্‍চন্দ্র তাঁকে গণিত-শিল্পী নামে ডাকতেন। এই অঙ্কের শিল্পী হলেন কেশবচন্দ্র নাগ। হুগলিতে জন্ম। চৌবাচ্চায় জল ঢোকা আর বেরিয়ে যাওয়ার ধাঁধায় ধাঁধেনি এমন ছাত্র এই বাংলায় পাওয়া কঠিন। এই অঙ্কের জন্মদাতা মানুষটি ১০ জুলাই ১৮৯৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।  

কেশব নাগের নাকি বই লেখার কোনও ভাবনাই ছিল না। শোনা যায়, কেশব নাগের সহকর্মী ছিলেন কবি কালিদাস রায়। কবির বাড়িতে বসত আড্ডা। কেশবও আসতেন। সেখানে 'ওই আড্ডায় কথা প্রসঙ্গে শরত্‍চন্দ্রই নাকি তাঁকে অঙ্কের বই লেখার কথা বলেন। সেই শুরু। তারপর তো ইতিহাস তৈরি হল।

 

আজ জন্ম আর এক বিশিষ্ট বাঙালি। নানা তাঁর পরিচয়। ১৯৩১ সালের ১০ জুলাই জন্ম। ছক ভাঙা ক্রীড়া সাংবাদিক। তিনি বাংলায় খেলার সাংবাদিকতার নতুন ধরন নিয়ে আসেন। কিন্তু  তার চেয়েও তাঁর বড় পরিচয় হল--তিনি একজন উচ্চমানের গদ্যলেখক। তিনি মতি নন্দী। তাঁর উপন্যাসও বাংলা উপন্যাসের গড়নে নতুনত্ব হাজির করে। 'সাদা খাম' তাঁর অনন্য রচনা। এ ছাড়াও 'পুবের জানলা', 'বিজলীবালার মুক্তি', 'বাওবাব', 'বারান্দা' তাঁর অপূর্ব সৃষ্টি। তাঁর খেলাকেন্দ্রিক উপন্যাসগুলি তো বহুচর্তিত। 'কোনি', 'স্টপার', 'স্ট্রাইকার'। 

 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link