ইজরায়েলে চলছে যুদ্ধ, আর তার জেরে বেগুনচাষ বন্ধ হুগলিতে! কেন জানেন?
হুগলি চুঁচুড়ার কৃষি খামারে 'সব্জি উৎকর্ষ কেন্দ্রে'র সামনে চলছে ইজরায়েলি প্রযুক্তিতে চাষ। সব্জি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইন্দো-ইজরায়েল এগ্রিকালচার প্রজেক্টের অন্তর্গত এই প্রকল্প। এতে চাষ কী রকম ফলপ্রসূ হয়, তা নিয়ে চলছে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
ঝড়-বৃষ্টি ও প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে হুগলিতে 'পলি হাউস' তৈরি করে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। এতে ইজরায়েলের প্রযুক্তিকেই মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে। ইজরায়েলের কৃষিপ্রযুক্তিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের একাধিকবার পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে শুরু হয়েছে চাষ।
এই প্রযুক্তিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম উৎপাদিত হচ্ছে। এর পর ব্রকোলি, চেরি টমেটো ইত্যাদি ফসল এবং এগুলির চারাও উৎপাদিত হতে চলেছে।
হুগলি জেলা সহ-উদ্যানপালন অধিকর্তা সৌমজিৎ মিশ্র জানান, কম জল ও কম সার ব্যবহার করে উন্নত মানের সব্জি তৈরি করাই হল এই প্রযুক্তির মূল কথা। খোলা জায়গায় যতটা দূরত্বে গাছ বসাতে হয়, এই প্রযুক্তিতে সেই তুলনায় অনেক কম দূরত্বে গাছ বসানো যায়। মানে, কম জায়গায় অনেক গাছ লাগানো যায়।
এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ট্রেলিজিং পদ্ধতি। এ হল গাছকে উপর থেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা। এজন্য গাছ পাশে না ছড়িয়ে লম্বায় বাড়ে। ফলে একই পরিমাণ জমিতে ৩০ শতাংশ বেশি গাছ লাগানো যায়। ফসলও বেশি উৎপাদন হয়।
গত ছ'সাত মাসে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন চাষিরা। দেখে গিয়েছেন, কী ভাবে এই প্রযুক্তিতে চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে চাষ ঝুঁকিহীন এবং লাভজনক। তাই চাষিরা উপকৃত হবেন। তবে পলি হাউস তৈরি খরচসাপেক্ষ। তাই গ্রুপ তৈরি করে কাজটা করতে বলা হয়েছে চাষিদের। এতে একজনের উপর চাপ পড়ে না। একটি পলি হাউস বারো-চোদ্দো বছর থাকে। তাই চাষ করে খরচ উঠে যায়। এতে এককালীন সরকারি আর্থিক সহায়তাও পাওয়া যায়।
এই প্রযুক্তিতে চাষ করলে প্রতিকূল আবহাওয়া বা ঝড় বা অতিবৃষ্টির হাত থেকে বাঁচবে ফসল। অসময়ে চাষ করেও বেশি মুনাফা পেতে পারেন চাষি। এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই এবার বীজহীন বেগুন চাষ করার কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য সম্ভাব্য প্রস্তুতিও চলছে। পরাগ মিলন ছাড়াই হবে এই ফসল।
সৌমজিৎ মিশ্র বলেন, ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করে যে ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল, তাতে সব কিছুই বলে দেওয়া আছে। তবে যুদ্ধ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইজরায়েলের প্রতিনিধিদলের আরও একবার পরিদর্শন আশা করা যাচ্ছে।