Guy de Maupassant: ছোটগল্পের ঈশ্বর! অলৌকিক অক্ষরশিল্পী মপাসাঁ
এই ছেলেটিই গি দ্য মপাসাঁ। পরবর্তী কালে ছোটগল্পের এক মহত্তম শিল্পী হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পাবেন যিনি। তাঁর ছোটবেলাটা খুব ভাল কাটেনি। বাবা-মায়ের সংঘাত তাঁকে নিঃসঙ্গ করে তুলেছিল। ১৮৫০ সালের ৫ আগস্ট ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে জন্ম মপাসাঁর। স্বল্পভাষী লাজুক স্বভাবের ছেলেটির উপর মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকখানি প্রভাব ফেলেছিল। ফ্লবেয়ারের সঙ্গে মপাসাঁর মা লরার পরিচয় ছিল। ছেলের শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ছেলের ভালোবাসা দেখে লরা ভেবেছিলেন ফ্লবেয়ার হয়তো মপাসাঁকে সাহায্য করতে পারবেন। খুব ভুল ভাবেননি।
১৯৬৭ সালে মপাসাঁ একটি নিম্নমাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৬৯ সালে তিনি প্যারিসে আইন বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। তবে শীঘ্রই তাঁকে পড়া ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হল। ১৮৭২ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে ফ্রান্সের নৌ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করলেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা আর অস্থির পরিস্থিতি তাঁকে ভালই স্পর্শ করেছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছিলেন তাঁর প্রথম সার্থক ছোটগল্প Boule de suif বা 'একতাল চর্বি'।
প্যারিসে ফ্লবেয়ারের বাড়িতে ফ্লবেয়ার-মপাসাঁ আলোচনা হত। ফ্লবেয়ারই মপাসাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ইভান তুর্গেনেভ, হেনরি জেমস, এমিল জোলার মতো সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে। ফ্লবেয়ার মপাসাঁকে বিশেষ স্নেহ করতেন। ফ্লবেয়ার বলেছিলেন-- মপাসাঁ আমার শিষ্য, আমি তাকে ছেলের মতোই ভালোবাসি।
১৮৮০ থেকে ১৮৯০--এই দশ বছরই মপাসাঁর সাহিত্যরচনা-পর্ব। এই সময়ে তিনি প্রায় তিনশোর বেশি ছোটগল্প, ছটি উপন্যাস, তিনটি ভ্রমণকাহিনী লিখেছিলেন!
মপাসাঁর ছোটগল্পগুলি বাংলা-সহ বিশ্বের বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। মপাসাঁ রচিত উপন্যাসগুলিও মনে রাখার মতো। তাঁর 'বেল আমি' বহুলপঠিত উপন্যাস। তবে ছোটগল্পে মপাসাঁ নিজেকে যতটা তুলে ধরতে পেরেছিলেন, উপন্যাসে তেমন নয়।
বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও মপাসাঁ ছিলেন আমৃত্যু একাকী বিষাদগ্রস্ত এক মানুষ। একদিন রিভলবার দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। এক সময়ে মপাসাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৮৯৩ সালের ৬ জুলাই তেতাল্লিশতম জন্মদিনের কিছু আগেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন ছোটগল্পের এই জাদুকর।