Daspur: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ দাসপুর, ইসমাইলের তৈরি কালী-ই পুজো পাচ্ছে ৪০ বছর ধরে
নিজস্ব প্রতিবেদন : "মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলান।" কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখনীতে এই লাইন-ই যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে দাসপুরে। তৈরি হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যন্য নজির। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছে ইসমাইলের তৈরি কালী প্রতিমা-ই।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার নাড়াজোল গ্রামের বাসিন্দা ৬১ বছর বয়সের ইসমাইল চিত্রকার। পরিবারে স্বামী, স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে পাঁচ মেয়ে। অভাবের সংসারে আগে পটশিল্পের সাথে যুক্ত থাকলেও বরাবরই হিন্দু দেব-দেবীর প্রতিমা গড়ে সংসার চালিয়ে আসছেন ইসমাইল চিত্রকার।
বর্তমানে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ সহ কালী প্রতিমা তৈরি করে পরিবার নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন ইসমাইল বাবু। তাঁর একাজে হাত লাগান স্ত্রী আয়রন বিবি সহ মেয়ে হাসিনা ও আসপিয়ারা। অভাবের সংসারে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর সামর্থ্য হয়নি। তাই বাবার সাথে মেয়েরাও এখন প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগায়। নিষ্ঠাভরে প্রতিমা বানায়। একাজ করে তাঁরাও খুশি।
ইসমাইল বাবু আগে পটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু পটের তেমন চাহিদা না থাকায়, সংসারে তেমন অর্থও আসত না। বর্তমানে তাই প্রতিমা তৈরিকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। ইসমাইলবাবু মূলত ডায়াসের তৈরি বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা বানিয়ে থাকেন। মাটি কিনে তা ছাঁচে তৈরি করে তার উপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ডায়াসের প্রতিমা বানিয়ে বিক্রি করেন।
তাঁর তৈরি প্রতিমার চাহিদাও তুঙ্গে। শুধু দাসপুর নয়, ঘাটাল, পাঁশকুড়া, কেশপুর সহ দূরদূরান্তে বিক্রি হয় প্রতিমা। সামনেই কালীপুজো। তাই তার আগে ইসমাইলবাবুর বাড়িতে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। নাওয়াখাওয়া ভুলে জোরকদমে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে খরিদ্দাররা আসতেও শুরু করেছেন। প্রতিমার অর্ডার দিচ্ছেন। কম দামে ডায়াসের তৈরি প্রতিমা পেতে কালীপুজোর আগে রীতিমতো ভিড় জমে যায় ইসমাইল চিত্রকারের বাড়িতে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এলাকায় সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে। এখানে কোনও জাতপাতের বিচার কেউ করে না। তাই ইসমাইল চিত্রকার ভিন্ন ধর্মের হলেও, তাঁর তৈরি প্রতিমা কিনতেও কোনও দ্বিধাবোধ কেউ করে না। সকলেই সাদরে ইসমাইলবাবুর তৈরি কালী প্রতিমা কিনে নিয়ে গিয়ে পুজো করেন। এককথায় সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে উঠেছে দাসপুরের নাড়াজোল।