Guru Dutt Birth Anniversary: জীবনটাই যেন `কাগজ কে ফুল`

Fri, 09 Jul 2021-10:28 pm,

নিজস্ব প্রতিবেদন- গুরু দত্ত। পাঁচের দশকে পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এং অভিনেতা। ১৯২৫ সালের ৯ জুলাই জন্ম। আর সেই হিসাবে শুক্রবার তাঁর ৯৬তম জন্মদিন। ভারতীয় ছবির এমন এক ট্র্যাজেডি, জীবন যাঁকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফালা ফালা করে দিয়েছিল। জীবনের সেইসব যন্ত্রণা সেঁচেই বোধহয় তৈরি করেছিলেন 'কাগজ কে ফুল', যে ছবি তাঁর এপিটাফ হয়ে রয়ে গেল।  

আসল নাম বসন্ত কুমার শিবশঙ্কর পাড়ুকোন, শৈশবের এক দুর্ঘটনার পরেই সকলের কাছে গুরু দত্ত নামে ফেরত আসেন। যেমন আড়ম্বরের নায়ক-জীবন, তেমনই ঘটনাবহুল ব্যক্তিগত জীবন। প্রতিভাধর অভিনেতার জীবনের প্রেমকাহিনি যেকোন সিনেমার গল্পকেও হার মানাতে পারে।

১৯৫০ সাল। সেই সময়ের স্বর্ণকণ্ঠী গীতা রায়চৌধুরীর প্রেমে পড়েন গুরু দত্ত। বাঙালি মেয়ে, এমনিতেই পছন্দ। কারণ, কলকাতায় বাস করেছেন বেশ কয়েক বছর। বাংলার সংস্কৃতি, শিক্ষা, মেধা সবের সঙ্গেই পরিচিতি ছিল তাঁর। তাই কানু রায়ের বোনকে ভালোাসতে তাঁর দেরী হয় নি। প্রথম ছবি 'বাজি'র নায়িকাও করলেন গীতাকেই। প্রেমের সেই শুরু। বাড়ির অমতে ১৯৫৩ সালের ২৬ মে বিয়েও করেন তাঁরা।

কিন্তু  বিধাতা অলক্ষ্যে হেসেছিলেন। ৩ বছর কাটতে না কাটতেই জীবন ঘুরে যায় গুরু দত্তের। হালকা পায়ে হঠাৎ করে তাঁর জীবনে প্রবেশ করেন অন্য কেউ। 

১৯৫৬ সালে গুরু দত্তের সঙ্গে পরিচয় হয় ওয়াহিদা রহমানের। সেইসময়ে তেলেগু ছবিতে অভিনয় করছেন ওয়াহিদা। গুরু দত্তই উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে বম্বে নিয়ে আসেন। তারপরই গুরু দত্তের 'সিআইডি' ছবিতে খলনায়িকা ওয়াহিদা।

 পরপর গুরু দত্তের ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন ওয়াহিদা। 'পিয়াসা' ছবিতে নায়িকা।  'চৌধভি কা চাঁদ' ছবিতে ওয়াহিদা রহমানের বিপরীতে গুরু দত্তের অভিনয় ভারতীয় সিনেমায় অভিনয়ের মাস্টারক্লাস। 

পাশাপাশি অন্য নায়িকাদের সঙ্গেও অভিনয় করে চলেছেন গুরু দত্ত। 

কিন্তু কখন যে পর্দার প্রেম জীবনে ঢুকে পড়ল, তা ভালো করে ঠাহর করার আগেই গুরু দত্ত- ওয়াহিদা রহমান হয়ে ওঠেন 'টক অফ দ্য টাউন'। তবে শুধু কথার কথাই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও ওয়াহিদার প্রেমে পড়ে যান গুরু দত্ত।

পর্দার প্রেম যখন বাড়ির পাপোশ ডিঙিয়ে ঘরে চলে আসে, তখন বিবাহিত জীবনে ঝড় উঠবে, সে আর নতুন কথা কী! ওয়াহিদার সঙ্গে গুরুর সম্পর্ক সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান স্ত্রী গীতা দত্ত। তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ না হলেও তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। গীতার জীবনেও সেই সময়ে নেমে আসে ঘোর বিপর্যয়। শোনা যায়, ঘোর পানাসক্ত হয়ে ওঠেন তিনিও।

এক শিল্পীর জীবন নিদারুণ। গুরু দত্ত তাঁর এক চিরকালীন উদাহরণ। স্ত্রী গীতা দত্তের প্রতি তাঁর ভালোবাসায় কোনও খাদ ছিল না। আবার প্রেমিকা ওয়াহিদা রহমানের প্রতিও তাঁর ভালোবাসা ছিল অনাবিল। কাউকেই তিনি ছাড়তে চান নি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব পড়ে গুরু দত্তের কেরিয়ারে।

অসামান্য কাহিনি, অভিনয় সত্ত্বেও গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রহমান জুটির 'কাগজ কে ফুল' ছবিটি বাণিজ্যিক ছবি পায় নি। মনে করা হয়, বিবাহিত পরিচালক এবং নায়িকার প্রেম সেইসময়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারে নি। সেই আঘাত সহ্য করতে পারেন নি গুরু দত্ত। তারপর থেকেই গুরু-ওয়াহিদার প্রেমে ভাঁটা পড়তে থাকে। অসফল পরিচালক-অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে নিজের জীবনে এগিয়ে যান নায়িকা।

১৯৬২ সালে 'সাহেব বিবি গোলাম' ছবিতে গুরু-ওয়াহিদার শেষবারের মত অভিনয়। ওয়াহিদার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর দু দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গুরু দত্ত।

মারা যাওয়ার আগের দিন স্ত্রী গীতা দত্তের কাছেও যান গুরু দত্ত। তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে থাকতে চাইলে গীতা দত্ত রাজি হন নি। এরপরই ১৯৬৪ সালে নিজের ফ্ল্যাটে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link