যুদ্ধ বাঁধলে দেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব?
সীমান্তে বারুদের গন্ধ। প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতি। সত্যিই যদি দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ আবার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যায়? কী হবে সাধারণ মানুষের? কী হবে অর্থনীতির? বড়লোক-গরিবের ফারাক কমেছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু একটা বিষয়ে প্রায় সবাই একমত। নয়ের দশকে আর্থিক সংস্কারের পর দেশে গরিব মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি এসেছে। একটা যুদ্ধে কিন্তু নিমেষে তা থমকে যেতে পারে। ইতিহাস, অর্থনীতির যুক্তি অন্তত তাই বলে।
মোট সম্পদ তো আর বাড়ছে না। তাই যুদ্ধের খরচ যদি বেড়ে যায়, বিনিয়োগের লক্ষ্য যদি হয়ে ওঠে সমরসজ্জা, তাহলে অন্য দিকে টান পড়তে বাধ্য।
যুদ্ধের সময় মূলধন, কাঁচামালের জোগান কমলে উত্পাদনও কমে যাবে। কাল কী হবে এই আশঙ্কা আর ফাটকা বাজারে লাভের আশায় যুদ্ধের সময় বিভিন্ন জিনিস মজুতের প্রবণতা বাড়ে। যার নিট ফল, দাম বৃদ্ধি।
ইতিহাস বলছে, অতীতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় মূল্যবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় ১০ শতাংশে পৌছে যায়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনে ভয়াবহ আর্থিক মন্দা তো জায়গা নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
যুদ্ধের বাজারে আর্থিক বিকাশের হার যদি কমে যায় তাহলে বড় ধাক্কা খাবে কর্মসংস্থান। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার সংকুচিত হয়েছিল। যুদ্ধ মানেই অস্থিরতা, লগ্নির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা।যুদ্ধের বাজারে যদি বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায় তাহলে নতুন চাকরি তো হবেই না বরং ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা বাড়বে। ৬৫, ৭১, ৯৯-এ যুদ্ধের বছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নি- সবেই ছিল ঢিমে গতি।
যুদ্ধের খরচ বাড়লে সরকারের পক্ষে অন্য খাতে খরচ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষায় সরকারি ব্যয় কমলে সাধারণ মানুষের সমস্যা বাড়বে। কার্গিল যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষায় খরচ বেড়ে যায় প্রায় ৩৬ শতাংশ। কৃষি-গ্রামোন্নয়নে সরকারি খরচ, প্রতিরক্ষায় ব্যয়-বরাদ্দের সিকি শতাংশে নেমে আসে। আর পাকিস্তান? ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে নামলে, ধারের টাকায় চলা দেশটার কী দশা হবে, তা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে!