Hool Diwas: ভারতের প্রথম গণসংগ্রামের দিন; ভারত-ইতিহাসে প্রথম গণপদযাত্রার দিনও
দুই অমর বীর। যাঁরা অসম সাহসে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র-সজ্জিত ইংরেজবাহিনীর সঙ্গে বুক চিতিয়ে লড়়ে গিয়েছিলেন। লড়েছিলেন মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়, স্বাধীনতার স্বপ্ন সত্য করার প্রেরণায়। আজও তাঁদের স্মরণ করা হয়। আজও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয় মন। একজন সিধো মুরমু (১৮১৫-১৮৫৬), অন্যজন কানহু মুরমু (১৮২০-১৮৫৬)।
দেখতে গেলে এই দুই বীরই ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যোদ্ধা। আর তাঁদের নেতৃত্বে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল সেটাই ভারতের প্রথম স্বাধীনতার লড়াই। এক পরে ঘটেছিল সিপাহি বিদ্রোহ। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে আজকের দিনে, এই ৩০ জুনে প্রায় তিরিশ হাজার সাঁওতাল কৃষক বীরভূমের ভগনডিহি থেকে কলিকাতা অভিমুখে পদযাত্রা করেছিলেন। ভারতের ইতিহাসে এটিই প্রথম গণপদযাত্রা।
এই গণঅভ্যুত্থানই সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। তবে ১৮৫৫ সালেই যে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা তা নয়। আরও ৭৫ বছর আগে ১৭৮০ সালে সাঁওতাল জননেতা তিলকা মুরমু, যিনি তিলকা মাঞ্জহী নামেও পরিচিত, তাঁর নেতৃত্বে শোষকদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল গণসংগ্রামের সূচনা হয়েছিল। তিনি সাঁওতাল মুক্তিবাহিনী গঠন করে পাঁচ বছর ধরে ইংরেজ শাষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েছিলেন।
সিধু (সিধো) ও কানু (কানহু) ভ্রাতৃদ্বয়ই ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সাঁওতাল বিদ্রোহের দুজন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। কিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সিধু ব্রিটিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কানু ছিলেন সিধুর অনুজ। এ ছাড়াও ছিলে চাঁদ ও ভৈরব নামে আরও দুজন বীর।
১৮৫৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভগনডিহির সন্নিকটে পাঁচকাঠিয়া বটবৃক্ষে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় কানুকে। ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন--আমি আবার আসব, আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব। ইংরেজ সরকার কানুর মৃতদেহ তাঁর আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়ার সৌজন্যও সেদিন দেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। আর ভৈরব ও চাঁদ ভাগলপুরের কাছে এক ভয়ংকর যুদ্ধে প্রাণ দেন।
সাঁওতাল বিদ্রোহ বা 'সান্তাল হুলে'র সূচনা ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুরে। ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলেন সাঁওতালরা। তাঁরাই এক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
এটিই ছিল ইংরেজ, জমিদার, মহাজনদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সাঁওতালদের উপর অত্যাচার আরও বেড়ে গিয়েছিল। তাই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন নিপীড়িত সাঁওতালরা।