Durga Puja 2021: সুরুল রাজবাড়িতে পুজোয় বলির সময় নারায়ণকে রেখে আসা হয় মন্দিরে
থিমপুজোর ভিড়ে এখনও বাংলার সাবেকি পুজোর মেজাজটি ধরে রেখেছে যে ক'টি বনেদি বাড়ি, তার মধ্যে সুরুলের রাজবাড়ি অন্যতম। লালমাটির দেশ বীরভূমের সুরুল রাজবাড়ি দৃশ্যতই সুন্দর। এ বাড়ির শারদীয় পুজোও রীতিমতো আকর্ষণীয়।
ষষ্ঠীতে যথারীতি হয় সরকার বাড়ির বোধন। সপ্তমীতে নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে নিয়ে এসে তাঁকে স্থাপন করা হয় রাজবাড়ির পুজোর অঙ্গনে। সব মিলিয়ে সে এক জমজমাট শোভাযাত্রা। প্রতিবছর এতে শামিল হন পরিবারের সব সদস্য এবং গ্রামবাসীরা। এ বছর ২৮৭ বছরে পড়ল সুরুলের এই সরকারবাড়ির পুজো।
শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে চারপাশ আলো করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সুরুল রাজবাড়ি। পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই সেখানে পুজোর মেজাজ চলে আসে। এই ক'দিন পুজোর প্রস্তুতি চলে তুঙ্গে। নাটমন্দিরে চলে প্রতিমা সাজানোর কাজ। বছরের এই ক'টা দিন যেন ঝলমল করে রাজবাড়ি।
যে কোনো রাজবাড়ির মূল কাঠামো যে রকম হয়, সরকারবাড়ি তার থেকে খুব আলাদা কিছু নয়। মাঝখানে নাটমন্দিরকে রেখে চতুষ্কোণ এই রাজবাড়ি। তবে শহুরে রাজবাড়ির তুলনায় মাটির গন্ধ এখানে যেন কিছু বেশিই।
বোলপুরের এই সরকারবাড়ির ইতিহাসটা একটু বলে নেওয়া যাক। 'সরকার' এঁদের প্রকৃত পদবি নয়। ইংরেজদের থেকে পাওয়া। এঁদের আসল পদবি 'ঘোষ'। আর বোলপুরে এঁদের আদি নিবাসও নয়। এঁদের আদি বাস ছিল বর্ধমানে।
আঠেরো শতকের প্রথম দিকে ভরতচন্দ্র সরকার বর্ধমানের বাঁকা নদীর ধারে নীলপুর থেকে বীরভূমের সুরুলে আসেন তাঁর গুরুবাড়িতে থাকতে। গুরুর নাম বাসুদেব ভট্টাচার্য। তাঁর বাড়িতেই সস্ত্রীক দীর্ঘসময় থাকেন ভরতচন্দ্র। সেখানে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়। নাম তার কৃষ্ণহরি। এই কৃষ্ণহরিকে নিয়ে এখানেই থেকে যান ভরতচন্দ্র। এবং ধীরে ধীরে তাঁরা সুরুলেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করলেন। এবং একসময়ে হয়ে গেলেন সুরুলেরই বাসিন্দা। ভরতচন্দ্রের আমল থেকেই শুরু হয়েছিল সরকারবাড়ির দুর্গাপুজো। পরে তাঁর ছেলেদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি হলে ছোট তরফের বাড়িতেও আলাদা করে শুরু হয় পুজো।
ভরতের নাতি তথা কৃষ্ণহরির ছেলে শ্রীনিবাস সরকার ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করে রীতিমতো নাম করেছিলেন সে যুগে। তাঁর যথেষ্ট প্রভাব-প্রতিপত্তিও হয়েছিল। কৃষ্ণহরির মূলত ছিল জাহাজের পাল তৈরির কাপড় আর নীল চাষের ব্যবসা। তাঁর আমলে তাই স্বাভাবিক ভাবেই ঠাকুরদার হাতে শুরু হওয়া পুজোর জাঁক একটু বাড়ে।