Christmas 2023: ৪ রংয়ের মোমবাতি যীশুকে, ১৫০ বছরের আসানসোলের স্যাক্রেড হার্ট ক্যাথিড্রাল গল্প বলে ইতিহাসের!
বাসুদেব চট্টোপাধ্য়ায়: বড়দিনের আগের চারটে দিন চার রংয়ের মোমবাতি উৎসর্গ যীশুকে! উৎসবের মেজাজে দেড়শো বছরের পুরনো গির্জা। রোম থেকেই এই গির্জাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণবঙ্গের বৃহৎ খ্রিস্টীয় এলাকা ঘোষণা করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল। বড়দিনের উপলক্ষে সেজে উঠছে আসানসোলের স্যাক্রেড হার্ট ক্যাথিড্রাল। যা আসানসোল হটন রোড মোরে সিটি বাস স্টান্ডের সামনে অবস্থিত।
প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো এই গির্জায় রাত থেকেই শুরু হয়েছে প্রার্থনা ও ক্যারল। ক্যারল অর্থ্যাত বড়দিনের আগমনী গান। বড়দিনের শেষ একদিন আগে রবিবার বেগুনি রঙের মোমবাতি জ্বালানো হল গির্জায়। যা যীশুর উদ্দেশে উতসর্গ করা হল। বড়দিনের আগের চারটে দিন চার রঙের মোমবাতি জ্বালানো হয়। চারটি ভিন্ন রঙের মোমবাতির জন্য রয়েছে আলাদা বার্তা। ওইদিন থেকেই শুরু হয়েছে বড়দিনের আগমনী গান। গান শুরু হয়েছে পাড়ায় পাড়ায়। পাড়া ও গির্জাতেই তাই সাজো সাজো রব। কেক, পিকনিক আর নতুন বছরের আগমনীর উচ্ছ্বাসে আমোদিত এখন শহর। আলো ঝলমলে গোশালা, ক্রিসমাস ট্রি, স্লেজ গাড়ি, জিঙ্গল বেলে সেজে উঠেছে চার্চগুলি।
শুধু নিজেদের মধ্যে আমোদ প্রমোদ নয়, দুঃস্থদের শীতবস্ত্র প্রদান, ও ঢালাও খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারে দেড়শো বছর আগে বেলজিয়াম থেকে এসেছিলেন এক পরিব্রাজক। রেলের কাছ থেকে খানিকটা জমি নিয়ে ১৮৭৬ সালে আসানসোলে একটি গির্জা গড়ে তোলেন তিনি। শুধু এই খনি-শিল্পাঞ্চলের প্রথমই নয়, জেলার অন্যতম প্রাচীন গির্জা এই স্যাক্রেড হার্ট ক্যাথিড্রাল। চার্চের ফাদার সার্থক বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বড়দিন উপলক্ষে সেজে উঠেছে এই গির্জা। তিনি বলেন, জেলার অন্যতম প্রাচীন গির্জা দেড়শো বছরের পুরানো স্যাক্রেড হার্ট ক্যাথিড্রাল। ১৮৭৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রথম বড়দিনের প্রার্থনা ও উৎসব পালন হয়েছিল এখানে। তখন থেকেই বড়দিনে সেজে ওঠে এই ক্যাথিড্রাল। ক্রিসমাস ইভের রাতে শহরের গির্জায় গির্জায় শুরু হবে প্রার্থনা। সেই উৎসবে মেজাজ দেখা গেল আসানসোলে।
আসানসোলের হটন রোডের গির্জাটিকেই ক্যাথিড্রাল বা বড় চার্চ বলে মান্য করা হয়। ১৯৯৭ সালের ৮ ডিসেম্বর রোম থেকেই এই গির্জাকে কেন্দ্র করে বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে বৃহৎ খ্রিস্টীয় এলাকা ঘোষণা করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল। জানা যায়, ১৮৬৬ সালে কয়েক জন খ্রিস্টধর্মের প্রচারে এই অঞ্চলে আসেন। বছর কয়েক এখানে ছিলেন তাঁরা। এর পরেই ১৮৭৩ সালে প্রথমে কলকাতায়, তারপরে আসানসোলে আসেন বেলজিয়ামের পরিব্রাজক ফাদার জাকস। এই শহরের দরিদ্র মানুষজনের সামাজিক উন্নতির কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথমেই আসানসোল রানিগঞ্জে ব্রিটিশের অধীনে থাকা ভারতীয় সৈনিকদের সেবায় ব্রতী হন তাঁরা। তারপরে বস্তিবাসীদের জন্যও কাজ করেন।
বছরখানেক পরে আসানসোলে বেশ কিছুটা জমি পেয়ে গড়ে তোলেন এই গির্জা। ১৯২৭ সালের রোমান ক্যাথলিকদের হটন রোডের গির্জা গড়ে ওঠে পরে। ফাদার জাকস ও তাঁর উত্তরসূরিরা শুধু গির্জা নয়, এই শিল্পাঞ্চলে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও তৈরি করেন। এই বড় গির্জার অধীনে আরও ১৫টি ছোট গির্জা রয়েছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এই সমস্ত মিশনারিজ প্রতিষ্ঠান সেজে উঠেছে বড়দিন উপলক্ষে।