Bismillah Khan: এই ভরা ভাদরেই থেমে গিয়েছিল `বিসমিল্লার পাগলা সানাই`
সানাইয়ের সুরে আনন্দ-উচ্ছলতার ভাগ যতই থাক, এর প্রধানতম আবেশ যেন এর কারুণ্যে। সানাইয়ের সুরে কোথা থেকে মনে একরাশ বেদনা জেগে ওঠে। আর এই যন্ত্রটিকে একেবারে অন্তরের সমস্ত বেদনা নিংড়ে দিয়ে যিনি বাজাতেন তিনি এক এবং অদ্বিতীয় বিসমিল্লা খাঁ।
আজ, ২১ অগস্ট তাঁর মৃত্যুদিন। সানাইয়ের সুরের কারুণ্যের সঙ্গে সানাই-সম্রাটের মৃত্যুদিনের শূন্যতা ও বেদনাময়তা কোথায় যেন এক সঙ্গে বাঁধা পড়ে যায়।
বিসমিল্লাকে অবশ্য শুধুই সানাইয়ের এক অনন্যসাধারণ শিল্পী বললে কম বলা হয়। আসলে সানাই যন্ত্রটির নতুন করে জন্মই হয়েছে তাঁর হাতে। তাঁর আগে সানাই ছিল এক সাধারণ যন্ত্র। এতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাজিয়ে এটিকে 'জাতে তোলে'ন বিসমিল্লাই। শুধু জাতে তোলাই নয়, সামগ্রিক ভাবে সানাই-বাদনকে এমন এক উত্তুঙ্গ উচ্চতায় তুলে দেন যে, আজও সেই হিমালয়শিখর অধরাই থেকেছে অন্যদের।
বাবা পয়গম্বর খান ও মা মিঠানের দ্বিতীয় সন্তান বিসমিল্লা খান। শোনা যায় তাঁর ঠাকুরদা জন্মের পর নবজাতককে দেখে 'বিসমিল্লাহ' বলায় তাঁর নাম হয়ে যায় 'বিসমিল্লাহ খান'ই। বিসমিল্লার পূর্বপুরুষেরা বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজ-সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। বিসমিল্লার সঙ্গীতগুরু ছিলেন আলি বকস্ বিলায়াতু। তিনি ছিলেন বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাইবাদক।
১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে একে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন বলে মনে করা হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি লালকেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিসমিল্লা রাগ কাফি বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সারা ভারতকে। এই দুটি ঘটনা বিসমিল্লার জীবনে ও এবং সানাইযন্ত্রের জীবনেও মাইলফলক।
সারা পৃথিবী তাঁর সানাইয়ের সুরে মুগ্ধ। আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত, চিন, জাপান-সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সব শহরেই গুঞ্জন ছড়িয়েছে বিসমিল্লার সানাই-সঙ্গীত।
অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন বিসমিল্লা। সবসময়ই বাস করতেন বারাণসীর পুরোনো পৃথিবীতে। অত্যন্ত অন্তর্মুখী নম্র এই সঙ্গীতস্রষ্টা বিশ্বাস করতেন, সঙ্গীত দিয়ে ঈশ্বরকে ছোঁয়া যায়।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনিই তৃতীয় যিনি ভারতরত্ন পেয়েছেন। এবং তিনিই সেই অল্পসংখ্যক গুণীদের একজন যিনি ভারতের চারটি সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানেই সম্মানিত-- পদ্মশ্রী (১৯৬১), পদ্মভূষণ (১৯৬৮), পদ্মবিভূষণ (১৯৮০), ভারতরত্ন (২০০১)। এছাড়া ১৯৫৬ সালে পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক একাডেমি। পেয়েছেন তানসেন পুরস্কার। সঙ্গীত নাটক একাডেমির ফেলোও হয়েছেন ১৯৯৪ সালে।
সানাইয়ের এই কিংবদন্তি ২০০৬ সালে বারাণসীর হেরিটেজ হাসপাতালে প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে ভারত সরকার একদিনব্যাপী জাতীয় শোক পালন করেছিল।