Best Friend Day 2021: জীবনের `দোস্তানা`, ছাড়িয়ে বাইশ গজের সীমানা
আজ 'বেস্ট ফ্রেন্ড ডে' (Best Friend Day 2021) । প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুতা উদযাপনের দিন। ব্যাট-বলের পৃথিবীতেও এমন কিছু বন্ধুরা আছেন যাঁরা বেস্ট ফ্রেন্ডের থেকে কম তো নন, উল্টে বেশিই। তাঁদেরই গল্প রইল এই প্রতিবেদনে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিন তেন্ডুলকর (Sourav Ganguly and Sachin Tendulkar) 'গড অফ ক্রিকেট' এবং 'গড অফ অফসাইড'। এই দুই কিংবদন্তির সম্পর্ক শুধু বাইশ গজেই সীমাবদ্ধ নয়। দেখতে গেলে পারিবারিক সম্পর্কেও আবদ্ধ তাঁরা। সচিন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে একটি ক্রিকেট ক্যাম্পে। বাকিটা ইতিহাস। ১৯৯২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জুটি বেঁধে বাইশ গজে সর্বোচ্চ রানের (৮২২৭) পার্টনারশিপ গড়েছেন তাঁরা। এই দু'জন মিলেই ভারতীয় ক্রিকেটের মানচিত্রটাই বদলে দিয়েছেন। আজও সচিন-সৌরভের একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান অন্য পর্যায়ের। ইংল্যান্ডের মাটিতে গত বিশ্বকাপে কমেন্ট্রি বক্সেও সচিন-সৌরভের বন্ধুতার প্রতিফলন ফুটে উঠেছিল। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে মেতেছিলেন তাঁরা।
সুরেশ রায়না ও এমএস ধোনি (Suresh Raina and MS Dhoni)
এমএস ধোনি যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতেন না, তখন একজন ক্রিকেটারই সম্ভবত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং সুরেশ রায়না। ট্রফির নিরিখে এই দুই ক্রিকেটারের ক্রিকেটীয় সাফল্য মাপা গেলেও বন্ধুতার গভীরতা মাপা সম্ভব নয়। সেই ২০০৮ সাল থেকে রায়না চেন্নাই সুপার কিংসে খেলছেন ধোনির নেতৃত্বে। আর রায়না ধোনির এতটাই কাছের মানুষ যে, ধোনি বাবা হওয়ার খবরটা পেয়েছিলেন রায়নার থেকে। কারণ জিভার জন্মের সময় ধোনি ছিলেন দেশের বাইরে। আর তিনি কোনও মোবাইল ফোন নিয়ে যাননি। ফলে সাক্ষী রায়নাকেই জিভার পৃথিবীর আলো দেখার বার্তাটা দিয়েছিলেন।
ইয়ান বথাম ও ভিভিয়ান রিচার্ডস (Ian Botham and Vivian Richards) সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ইয়ান বথামের দেশ ইংল্যান্ড। অন্যদিকে কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডস ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কিন্তু সম্পর্কে দেশ কোনও সীমা নয়, তা তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন। দুই ক্রিকেটার শুধুই বন্ধু নন, একে-অপরের ভাই। 'ফ্রেন্ডশিপ গোল' বলতে যা বোঝায়, তা বথাম-রিচার্ডস জানেন। এক সঙ্গে জীবন সেলিব্রেট করেন তাঁরা। অবসরের দু'দশক পরেও তাঁদের সম্পর্কে কোনও ভাটা পড়েনি। বাইশ গজে চর্চিত তাঁদের বন্ধুতা। একে অপরের প্রতিটি শুভ অনুষ্ঠানে থেকেছেন।
