Durga Puja 2021: শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত ৩৫০ বছরের ভদ্রবাড়ির দুর্গাপুজো
বাঁকুড়ার প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলির অন্যতম এই কোতুলপুরের ভদ্রবাড়ির দুর্গাপুজো। কালের নিয়মে অবশ্য় এঁদের এককালের বিখ্যাত জমিদারি আজ আর নেই। জৌলুস হারিয়েছে জমিদারবাড়ির সেই দুর্গাপুজোও। তবে এই পুজোকে ঘিরে আজও এলাকার মানুষ উদ্দীপ্ত। আজও তাদের তাড়া করে বেড়ায় এই পুজোর অদ্ভুত এক নস্টালজিয়া।
কোতুলপুরের ভদ্র পরিবারের এককালের মূল ব্যবসা ছিল নুনের আমদানি-রপ্তানি। জনশ্রুতি, এই ভদ্ররা মনসামঙ্গল-খ্যাত চাঁদ সওদাগরের প্রকৃত উত্তরপুরুষ। মনসামঙ্গল উপাখ্যানে বর্ণিত ব্যবসার মতো সুদূর অতীতে এই ভদ্র পরিবারের লোকজনেরাও সাত সাগর আর তেরো নদীতে ডিঙা ভাসিয়ে ব্যবসা করতে যেতেন দূর দূরান্তে।
নুন ব্যবসায় ফুলে-ফেঁপে ওঠা ভদ্র পরিবার প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ উদয়চাঁদ মহাতাপের কাছ থেকে কোতুলপুর লাগোয়া উর্বর ১৭টি তালুকের জমিদারি সত্ত্ব কিনে নেয়। একদিকে রমরমিয়ে চলা লবন ব্যবসা অন্য দিকে জমিদারির বিপুল আয়-- দু'য়ে মিলে কোতুলপুরে তৈরি হয় জমিদারের বিরাট এস্টেট। আর জমিদারি পত্তনের পাশাপাশি শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। সাতমহলা জমিদারবাড়ির উঠোনে তৈরি হয় দুর্গা মণ্ডপ।
পরবর্তীকালে ভদ্র পরিবার দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ভাগ হয়ে যায় পুজোও। দুই ভদ্র পরিবারে সমান তালে শুরু হয় দুর্গার আরাধনা। একসময় ভদ্র পরিবারের পুজোর জাঁকজমক এতই ছিল যে অচিরেই এ বাড়ির পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল দূর দূরান্তে। পুজোর সময় পুতুল খেলা, রামলীলা পাঠ, যাত্রাপালা-- সব মিলিয়ে জমিদার বাড়ি গমগম করত।
জমিদারি প্রথা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রবাড়ির কোষাগারেও ক্রমশ টান পড়তে শুরু করে। আর হালে তো তার আর অর্থ-কৌলীন্যই নেই। সময়ের নিয়মে এবং সংস্কারের অভাবে এখন পলেস্তরা খসে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সাতমহলা বাড়ির ইটের পাঁজর। বহু মন্দির প্রায় ধ্বংস। তবু অতীতের ঐশ্বর্যের স্মৃতি হিসাবে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে জমিদার বাড়ির একাংশ, শ্রীধর জিউ মন্দির, গিরি গোবর্ধন মন্দির, রাসমঞ্চ আর দুর্গা মণ্ডপ।
শোনা যায়, ১৮৮০ সালের ১০ অক্টোবর সপ্তমীর সকালে কামারপুকুর থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার পথে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব পুজো দেখতে ঢুকে পড়েছিলেন কোতুলপুরের এই ভদ্রবাড়িতে।