তাঁর ক্যামেরা-কাব্যে মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলে তাঁর চরিত্র!

Soumitra Sen Wed, 14 Jul 2021-8:14 pm,

এক বিবিক্ত তরুণ হঠাত্‍ই তাঁর প্রেমিকাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। প্রকৃতির অকৃপণ মাধুর্যে ও নির্জনতায় আপ্লুত তাঁদের যৌথযাপন যেন কবিতার মতো স্নিগ্ধ আর মদিরার মতো উষ্ণ। এ কাহিনির দৃশ্যায়নে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব। দৃশ্যায়ন? হ্যাঁ, দৃশ্যায়নই। ক্যামেরায় এ কবিতা রচনা করেছেন চলচ্চিত্র জগতের এক মহাকবি। ক্যামেরারচিত এই কাব্যটির নাম 'সামার উইথ মনিকা'। 

 

 সেই কবিরই রচিত আরও কয়েকটি ক্যামেরাকাব্যের নাম শুনলে পাঠক নিশ্চয়ই ধরতে পারবেন, কবিটির নাম--'দ্য সেভেন্থ সিল, 'ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ', 'থ্রু আ গ্লাস ডার্কলি', 'উইন্টার লাইট', 'দ্য সায়লেন্স', 'ক্রাইস অ্যান্ড হুইস্পারস', 'অটাম সনাটা'! ভীষণ চেনা-চেনা লাগছে? হ্যাঁ, এই কবির নাম ইঙ্গমার বার্গম্যান। আজ, ১৪ জুলাই তাঁর জন্ম দিন। ঘটনাচক্রে এই মাসই তাঁর মৃত্যু-মাস।

 

বার্গম্যান (Ernst Ingmar Bergman) ১৯১৮ সালের জাতক। মৃত্যু ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই। সুইডেনের উপসালার এই মানুষটি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, নাট্য পরিচালক ও নির্দেশক এবং নাট্যকার। বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্রকার উডি অ্যালেনের মতে, এযাবৎ যত চলচ্চিত্রকার জন্ম নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে সকলের সেরা বার্গম্যান!

সেরা না হয়ে যান-ই বা কী করে বার্গম্যান। সারা পৃথিবীতে এমন ক'জন চলচ্চিত্রকার আছেন, যাঁর এক-একটি ফিল্ম স্টিল এত চর্চিত, এত কথিত, এত ব্যাখ্যাত হয়! অথচ, বার্গম্যানের ক্ষেত্রে এটা প্রায়শই ঘটে। যেমন, 'দ্য সেভেন্থ সিল' ছবিতে সেই মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলার দৃশ্য? বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা এ দৃশ্য দেখে স্তব্ধ, মুগ্ধ, বিস্মিত!

বা, 'ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ' ছবির সেই মন উদাস-করা দৃশ্য, যেখানে ঘাসবনের নিভৃত ছায়ার উপরেই বসে পড়ে স্ট্রবেরি তুলছেন  কর্মকর্তব্যে আগাগোড়া জারিত তিক্ত, রুক্ষ নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধ চিকিত্‍সক!  

বহুদিন পরে দেখা মা-মেয়ের। মা একজন বিশ্ববিশ্রুত পিয়ানিস্ট। মেয়ে তত প্রতিভাবান নয়। যাই হোক, মা-মেয়ের দেখা সাত বছর পরে। তাঁদের মধ্যে কত কথা, কত-কত পুরনো স্মৃতির ভিড় করে আসা, কত আবেগকম্পিত মুহূর্তের সারণি! 

 

বার্গম্যানের এক একটি ছবি এক-একটি ক্ষেত্রে যেন মাইলস্টোন হয়ে গিয়েছে। যুগে যুগে নতুন চলচ্চিত্রকার এসেছেন। কিন্তু তাঁর আসন টলেনি।  

 

বার্গম্যানের ফিল্ম কেরিয়ার শুরু হয় ১৯৪১ সালে। ১৯৪৪ সালে 'টরমেন্ট' ছবির চিত্রনাট্য লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। 'সামার উইথ মনিকা' তাঁর প্রথম দিককার ছবি। এ ছবি পরে তাঁকে অনেক প্রশংসা এনে দিলেও সেই সময়ে বিশেষ সাড়া ফেলেনি। বার্গম্যানের প্রথম বড় সাফল্য 'স্মাইলস অফ আ সামার নাইট'। সারা বিশ্বের মানুষ তাঁর নাম জানে। 

 

তার পর তো একের পর এক মণিমাণিক্যহিরের দ্যুতি। The Seventh Seal (1957), Wild Strawberries (1957), Through a Glass Darkly (1961), Winter Light (1962), The Silence (1963)। এর মধ্যে শেষ তিনটি ছবি বিশেষজ্ঞের মতে trilogy। দেখতে গেলে বার্গম্যানই সিনেমা নির্মাণে ট্রিলজির জন্মদাতা।

১৯৫৮ সালে বার্গম্যান 'ব্রিঙ্ক অফ লাইফ' ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান।  ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজের জন্য গোল্ডেন বিয়ার পান। বেস্ট  ফরেন ল্যাঙ্গোয়েজ ফিল্ম ক্যাটেগরিতে তিনি তাঁর Through a Glass Darkly, The Virgin Spring, Fanny and Alexander-- এই তিন ছবির জন্য Academy Award পান। ২০০৩ সালেই তিনি কাজ থেকে অবসর নেন। ২০০৬ সালে ৮৯ বছর বয়সে মারা যান। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link