ভাঙা ঘরে রেলমন্ত্রীকে নিজে হাতে খাইয়ে আদৌ কি অবস্থা ফিরেছিল? নিদারুণ বাস্তব ছবি বলছে অন্য কথা!
নিজস্ব প্রতিবেদন : জঙ্গলমহল সফরে এসে বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামে এক আদিবাসী পরিবারে এদিন মধ্যাহ্নভোজ সারেন অমিত শাহ। আদিবাসী পরম্পরা মেনেই আপ্য়ায়ন করা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ভাত, রুটি, ডাল, করলা ভাজা, বেগুন ভাজা, আলু ভাজা ও মেচা সন্দেশ সহযোগে তৃপ্তি সহকারে মধ্যাহ্নভোজ সারেন অমিত শাহ।
বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে দুপুরে খাওয়ার পর টুইটারে সেই ছবি শেয়ার করে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তাঁদের আতিথেয়তায় অভিভূত অমিত শাহ।
তবে একদিকে যখন চতুরডিহি গ্রামে আদিবাসী ঘরে অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে সরগরম রাজ্য, ঠিক তখনই বিপরীত ছবি ধরা পড়ল হাওড়ার ট্যান্ডেল বাগানে। এর আগেও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু সহ বিজেপির প্রথম সারির নেতারা একাধিক দলিত পরিবারে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছেন। কিন্তু এরপর ওইসব পরিবারের জীবনযাত্রা কি আদৌ বদলেছে? হাওড়ার ট্যান্ডেল বাগানে এক দলিত পরিবারের ঘরে ঢুঁ মারতেই বাস্তব ছবিটা সামনে এল।
২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল হাওড়ায় একটি অনুষ্ঠানে এসে হাওড়ার ট্যান্ডেল বাগানে জগদীশ মল্লিকের ঘরে দুপুরে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। সঙ্গে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। বর্তমানে রেলের অবসরপ্রাপ্ত সাফাই কর্মী জগদীশ মল্লিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সেদিন নিজের হাতে বানিয়েছিলেন ভাত, ডাল, রুটি, সবজি, ভেন্ডি ভুজিয়া। শেষ পাতে ছিল দু'রকম মিষ্টি। মাটির থালায় কলাপাতার উপর পরিবেশন করা হয়েছিল খাবার। দলিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসাথে বসেই খাওয়াদাওয়া করেছিলেন সুরেশ প্রভু।
কিন্তু এতদিন পর পরিবারের আক্ষেপ, কোনও কেন্দ্রীয় কিংবা রাজ্য বিজেপি নেতা-ই আর তাদের কোনও খোঁজখবর রাখেন না। জগদীশ মল্লিক জানান, ২০১৫ সালের জুন মাসে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। তারপরেও তিনি তাঁর ভাঙাচোরা কোয়ার্টারেই থাকেন। সেদিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু হাওড়ার গোলমোহরে একটি অনুষ্ঠান শেষে তাঁর বাড়িতে আসেন। রেলমন্ত্রীকে খাওয়াতে পেরে সেদিন খুশি হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমানে জগদীশবাবুর গলায় শুধুই আক্ষেপ।
তিনি বলেন, ওই অনুষ্ঠানের পর বিজেপির কোনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতা তাঁদের আর খোঁজখবর নেয়নি। এমনকি তিনি যে রেলের কোয়ার্টারে থাকেন, সেখানে তাঁর নিজস্ব কোনও ঘর পর্যন্ত নেই। রেল কোয়ার্টারে বর্ষাকালে জল জমে যায়। মশার উপদ্রবে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মত রোগের উপদ্রব হয়। ফলে মন্ত্রী এলেও তাঁদের কপালের দুঃখ শেষ হয়নি।
উল্লেখ্য, আদিবাসী ঘরে বিজেপি নেতাদের খাওয়াদাওয়া করা, এই সবটাই ভোটের চাল, পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি বলে সুর চড়িয়েছে বাম, কংগ্রেস নেতৃত্ব। যাঁদের বাড়িতে বিজেপি নেতৃত্ব গিয়েছিল, তাঁদের আর কোনও খোঁজখবরও তাঁরা রাখেননি বলে তোপ দেগেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
রেলের অবসরপ্রাপ্ত সাফাইকর্মী জগদীশ মল্লিকের আক্ষেপ যেন সেই অভিযোগেই শিলমোহর দিল। ভোট আসে ভোট যায়। আর ভোটের আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলিত পরিবারে মধ্যাহ্নভোজন করে শুধুমাত্র তাঁদের মন জয়ের চেষ্টা করে। এবার বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রাম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আপ্যায়ন করে গ্রামের পরিবারগুলি বাস্তবে আদৌ কতটা উপকৃত হবে, সেটাই এখন দেখার।