Durga Puja 2021: ইতিহাসের স্পর্শের মধ্যেই উজ্জ্বল নন্দীবাড়ির প্রাচীন পুজো

Soumitra Sen Thu, 30 Sep 2021-11:12 pm,

হুগলি চকবাজারের নন্দীবাড়ির পুজো শুরু করেছিলেন নরেন্দ্রনাথ নন্দী। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ আমলের নামকরা ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। 

 

কথিত আছে, তিনি নাকি ব্যান্ডেল থেকে চুঁচুড়া পর্যন্ত অর্ধচন্দ্রাকৃতি জিটি রোডকে সোজা করেছিলেন। শেরশাহের তৈরি জিটি রোড আগে ছিল ব্যান্ডেল চার্চের সামনে দিয়ে। কেওটা থেকে টায়ারবাগান হয়ে ব্যান্ডেল চার্চের সামনে দিয়ে বালির মোড় থেকে রায়বাজার হয়ে শরৎ সরণী-- এই ছিল পুরনো জিটি রোড। শহরে যানজট কমাতে ব্রিটিশরা এতটা ঘুরপথে না গিয়ে জিটি রোডকে সোজা করতে চেয়েছিল। সাহাগঞ্জের পর কেওটা থেকে একদম সোজা ব্যান্ডেল মোড় হয়ে কোদালিয়ায় শরৎ সরণীতে মিশিয়ে দেওয়া হয় জিটি রোড। কাজটি সাফল্যের সঙ্গে করেছিলেন নরেন্দ্রনাথ নন্দী।

তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে এরপর ব্রিটিশ সরকার তাঁকে অনেক সরকারি কাজের বরাত দেয়। শোনা যায়, সে সময়ে সাহেবদের যাতায়াত ছিল নন্দীবাড়িতে। সেই সব সাহেবি চেয়ার টেবিলে আজও ওই বাড়িতে আছে। বড়দিনে সাহেবরা দামি সুরা, কেক ইত্যাদি উপহার দিতেন নন্দীবাড়ির লোকজনকে।

প্রথমে অন্নপূর্ণা পুজো শুরু করেন নরেন্দ্রনাথ। কথিত, অন্নপূর্ণা পুজো করেই তাঁর সম্পত্তি বেড়েছিল বহু গুণ। অন্নপূর্ণার স্থায়ী মূর্তি তৈরী করে আনা হয় কুমোরটুলি থেকে। নাটমন্দিরও তৈরি হয়। সারা বছর ধরে অন্নপূর্ণার পুজো হয় এ বাড়িতে। 

 

সঙ্গে এই মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ ও হরপার্বতীর পুজোও চলে। ১৯২৫ সালে দুর্গাপুজো শুরু করেন নরেন্দ্রনাথ। তাঁর তৃতীয় প্রজন্ম এখন এই পুজোর দায়িত্বে।

 

মহালয়ার পরদিন প্রতিপদ থেকে পুজো শুরু হয়ে যায় নন্দীবাড়িতে। ন'দিন ধরে চলে চণ্ডীপাঠ। একচালার প্রতিমা। বছরের পর বছর ধরে একই কাঠামোয় হয়। জন্মাষ্টমীর দিন হত কাঠামো পুজো। এখন রথযাত্রা থেকে উল্টোরথের সময় কোনো একটা শুভদিন দেখে হয় কাঠামো পুজো। তারপর শুরু হয় প্রতিমা তৈরি। কুমোরটুলি থেকে আসে প্রতিমার সাজ। আগে সপ্তমীর দিন দরিদ্রসেবা হত। কাপড়, মিষ্টি, টাকা দেওয়া হত। বছরদশেক ধরে তা বন্ধ। এর বদলে হাসপাতাল, অনাথাশ্রম, স্কুলে সাহায্য করা হয়। চকবাজার ইমামবাড়া অঞ্চলে অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাঁরাও পুজোর দিনগুলিতে নন্দীবাড়িতে আসেন।  অষ্টমীতে কুমারী পুজো, সন্ধিপুজোয় আখ, ছাঁচিকুমড়ো বলি। দশমীর দিন কাঁধে করে এলাকা ঘুরিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদনীঘাটে। নন্দীবাড়ির এস্টেটের মধ্যেই রয়েছে নানা ফল-ফুলের গাছ। পুজোর যত ফুল লাগে সবই নন্দীবাড়ির নিজস্ব বাগান থেকেই পাওয়া যায়।

শোনা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হুগলি জেলে বন্দী ছিলেন বেশ কিছুদিন। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি নন্দীবাড়িতে ছিলেন কিছুদিন। 

 নন্দীবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম তাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে সযত্নে।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link