বিশ্বকাপের অজানা পাঁচ গল্প : রাশিয়ায় অনুপ্রেরণার `পঞ্চতন্ত্র`
কোচের প্রতিজ্ঞা
২০১৮ বিশ্বকাপের সব থেকে কমবয়সী ও একমাত্র শ্বেতাঙ্গ কোচ আলিউ সিসে সেনেগালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিন বছর আগে। তবে তার আগে সেদেশের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের দায়িত্ব সামলেছেন। ওহ্, আরেকটা তথ্য রয়েছে। ২০১৮ বিশ্বকাপের সব থেকে কম পারিশ্রমিক পাওয়া কোচও তিনি। এর আগে ২০০২ বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে তারা ফ্রান্সকে হারিয়েছিল। সেবার দলের অধিনায়ক ছিলেন আলিউ। তার পর একই বছর তারা আফকন ট্রফির ফাইনালে ক্যামেরুনের কাছে হারে। আলিউ প্রকাশ্যে প্রতিজ্ঞা করেন,'ট্রফিটা আমি ফুটবলার হিসাবে জিততে পারলাম না। কিন্তু একদিন সেনেগালের কোচ হিসাবে জিতে দেখাব। মিলিয়ে নেবেন।'
হোমওয়ার্ক ছিল
মুম্বইয়ের থেকেও কম জনসংখ্যা আইসল্যান্ডে। তাতে কী! আইসল্যান্ড এখন বিশ্বফুটবলে পরিচিত নাম। ২০১৬ ইউরো কাপে তাদের পারফরম্যান্স হইচই ফেলেছিল। ২০১৮-তে তারা আরও শক্তিশালী। তবে রাশিয়াতে আইসল্যান্ডের থেকেও বেশি কথা হয়েছে আইসল্যান্ডের গোলকিপার হ্যানেস হলডরসনকে নিয়ে। তিনি লিওনেল মেসির পেনাল্টি শট রুখে দিয়েছিলেন। মেসির শট বাঁচিয়ে উঠে তিনি বললেন, হোমওয়ার্ক করেছিলাম। এরকম পরিস্থিতি আসতে পারে বলে আন্দাজ করেছিলাম। শেষ কয়েকটা ম্যাচে মেসির পেনাল্টি শটের ভিডিও দেখে নিজেকে তৈরি করেছি। হ্যানেস কিন্তু পেশায় সিনেমার পরিচালক। ফুটবলার তিনি অনেক পরে।
স্বপ্নের উড়ান
গোলদাতাকে নিয়ে প্রচুর কথা হয়। গোল যে বাঁচায় তাঁকে নিয়ে কি সমপরিমাণ হইচই হয়? রোনাল্ডোর পেনাল্টি বাঁচানোর পর আলিরেজা বেরানভান্ডকে নিয়ে কিন্তু তেমন কথা হয়নি। তাতে অবশ্য এই ইরানিয়ান গোলকিপার দমে যাননি। ১২ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল ছোট্ট বেরানভান্ড। তার পর একটা সময় মাথার উপর ছাদ ছিল না। যে ক্লাবে তিনি প্র্যাকটিস করতেন তার বাইরে রাস্তাতেও শুয়েছেন অনেকদিন। কখনও অন্যের গাড়ি ধুয়েছেন, কখনও পিত্জা ডেলিভারি বয় হিসাবে কাজ করেছেন। আবার কখনও জীবিকা নির্বাহের জন্য রাস্তা পরিস্কার করেছেন। কিন্তু কখনই নিজের স্বপ্নের অপমৃত্যু হতে দেননি।
মেসির মতো সিদ্ধান্ত
৩১ বছর বয়সে তিনি প্রথম দেশের জার্সিতে কোনও ম্যাচে নামলেন। তাও এমন ম্যাচে যাতে জিততে না পারলে তাঁর দেশ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিত। ভাবুন তো, কতটা চাপ নিয়ে খেলতে হয়েছিল ফ্রাঙ্কো আরমানিকে! ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে উইলি কাবালেরো শিশুসুলভ ভুল করায় তাঁকে বাদ দিয়ে আরমানিকে পরের ম্যাচে দলে নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ সাম্পাউলি। আরমানির স্ত্রী কলম্বিয়ার। তাই কলম্বিয়ার জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন আরমানি। কিন্তু তিনি এক্ষেত্রে মেসির মতো। মেসি যেমন স্পেনের প্রস্তাব পেয়েও আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আরমানিও তেমন কলম্বিয়ার প্রস্তাবে সায় না দিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছিলেন।
ওহ্, কী টিম!
গ্রুপ পর্বের দুটো ম্যাচে হার। তিন নম্বর ম্যাচ আবার ছিল জার্মানির বিরুদ্ধে। দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল সমর্থকরা ভাবছিলেন, তাদের দেশ হয়তো রাশিয়া থেকে খালি হাতে ফিরবে। শেষমেশ বিশ্বজয়ী দলের বিরুদ্ধেই জয় ছিনিয়ে নিল তারা। জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপে কালো ঘোড়া হয়ে উঠল দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার আইনানুযায়ী, ১৮-৩৫ বছরের প্রতিটি নাগরিককে অন্তত দুবছর দেশের সেনাবাহিনীতে দায়িত্ পালন করতে হবে। ২০০২ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার সুবাদে সেসময়কার দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলারদের অবশ্য এমন দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। এবার বিশ্বকাপে নামার আগে দক্ষিণ ফুটবলাররা ভয় পাচ্ছিলেন, অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত না পৌঁছতে পারলে দেশে ফিরে তাঁদের জন্য কড়া শাস্তি অপেক্ষা করছে।