১৩ তে ৪১ এর নৃত্য গুরুর সঙ্গে বিয়ে সুখের হয়নি, একাই সন্তানদের বড় করেছিলেন সরোজ খান

Fri, 03 Jul 2020-4:59 pm,

দেশভাগের পর সরোজ খানের পরিবার পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিল মুম্বইতে। এরপর ১৯৪৮ এর ২২ নভেম্বর জন্ম হয়েছিল নির্মলা নাগপালের। এটাই হল সরোজ খানের আসল নাম। যদিও বলিউডের 'মাস্টারজি'কে সরোজ খান হিসাবেই সকলে চেনেন।

১৯৫০ সালে মাত্র ৩ বছর বয়সেই ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে তাঁর নাম।

তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৩, ৪১ বছর বয়সী গুরুজি সোহনলাল তাঁকে বিয়ে করেন। 

যদিও তখন তাঁকে জানানো হয়নি, সোহনলাল আগে থেকেই বিবাহিত ও ৪ সন্তানের বাবা। সে বিয়ে সুখের হয়নি। ১৯৬৫ সালে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ বয়ে যায়। 

এক সাক্ষাৎকারে সরোজ খান নিজেই জানিয়েছিলেন, '' আমি তখন স্কুলে পড়তেন,  সোহনলাল আমার গলায় কালো সুতো বেঁধে দিয়েছিলেন, আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল''।

সরোজ খান বলেছিলেন, ''গুরুজী যদি অন্য কারোর সঙ্গে নাচ করতেন, আমার ভালো লাগতো না, আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।''

মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম সন্তানের মা হয়ে যান সরোজ খান, নাম হামিদ খান, তবে বর্তমানে তাঁকে রাজু খান বলেই সকলে চেনেন। কোরিওগ্রাফার হিসাবে তাঁরও বেশ খ্যাতি রয়েছে।

পরে সরোজ খানের জন্ম দেন তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের। মাত্র ৮ মাস বয়সেই মৃত্যু হয় তাঁর। পরে আরও এক কন্যা সন্তান হিনার জন্ম দেন তিনি।

পরে একাধিক সাক্ষৎকারে সরোজ খান বলেছিলেন, ''আমি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছিলাম। গ্রহণ করেছিলেন ইসলাম ধর্ম। অনেকেই আমায় জিজ্ঞাসা করেছেন, কেউ চাপ দিয়েছেন কিনা, কিন্তু না, আমি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হই। '' 

সরোজ খানের সন্তানদের স্বীকৃতি দিতে চাননি সোহনলাল। ১৯৬৫ তে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। সোহনলাল তাঁকে ছেড়ে মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) চলে যান।

পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে ব্যবসায়ী সর্দার রোশন খানকে বিয়ে করেন সরোজ খান। তাঁদের সন্তান হলেন সুকিনা খান। 

বর্তমানে সরোজ খান ও রোশন খানের মেয়ে সুকিনা দুবাইতে একটি নাচের স্কুল চালান।

তিন সন্তানকে একাই নিজের বিশ্বাস ও চেষ্টাতেই সন্তানদের বড় করেছেন সরোজ খান।

জীবনে অনেক ওঠা পড়া গিয়েছে। তবে কখনওই ভেঙে পড়েননি সরোজ খান। কষ্ট করেছেন অনেক। প্রতিষ্ঠিতও হয়েছেন।

প্রথমে সহকারী নৃত্য পরিচালক হিসাবেই কাজ করতেন সরোজ খান। ১৯৭৮ সালে 'গীতা মেরে সীতা' ছবিতে প্রথম একক নৃত্য পরিচালক হিসাবে কাজ করেন। 

১৯৮৭ সালে মুক্তি পায় শ্রীদেবী 'মিস্টার ইন্ডিয়া'। শ্রীদেবী-র 'হাওয়া হাওয়াই' নাচের সঙ্গেই খ্যাতি পান কোরিয়োগ্রাফার সরোজ খান। পরবর্তীকালে 'নাগিনা', 'চাঁদনি' ছবিতে শ্রীদেবীর সঙ্গে কাজ করেছেন সরোজ খান।

শ্রীদেবীর পরে বলিউডের নৃত্যশিল্পী ও নায়িকা হিসাবে খ্যাতি পান মাধুরী। তাঁর নেপথ্যও ছিলেন সেই সরোজ খান। 'তেজাব'-ছবির 'এক দো তিন', 'থানেদার' ছবির 'তাম্মা তাম্মা লোগে', 'বেটা'-র ধক ধক করনে লগা'  সরোজের পরিচালনাতেই দর্শকদের মন জয় করে নেন মাধুরী।

সরোজ খানের পছন্দের দুই নায়িকা ছিলেন শ্রীদেবী, ও মাধুরী। এদেরকে গড়ে তোলার পিছনে ভূমিকা রয়েছে সরোজ খানের। 

পরবর্তীকালে 'দেবদাস', 'জব উই মেট' এবং তামিল ছবি 'শৃঙ্গারম'-এর জন্য তিন বার জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

দীর্ঘ কেরিয়ারে ২ হাজারেরও বেশি গানের কোরিওগ্রাফার হিসাবে কাজ করেছেন সরোজ খান, শেষবার 'কলঙ্ক' ছবির বেশকিছু গানেও কোরিওগ্রাফার ছিলেন সরোজ খান।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link