Durga Puja 2021: পাঁচশো বছর ধরে দুইবাড়িতে পুজো হয়ে আসছে `বড় বোন` `ছোট বোনে`র
হাওড়া আমতার তাজপুরের রায়বাড়ির পুজো ও ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো খুবই প্রাচীন। তখনকার যুগের বাড়ি এখন ভগ্নপ্রায়। দেখেই বোঝা যায়, কত পুরনো ইতিহাস বহন করে চলেছে বাড়িগুলি।
পরিবারের সদস্যদের কথা অনুযায়ী, দুটি পুজোই প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো। একই এলাকার দুই বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত মেলবন্ধন। রায়বাড়ির দুর্গা পূজিত হন বড় বোন হিসেবে আর ভট্টাচার্য বাড়ির দূর্গা পূজিত হন ছোট বোন হিসেবে।
প্রায় ৫০০ বছর আগে রায়বাড়ির পুজো শুরু করেছিলেন বর্ধমান রাজার প্রধান দেওয়ান দুর্লভচন্দ্র রায়। আর সেই থেকেই চলে আসছে এই পুজো। অনেক কিছুই এখন আর নেই। ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ে রয়েছে বাড়ি। কিছু অবশিষ্টের মধ্যে পড়ে রয়েছে-- রাসমন্দির, বড় পুকুরঘাট প্রভৃতি।
জমিদারবাড়ির ঠাকুর দালানে অনুষ্ঠিত হয় পুজো। এস্টেটের আয় দিয়েই হয় দুর্গা-সহ জগদ্ধাত্রী, কালী, লক্ষ্মী পুজো, রথযাত্রার অনুষ্ঠান। পরিবারের সদস্য মানস রায় জানান, ভট্টাচার্য বাড়ি তাঁদের গুরু পরিবার। প্রায় একই সময় শুরু দুই পরিবারের পুজো। শুরু থেকেই মেলবন্ধন। আগে পুজোর সময় বাড়িতে যাত্রা, থিয়েটারের আসর বসত। সারা গ্রামকে খাওয়ানো হত, নতুন জামা কাপড় বিতরণ করা হত। বহু বছর আগে এখানে মোষ বলি হত। এখন আর্থিক সমস্যা রয়েছে। জৌলুসও অনেকটা কমেছে।
অন্য দিকে, রায়বাড়ির গুরুপরিবার ভট্টাচার্য পরিবারের বেশিরভাগ লোকজন কাজের সুবাদে বাইরে থাকেন। জানা যায়, এখানেও আগে জাঁকজমক করে পুজো হত, এখন সেই জৌলুস হারিয়েছে।
ভট্টাচার্য বাড়ির লোকজন ছিলেন গৌতম গোত্রীয় ঋগ্বেদীয় ব্রাহ্মণ। এই অঞ্চলেই টোল খুলে তাঁরা শিক্ষাদান করতেন। কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র এঁদের টোলেই পড়তে আসতেন। বহু নামী পণ্ডিত এই টোলে শিক্ষাদান করতেন।
কথিত আছে, এই বাড়িতে ডাকাতি করতে আসা ডাকাতদল দৈববলে অন্ধ হয়ে সারারাত এই বাড়ির চৌহদ্দিতেই পড়েছিল। পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙে উঠে আর পালাতে পারে না তারা। ধরা পড়ে যায়। তখন ডাকাতেরা পরিবারের লোকজনদের কাছে সব স্বীকার করে। জমিদারবাড়ি অবশ্য দারুণ রুচির পরিচয় দিয়েছিল সেদিন। তাদের ধরে-বেঁধে শাস্তি না দিয়ে রান্না করে খাইয়ে তবেই ছেড়েছিল।
এর পরেই পরিবারের কর্তা স্বপ্নাদেশ পান, মা দুর্গার আরাধনা করতে হবে! সেই থেকেই চলছে ভট্টাচার্যি বাড়ির এই পুজো। অতীতে কয়েক হাজার মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হত, প্রচুর দানধ্যান করতেন পরিবারের লোকজন। কালের নিয়মে এখন শুধু পুজোটুকুই হয়।
বিজয়ার দিন রায়বাড়ি থেকে বড় বোনকে নিয়ে যাওয়া হয় ভট্টাচার্য বাড়ির ছোট বোনের কাছে। সেখানে বরণ ও মিষ্টিমুখ-পর্ব মিটলে, ছোট বোন বড় বোনের সঙ্গেই চলে আসে রায়বাড়িতে। সেখানেও দুই বোনকে বরণ ও মিষ্টিমুখ করান রায়বাড়ির মহিলারা। তার পরে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠা করা পুকুরে সম্পন্ন হয় নিরঞ্জন।