পূজারির সঙ্গে রাজকন্যার প্রেম! বিদ্যাসুন্দরের কালীপুজোয় ভালোবাসার কাছে হার মানে নরবলি
অরূপ লাহা: বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালীপুজোর পেছনে জড়িয়ে রয়েছে এক প্রেমের গল্প ৷ তেজচাঁদ রাজার কন্যা বিদ্যা ও মন্দিরের পুজারি সুন্দরের ভালবাসার জোরে বন্ধ হয়েছিল মন্দিরের নরবলি প্রথা ৷ বর্ধমানের মহারাজা ছিলেন তেজচাঁদের আমল। বর্ধমানের বেশিরভাগ এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভর্তি। বিশেষ করে দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ এলাকায় ছিল আরও গভীর জঙ্গল। সেখানেই কালীমন্দিরে পুজো করতেন রাজা । ওই কালী মন্দিরে কেউ সচরাচর যেতেন না ।
কথিত আছে, যারা অন্যায় অত্যাচার করত, তাদের এই মন্দিরে দেবীর সামনে হাঁড়িকাঠে নরবলি দেওয়া হত । তাই সেই সময় এই কালী দক্ষিণ শ্মশানকালী নামেও পরিচিত ছিল । ফলে দিনের বেলাতেও ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করার কেউ খুব একটা সাহস করত না । রাজার এক কন্যা ছিল, নাম বিদ্যা ৷ আর রাজবাড়ির পুজারি ছিলেন সুন্দর নামে এক যুবক । সুন্দরের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না । এখন রাজবাড়িতে ফুল দিতে আসতেন মালিনী মাসি । তিনি প্রতি ঠাকুরবাড়িতেও ফুলের মালা দিতেন ।
যথারীতি একদিন মালিনী মাসি মন্দিরে ফুলের মালা নিয়ে এসেছেন । সেই মালা দেখে পুজারি সুন্দর খুব আকৃষ্ট হন । তিনি মালিনী মাসিকে জিজ্ঞাসা করেন, এত সুন্দর ফুলের মালা কে গেঁথেছে ? যে মালা গেঁথেছে তাকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকেন সুন্দর । মালিনী মাসি তাঁকে বলেন, রাজকুমারী বিদ্যা মালা গেঁথেছে । কিন্তু তাঁকে দেখা সম্ভব নয় । পরবর্তীকালে বিদ্যার সঙ্গে সুন্দরের পরিচয় হয় । তাঁদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এমনকি তাঁরা নাকি মন্দিরের পাশ থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত একটা সুড়ঙ্গও খুঁড়ে ফেলেন । সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে বিদ্যা ও সুন্দর একে-অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যেতেন । একদিন চরের মাধ্যমে তেজচাঁদ বিদ্যা ও সুন্দরের এই প্রণয়ের ব্যাপারে জেনে ফেলেন । খবরটা কানে যেতেই রাজা প্রচণ্ড রেগে যান । তিনি বিদ্যা এবং সুন্দরকে কালীর সামনে বলি দেওয়ার আদেশ দেন ৷ রাজার হুকুম মতো তাঁদেরকে বলি দিতে নিয়ে যাওয়া হয় কালী মন্দিরে।
হাঁড়িকাঠে বিদ্যা ও সুন্দর, দুজনকে ঢোকানোর পর খড়্গ হাতে বলি দেওয়ার সময় কাপালিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বিদ্যা আর সুন্দর, প্রেমিক -প্রেমিকা যুগল মন্দির থেকে উধাও হয়ে যান। তারপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় নরবলি। রাজ্যপাট না থাকলেও এখনও প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই কালীমন্দিরে পুজো হয় বলে জানান সেবাইত আভা বটব্যাল। তবে জাঁকজমক এখন আর আগের মত নেই। দেবী এখানে পাষাণ মূর্তি। নিত্যদিন পুজো হয়। সন্ধ্যা আরতি হয়।