ভূটান জল ছাড়তেই ভয়াবহ! রাস্তা দিয়েই প্রবল বেগে যেন বইছে নদী, প্লাবিত ধূপগুড়ির একাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদন: মঙ্গলবার সারাদিন প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত হল জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের বানারহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই আকার আরও ভয়াবহ রূপ নেয় মঙ্গলবার রাতে। কয়েক ঘন্টার ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি মনে করা হচ্ছে ভূটান থেকে জল ছাড়াতেই ফুলে-ফেঁপে উঠেছে ডুয়ার্সের নদীগুলো। যার ফলে মঙ্গলবার রাতেই বানারহাটে হাতিনালার জলে প্লাবিত হয় বানারহাট, বিন্নাগুড়ি, গয়েরকাটার বিস্তীর্ণ এলাকা।
ভয়াবহ হয়ে ওঠে বানারহাটের শান্তিপাড়া ,সুকান্ত পল্লির পরিস্থিতি। বিন্নাগুড়ির নেতাজিপাড়া জলের নীচে। গয়েরকাটার শান্তি নগর, কোঙার কলোনির রাস্তা ও বাড়িগুলি জলমগ্ন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিবাড়ি চা বাগান এলাকায় রাস্তার উপর বইছে হাতিনালার জল। তেলিপাড়া চাবাগানের একটা বড় অংশ জলের তলায়। গয়েরকাটায় আংরাভাসা নদীর জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকাও।
নদীর আশেপাশে বাড়ির লোকজন আতঙ্কে ঘরের দরকারি কাগজপত্র আসবাবপত্র নিয়ে ছেড়ে অন্যত্র উঠে যাবার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা সীমা চৌধুরী এলাকা পরিদর্শনে এসে উদ্ভুত পরিস্থিতি প্রশাসনকে জানান। জলপাইগুড়ি জেলাশাসক অভিষেক কুমার তেওয়ারি জানান, বানারহাট, বিন্নাগুড়ি এবং সাকোয়াঝোড়া ১ এই তিনটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় জল ঢুকেছে। ইতিমধ্যে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে । ৫০ টির বেশি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে বুধবার সকালে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ থেকে ৩৬৮৪ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় (দোমহনী থেকে বাংলাদেশ ) জারি হয়েছে লাল সংকেত। পাশাপাশি সংরক্ষিত এলাকায় জারি হয়েছে হলুদ সংকেত। একই সঙ্গে বানারহাটে বৃষ্টি ও ভূটান থেকে হাতিনালায় জল ছাড়ার জেরে জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সংকেত জারি করেছে সেচ দপ্তর।
হাতিনালার অতিরিক্ত জল এখন আংরাভাসা নদী দিয়ে বের হবার ফলে নদী ভাঙন আজও অব্যাহত। গত সোমবার হাতিনালার জলে আংরাভাসা নদী পারে গয়েরকাটা চা বাগানের বিঘা লাইনে তিনটি বাড়ি নদী গর্ভে চলে যায়। মঙ্গলবার রাতের জলে আবার নতুন করে আরও দুটি বাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। একটি বাড়ি নদী গর্ভে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এলাকা থেকে মানুষ বাড়ির আসবাবপত্র-সহ ঘর ভেঙে টিন কাঠ ইত্যাদি নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছে।
জলপাইগুড়ি জেলাশাসক অভিষেক কুমার তিওয়ারি জানান, জল নামতে শুরু করেছে । ৫০টির বেশি পরিবারকে রাতেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ খতিয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। এদিকে অনবরত বৃষ্টির কারণে বুধবার সকালে কালিংম্পের রোহিনী রোডে ধস নামে । সাময়িকভাবে শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যুদ্ধকালীন ততপরতায় মেরামত করে সকাল দশটা থেকে ছোট ছোট গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় । দুপুরের দিকে ধস সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয় ।