দড়ির গিঁটই মুখের ভাষা? ইনকাদের রঙিন সুতোর `বর্ণমালা` সামনে নিয়ে এল চমকপ্রদ তথ্য

Soumitra Sen Thu, 27 May 2021-9:05 pm,

ইনকা সভ্যতা বরাবরই বিস্মিত করে আধুনিক মানুষকে। ১৫ শতকের সবচেয়ে বড় সভ্যতা ছিল ইনকা। বিরল প্রযুক্তির ব্যবহার অন্য প্রাচীন সভ্যতা থেকে তাদের আলাদা করেছে। তাদের সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের নিদর্শন আজও বহন করছে মাচুপিচু শহর।

অথচ ইনকাদের সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যেত না। কারণ তাঁদের কোনও হরফ নেই। হরফ নেই, কারণ তাঁরা লিখতে পারতেন না। ইনকাদের সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরাও তাই তেমন কিছু জেনে উঠতে পারছিলেন না। কিন্তু ইনকারা তো নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করতেন। তা হলে সেটা তাঁরা করতেন কী ভাবে?

বহুদিন ধরেই গবেষকেরা এই রহস্য ভেদ করতে চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি এক কলেজছাত্র তাঁর শিক্ষকের সাহায্যে ইনকাদের 'ভাষা', বা বলা ভাল তাঁদের রেখে যাওয়া তথ্যের খোঁজ পেয়েছেন! ইনকাদের ভাব প্রকাশের অদ্ভুত মাধ্যমের খোঁজ পেয়ে তাঁরাও মুগ্ধ। 

জানা যাচ্ছে, নিজেদের যাবতীয় তথ্য ইনকারা নাকি সুতোয় গিঁট বেঁধে প্রকাশ করতেন! কী রঙের সুতো, কতগুলি গিঁট, দু'টি গিঁটের দূরত্ব কত-- ইত্যাদি দেখেই তাঁরা অন্যের ভাব ও ভাষা বুঝতেন। ইনকা সভ্যতা থেকে এ রকম গিঁট বাঁধা দড়়ি কিংবা সুতোর খোঁজ আগেও অবশ্য পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলিকে 'খিপু' (khipu) বলে। কিন্তু খিপুগুলির ভিতরে লুকিয়ে থাকা এরকম কোনও গোপন তথ্যের হদিশের অনুমান এত দিন করেননি তাঁরা।

পনেরো শতকের আমেরিকার সব চেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল ইনকাদেরই। ইকুয়েডর থেকে চিলি পর্যন্ত ৫ হাজার কিলোমিটার এলাকা। ১৪৫০ সাল নাগাদ রাজা পাচাকিউটেক ইনকা ইউপানকুই (pachacutec inca yupanqui) পেরুর মাচুপিচুতে এই শহর গড়ে তুলেছিলেন।  খুব বেশি দিন টেকেনি শহরটি। জানা যায়, মাচুপিচুর সমস্ত বাসিন্দা গুটি বসন্তে মারা গিয়েছিলেন। 

পাহাড়ের মাথায় মেঘ ভেদ করে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে এই শহর। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি  রাস্তা, পাথর দিয়ে সাজানো এই শহরে রয়েছে ঝুলন্ত সেতুও। এই শহর বানাতে যে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হয়েছিল সে সময়ে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এত ভারী ভারী পাথর কী ভাবে তাঁরা পাহাড়ের মাথায় তুলেছিলেন আজও তা অবাক করে বিশেষজ্ঞদের।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ম্যানি মিড্রানো ও তাঁর শিক্ষক গ্যারি ইনকাদের এই দড়ির গিঁটে লুকিয়ে থাকা ভাষা-রহস্যের সমাধান অবশেষে করে ফেলেছেন। তাঁরা উত্তরপশ্চিম পেরুর সান্টা নদীর উপত্যকা থেকে কতগুলি খিপু আবিষ্কার করেন। পাশাপাশি ওই সভ্যতা সংক্রান্ত একটি প্রাচীন বইও তাঁরা পড়তে শুরু করেন। পড়তে-পড়তে দু'জনের বিস্ময়ের সঙ্গে খেয়াল করেন, ওই সময়ে ওই এলাকার জনসংখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে যা-যা তথ্য বইটিতে রয়েছে, খিপুতেও তা রয়েছে! খুব ভাল ভাবে খিপুগুলি পর্যবেক্ষণ করলে বইয়ের তথ্যের সঙ্গে আশ্চর্য সব মিল পাওয়া যায়!

দিনে দিনে ইনকা সভ্যতাকে ঘিরে এরকম কত নতুন নতুন তথ্য উঠে আসবে আগামি দিনেও। ফলে প্রাচীন এই শহরসভ্যতার নানা অজানা দিক  সামনে আসবে আমাদের।  

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link