হেমন্ত-স্মরণ, কণ্ঠে যাঁর চিরবসন্ত
নিজস্ব প্রতিবেদন- তাঁর জন্ম শতবর্ষ পার হয়েছে গত বছরই। আজ ১০১ তম জন্মবার্ষিকী। কিন্তু বাংলা আধুনিক গান, প্লে-ব্যাক, বাংলা-হিন্দি গানে সুরারোপের কথা বললে সবথেকে প্রাসঙ্গিক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আজও। নামে হেমন্ত, কিন্তু কণ্ঠে চিরবসন্ত। তাছাড়াও সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে ভারতীয় সঙ্গীতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
শোনা যায়, সলিল-হেমন্ত বন্ধুত্বই সেইসময়ের গণনাট্যের গানকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী সলিল চৌধুরী, তাঁর গান নিয়ে হাজির হন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে। 'আবাক পৃথিবী' গানের প্রথমাংশের সুরই তখন শেষ হয়েছিল। হেমন্ত সলিলকে গানটির সুর শেষ করে আনতে বলেন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই 'ডাকিনী যোগিনী' অংশের সুর মাথায় আসে সলিলের। ফেরত যান হেমন্তের ড্রয়িংরুমে। বাকিটা ইতিহাস। অন্যদিকে, শচীনকর্তার গানের সহজ সুর, লোকসুরের ব্যবহার অনুপ্রাণিত করেছিল সুরকার হেমন্তকে। আধুনিক বাংলা গানকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে, লোকগানকে ব্যবহার করতে হবে, বলেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
সুরকার নচিকেতা ঘোষ ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বাংলা আধুনিক ও ছায়াছবির গানে এক অনন্য জুটি। নচিকেতা ঘোষের সবথেকে প্রিয় শিল্পী ছিলেন হেমন্ত। এতটাই যে হেমন্তের যাওয়ার দিনে যে গান ফিরে ফিরে এসেছিল, সেই 'আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে' ছিল নচিকেতা ঘোষেরই সুর। অনেকেই মনে করেন, এই গানই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এপিটাফ।
বাঙালি তর্কপ্রিয় জাতি। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, উত্তম-সৌমিত্র, ঠিক তেমনই হেমন্ত-মান্না। দুজন শিল্পীর দুজনের সম্পর্কে শ্রদ্ধা ছিল অপরিসীম। গায়কীপ্রধান শিল্পী মান্না দে অনেকবার বলেছেন, তিনি সবথেকে বেশি বেগ পেয়েছেন সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান রেকর্ড করতে গিয়ে। শুনতে খুব সহজ, গাওয়া তত সহজ নয়, বলেছিলেন মান্না দে।
বাংলা গানের সে এক স্বর্ণযুগ। হেমন্ত- শ্যামল-সতীনাথ। সুরকার হেমন্তের গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সকলেই। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে ছিল বন্ধুত্ব।
এক বিশেষ মিটিংয়ে উপস্থিত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-লতা মঙ্গেশকর জুটি ভারতের অন্যতম সেরা। তবে সবথেকে বড় অবদান বাংলা গানে লতা মঙ্গেশকরকে বেশি করে ব্যবহার। এমনকি লতাকে দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতও গাওয়ালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
ছবির নাম 'একটুকু ছোঁয়া লাগে'। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে একসঙ্গে প্লে-ব্যাক করলেন কিশোর কুমার । 'দুস্তর পারাবার পেরিয়ে' গানটি বাংলায় একমাত্র যেখানে হেমন্ত-কিশের ডুয়েট।
শচীন কর্তার সুর যেমন খুবই প্রিয় ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের, ঠিক তেমনই বড় ,স্নেহ করতেন তাঁর ছেলে রাহুল দেব বর্মনকে।
এ এক ঐতিহাসিক ছবি। আশা ভোঁসলে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তরুণ গুলজার। ভারতীয় সিনেমার প্লে-ব্যাকেরও সে এক সোনার সময়।
বাংলা ছবিতে উত্তম কুমার আর তাঁর প্লে-ব্যাক কণ্ঠ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সফলতম এবং জনপ্রিয়তম জুটি। এতটাই সফল যে, গানের মধ্যে উত্তম কুমারের সংলাপের ডাবিংও করেছেন হেমন্ত। তবু শোনা যায়, ব্যক্তিগত কারণে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। বেশ কয়েক বছর উত্তম কুমারের প্লে-ব্যাক করেন নি হেমন্ত। সেই সময়েই আবার বাংলা ছবিতে উত্তম-মান্না সুপারহিট। সে তর্ক এখনও চলে যে কোন জুটি সেরা।
বলিউডে আবার বিশ্বজিৎ-হেমন্ত সুপারহিট। কে ভুলতে পারে 'বিশ সাল বাদ'-এর সাফল্যের কথা! আজ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের শ্রদ্ধা।