ব্রেন ডেথের পর অঙ্গদান, বাবা-মা-স্ত্রী চাইছেন সৌমেন মহান হয়ে বেঁচে থাকুক সবার মধ্যে!
সঞ্জয় রাজবংশী: চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি নবদ্বীপ শ্মশানঘাটে সৌমেন ভদ্রের দেহ দাহ হয়েছে। এখনও ছেলের শোকে পাথর মা, বাবা, স্ত্রী। শনিবার সকাল হতেই কালনার পূর্বস্থলীর বাড়িতে আত্মীয় পরিজনরা আসছেন শোকার্তদের শান্তনা দিতে।
এরইমধ্যে মৃত সৌমেনের মা ইতি ভদ্র হাপুস নয়নে কেঁদে বলছেন, "আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যেন অন্যরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকে। এই আশা নিয়েই আমি আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দান করেছি। আমার ছেলে মহান হয়ে ওদের মধ্যে বেঁচে থাকুক। আগামী দিনে আমার মতো কোনও মা যেন আর কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি না যায়। আমি শুধু চাইছি, আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাদের শরীরে স্থাপন হয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারি।"
গত শুক্রবার কলকাতার অ্যাপেলো হাসপাতালে ব্রেন ডেথ হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী থানার বৈদিকপাড়ার বাসিন্দা সৌমেন ভদ্রের। এরপরই মৃত সৌমেন ভদ্রর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করতে রাজি হন মা ইতি ভদ্র ও তাঁর স্ত্রী অঞ্জনা ভদ্র।
পরিবারের সম্মতি মেলার পরই সৌমেনের শরীর থেকে তারঁ কিডনি, হার্ট, লিভার প্রভৃতি অঙ্গ বের করে নেওয়া হয়। তারপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুলিসের সহায়তায় গ্রিন করিডরের মাধ্যমে তারপর ওই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে রোগীদের দেহে তা স্থাপন করা হয়।
পূর্বস্থলী নীলমণি ইন্সটিটিউটের মেধাবী ছাত্র ছিলেন সৌমেন। বাবা সদানন্দ ভদ্র ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। তার দুই ছেলের মধ্যে সৌমেন-ই ছিলেন বড়। বছর পাঁচেক আগে কাটোয়ার একটি বেসরকারি ব্যাংকে অ্যসিসট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগ দেন মেধাবী ছাত্র সৌমেন।
এরপরই পারুলিয়ার বাসিন্দা অঞ্জনা ভদ্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। একটি শিশুপুত্রও রয়েছে দম্পতির। মঙ্গলবার গভীর রাতে আচমকাই প্রচণ্ড মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ির বিছানায় ঢলে পরেন সৌমেন।
এরপরই তাঁকে প্রথমে পূর্বস্থলী হাসপাতালে, তারপর কালনা হাসপাতাল হয়ে কলকাতার অ্যাপেলো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু আর প্রাণ ফিরে পাননি ওই যুবক।
হতভাগ্য পরিবারের দাবি, সৌমেনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যারা প্রাণ ফিরে পেলেন, তাদের সঙ্গে যেন মা, বাবা ও স্ত্রীকে দেখা করতে দেওয়া হয়।