হেঁশেলে যাকে ৩৬৫ দিনই প্রয়োজন, তার দামই এখন ৩৬৫ টাকা কেজি!
অয়ন ঘোষাল: কথা বলা গেল গড়িয়াহাট বাজারের জনৈক বিক্রেতা মনোরঞ্জন বসুর সঙ্গে। তিনি যে-ব্যাখ্যা দিলেন, তার সারাংশ হল-- রাজ্যে চাহিদার মাত্র ৪৫ শতাংশ আদার জোগান রয়েছে। আদার মূল উৎপাদক ও রফতানিকারক দুই রাজ্য হল আসাম ও মণিপুর। এই দুটি রাজ্য থেকে আদা এ রাজ্যে আসা বন্ধ। মোট চাহিদার মাত্র ৪৫ শতাংশের জোগান দিয়ে চলেছে দক্ষিণের তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ।
অয়ন ঘোষাল: গোটা দেশের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জোগানে ব্যাপক ঘাটতি থাকায় সেখান থেকে আদা আনতেও আদা-জল খেয়ে লেগে থাকতে হচ্ছে এ রাজ্যের আমদানিকারি ও পাইকারদের। বিষয়টি নিয়ে কথা বলা গেল গড়িয়াহাট বাজারের জনৈক ক্রেতা ঋদ্ধি মুখার্জির সঙ্গেও। আদা কিনতে গিয়ে যে রীতিমতো ছ্যাঁকা লেগে যাচ্ছে, প্রকারান্তরে সেই কথাই তিনি বলছেন।
অয়ন ঘোষাল: যদিও পোস্তা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি বলছে অন্য কথা। মণিপুর-ক্রাইসিস তত্ত্ব সম্পূর্ণ খারিজ করেছে পোস্তা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি।
অয়ন ঘোষাল: সমিতির সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তী নিজেই পশ্চিমবঙ্গে আদার অন্যতম প্রধান আমদানিকারী। তাঁর যুক্তি, একে তো এবার ফলন কম, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ ভারত থেকে আদার আমদানি কমে যাওয়া। তবে আসল কারণ অন্য। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির দীর্ঘ ঘুরপথে উত্তরবঙ্গ হয়ে দক্ষিণবঙ্গে আদা পাঠানোর বদলে সরাসরি বাংলাদেশে আদা পাঠিয়ে দেওয়াটা অনেক সহজ ও সুবিধার। তারা সেটাই করছে। ফলে বাংলাদেশে আদার বিপুল জোগান। তাই এই মুহূর্তে ভারতীয় মুদ্রায় বাংলাদেশে আদার দাম ৩০ বা ৪০ টাকার মধ্যে। এদিকে ভারতে এর দাম লাগামের বাইরে।
অয়ন ঘোষাল: রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের অধীনে দামের উপর নজরদারির জন্য গঠিত টাস্কফোর্সও মেনে নিচ্ছে, জোগানে এত ঘাটতি থাকলে দামে লাগাম টানা মুশকিল।
অয়ন ঘোষাল: নিত্য প্রয়োজনীয় মূল্য নিয়ন্ত্রক টাস্কফোর্সের সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে জানান, মণিপুরে অশান্তির জেরে সার সার ট্রাক প্রায় দেড় মাস ধরে জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে। অন্যান্য সবজির তুলনায় কম পচনশীল হলেও এত দীর্ঘ সময়ে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আদা এবার শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের দুটি মূল আদা উৎপাদক রাজ্যের আদা তাই দেশের প্রায় কোনো প্রান্তেই পৌছঁতে পারছে না। ফলে দেশ জুড়েই তৈরি হয়েছে বেনজির এই সংকট। তবে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আছে বলেও দাবি করেছে টাস্কফোর্স।