কুমার সঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়বর্ধনে (Kumar Sangakkara and Mahela Jayawardene) দ্বীপরাষ্ট্রের দুই কিংবদন্তির কুমার সঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়বর্ধনে। শুনলে অবাক হতে হবে যে, তাঁদের বন্ধুতার শুরু ১৫-১৬ বছর বয়সে। তাঁরা এতটাই একে-অপরের কাছের যে, মাহেলার স্ত্রী সঙ্গাকারার বিয়েতে 'মেইড অফ অনার' হয়েছিলেন। কিন্তু মাহেলার বিয়েতেই সঙ্গা থাকতে পারেননি। কারণ তিনি তখন ভারত সফরে এসেছিলেন। আজও এটা নিয়ে তাঁরা মজা করেন।
এবি ডিভিলিয়ার্স এবং ডেইল স্টেইন (AB De Villiers and Dale Steyn) দক্ষিণ আফ্রিকার দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবি ডিভিলিয়ার্স ও ডেইল স্টেইন। অসাধারণ ব্যাটসম্যান ও ভয়ঙ্কর বোলারের বন্ধুতা ছিল দেখার মতো। একে অপরকে আগলে রাখতেন। এবিডি যখন অবসর নেন তখন স্টেইন ইনাস্টাগ্রামে একটি আবেগি পোস্ট দিয়েছিলেন। যাঁর প্রতিটা লাইনে ছিল দু'জনের সম্পর্কের প্রতিফলন। স্টেইন শেষ লাইনে লিখেছিলেন, "আর কখনও আরেকটা এবি ডিভিলায়র্স হবে তৈরি হবে না।"
যুবরাজ সিং ও বিরাট কোহলি (Yuvraj Singh and Virat Kohli) অনেকেই জানেন না যে, একে-অপরকে তাঁরা নাম ধরে নয়, 'বোন' বলে ডাকেন, হ্যাঁ ভাই নয়। কারণ তাঁরা মনে করেন তাঁদের বন্ডিং ভাইয়ের চেয়েও বেশি। বিরাট-যুবরাজ এক সঙ্গে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। খেলেছেন আইপিএলেও। তাঁদের যুগলবন্দি ঈর্ষণীয়। যদিও যুবারজ সিংয়ের বাবা যোগরাজ সিং দাবি করেন যে, যুবরাজের কেরিয়ার দীর্ঘায়িত না হওয়ার কারণ কোহলিই!
অনিল কুম্বলে ও রাহুল দ্রাবিড় (Anil Kumble and Rahul Dravid) কর্ণাটকের দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়ন এতটাই ভাল যে, একমাত্র দ্রাবিড়ই পারতেন কুম্বলকে শান্ত করতে। ভারতীয় ড্রেসিংরুমের কুম্বলে-দ্রাবিড়ের সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে একটা গল্প আছে। বলা হয় কোনও কারণে কুম্বলে যদি পারফরম্যান্স নিয়ে বিষণ্ন হয়ে পড়তেন, তাহলে তাঁর সঙ্গে সচিন-সৌরভও কথা বলার সাহস পেতেন না। একমাত্র দ্রাবিড়ই পারতেন কুম্বলকে ঠান্ডা করতে।
অ্যান্ড্রিউ ফ্লিনটফ ও স্টিভ হারমিসন (Andrew Flintoff and Steve Harmison) ১৯৯৬-৯৭ সালে ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে প্রথমবার গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রিউ ফ্লিনটফ ও স্টিভ হারমিসন। হারমিসনের যখন বাড়ির জন্য মন কেমন করতো, তখন ফ্লিনটফ তাঁকে সঙ্গ দিতেন। সেই থেকে শুরু। তারপর আর এই দুই বন্ধু পিছন ফিরে তাকাননি। সিনিয়র টিমের হয়ে খেলার সময়ে প্রতিটি সফরে একই ঘরে থাকতেন তাঁরা। সকলে তাঁদের বিরোধিতা করলেও, একে-অপরের হাত ছাড়েননি কখনও।
ময়াঙ্ক আগরওয়াল ও কেএল রাহুল (Mayank Agarwal and KL Rahul) এক সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা থেকে শুরু করে সিনিয়র দল ও আইপিএল। খেলতে খেলতেই এই দুই ক্রিকেটারের অসাধারণ বন্ধুতা হয়ে যায়। তাঁরা 'ব্রোম্যান্স' ও 'রোম্যান্স' এক সঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার বার্তাই দেন সোশ্যালে। ময়াঙ্কের বিয়েতে রাহুল যেভাবে আনন্দ করেছিলেন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিয়েছিলেন, তা দেখে বোঝাই গিয়েছিল যে দু'জনের সম্পর্ক ঠিক কোথায়।