৭৭-এ পা, আজও বাম-রাজনীতির লাল-পলাশ বুদ্ধদেবই

Mon, 01 Mar 2021-3:45 pm,

২০১৫ সালের ব্রিগেডে (Brigade) তিনি ১৮ মিনিট বক্তব্য রেখেছিলেন। বাম-সমর্থকদের কাছে সেই বক্তৃতা ছিল সঞ্জীবনীর মতো। ওই ১৮ মিনিটের বক্তৃতা থেকেই যেন আগামীর লড়াইয়ের রসদ খুঁজে নিয়েছিলেন তাঁরা।

২০১৯ সালে ব্রিগেডের সময় তিনি বেশ অসুস্থ। তবুও ব্রিগেড বলে কথা! লাখ-লাখ মানুষের মাঝে তিনি থাকবেন না! লালের মিছিলের মুখ তো তাঁকে খুঁজবে। তিনি না থাকলে হয়! নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya) সেবার ব্রিগেডে হাজির হয়েছিলেন।

 

সেবার গাড়ি থেকে নামতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তবুও তিনি ছিলেন। সমর্থকদের কাছাকাছি ছিলেন। সেটাই ছিল বাম-জনতার সব থেকে বড় শক্তি। কিন্তু এবার তিনি হাজার চেষ্টা করেও পারলেন না। গত দুবছরে শরীর আরও ভেঙেছে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা জাঁকিয়ে বসেছে। 

 

এই প্রথম ব্রিগেড হল, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এলেন না। তার জন্য কতটা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছেন, তার ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছিলেন। গ্রাম-শহরের লাখ লাখ বাম সমর্থক ব্রিগেডমুখী হয়েছিলেন রবিবার। যদিও এবারের ব্রিগেড শুধুমাত্র বামেদের নয়। জোটের ব্রিগেড।

সময়ের অদ্ভুত সমাপতন! ব্রিগেডের পরেরদিনই তাঁর জন্মদিন। আজ, সোমবার, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৭৭-এ পা দিলেন। সকাল থেকেই জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভাসলেন বাম-রাজনীতির অভিভাবক। ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (Cpim)-র লাল-পলাশ এখনও যে তিনিই। তাই তাঁর স্বমহিমায় ফুটে থাকাটা জরুরি। 

 

বামেদের ডাকা জনসভা। তবে সহযোগী হিসাবে ছিল কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট। এবারই প্রথম বামেদের ব্রিগেডের মঞ্চে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ ছিল না। অনেকে বলছেন, জোটের প্রচারে এমন উদ্যোগ। সুস্থ থাকলে এই ঐতিহাসিক ব্রিগেড সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি ব্রিগেডের মুখ হয়েই থাকতেন।

এর মধ্যে দুবার অসুস্থ হয়েছেন তিনি। এখন আর ঘর থেকে বেরোন না। তাঁর মতো একজনের পক্ষে বিছানায় শুয়ে থাকা তো সত্যিই মুশকিল। তাই তিনি স্রেফ শুয়ে-বসে দিন কাটাননি। অসুস্থ শরীরেই বই লিখে ফেলেছিলেন। স্বর্গের নিচে বিশৃঙ্খলা। 

 

রবিবারের ব্রিগেডে তিনি সশরীরে থাকেননি। তবে তাঁর মন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে পড়ে ছিল নিশ্চয়ই। ৫৯ এ পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই নিস্পৃহ কেটেছে তাঁর ব্রিগেডের দিন। 

 

বাম কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে কিন্তু বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ''মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন আর আমি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মেনে চলেছি। ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দি যা কোনওদিন কল্পনাও করতে পারিনি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।''

'এ লড়াই লড়তে হবে। এ লড়াই জিততে হবে।' হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দৃঢ়কণ্ঠে তিনিই তো এই ডাক দিয়েছিলেন ব্রিগেড থেকে। সেই তিনিই কি না এবার অনুপস্থিত! 

সোমবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি লিখেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। একজন জ্ঞানী মানুষ। পাঁচ দশকের বেশি সময় মানুষের মধ্যে কাটিয়েছেন। দশ বছরেরও বেশি সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সহজ, সাধারণ জীবনযাপনের জন্য বাকি সকলেরে চেয়ে আলাদা। মহত্ এক চরিত্রে উদাহরণ উনি। আনন্দের সঙ্গে বাঁচুন, দীর্ঘজীবী হোন।'

 

ব্রিগেডের পরেরদিনটা আলাদা হতে পারত। তাঁর জন্মদিন বলে কথা। কিন্তু শরীর বড় বালাই। লাখ লাখ বাম কর্মী, সমর্থক তাঁকে নিয়ে উত্সবে মাততে তৈরি। তবে তিনি যেন এখন সবার থেকে দূরে এক অচিনপুরে। রংবদলের রাজনীতি থেকে শুরু করে বামেদের জোট, সব খবরই তাঁর কানে পৌঁছয়। তবুও তিনি যেন সব কিছু থেকে দূরে। 

 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link