‘অন্য দলে গেলে স্ত্রী ডিভোর্স দিত’

Mon, 13 Aug 2018-6:06 pm,

শেষ ইচ্ছেটা অপূর্ণ-ই থাকল বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতার। আর আলিমুদ্দিনে ফেরা হল না সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের। 

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজাফ্ফর আহমেদ ভবন তো দূর, লাল গোলাপটাও পৌঁছল না চার দশেকেরও বেশি সময়ের এই কমিউনিস্ট নেতার কাছে। বিলেত ফেরত ‘সাহেব কমরেডের’ ইচ্ছে ছিল জীবনের অন্তিম দিনটায় পার্টির পতাকায় মোড়া থাকবে তাঁর দেহ। চোখের জলে বিদায় জানালেও একমাত্র বৈঠক বাতিল করা ছাড়া আর কোনও সম্মান প্রদর্শনই করতে পারলেন না সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সতীর্থরা।

আর তাঁর এই শেষ ইচ্ছা পূর্ণ হল না মূলত প্রয়াত নেতার পরিবারের অনিচ্ছার কারণেই। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তরফে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে গান স্যালুটও।

সিপিআই(এম) থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার খবর শুনে অবাক হয়েছিলেন সোমনাথবাবু। সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর দুঃখের কথা।  “বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এটাই ছিল আমার জীবনের সবথেকে দুঃখের দিন”, দল বহিষ্কারের পর জানিয়েছিলেন ব্যারিস্টার তথা কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

নিজের বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “আমাকে বহিষ্কার করে যদি দল আরও শক্তিশালী হয়, আমি একেবারেই অখুশি হব না। বরং আমি খুশিই হব। আমার কাছে এটা দুঃখের, যে আমি যতটা সততা নিয়ে দলের কাজ করেছি, সেই সত্ কর্মীকে দল যোগ্য সম্মান দেয়নি”।

সিপিআই(এম) থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর এমনও শোনা যায় কংগ্রেস তাঁকে দলে নিতে চেয়েছিল। এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে সোমনাথবাবু সাফ জানিয়েছিলেন, “কংগ্রেস আমার কাছে কখনও আসেনি। আমি কখনও কংগ্রেসের কাছে যাইনি। আমার কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার খবর একেবারে ভিত্তিহীন"। এরপরই তিনি হালকা মেজাজে বলেন, অন্য দলে যোগ দিলে স্ত্রী আমাকে ডিভোর্স দেবেন।

জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী না হওয়ায় দুঃখও প্রকাশ করেছিলেন সোমনাথবাবু। তিনি একাধিক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন, “শুধু আমি নয়, দেশের অনেক মানুষই দুঃখ পেয়েছেন। আর এটার জন্য কেবল কারাত (প্রকাশ) দায়ী নন, তবে হ্যাঁ তিনি অবশ্যই জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার পিছনে অন্যতম অন্তরায় ছিলেন”।

বামেদের ভরাডুবি নিয়ে তাঁর মত: দলের নেতারা আত্মকেন্দ্রিক। যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার জন্য দলের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়েছে সাধারণ মানুষ।

এই সঙ্গে বাম কর্মীদের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছেন এই বিলেত ফেরত বাম নেতা। তিনি কোনও রাখঢাক না করেই বলতেন, “দলের কর্মীরা নেতা পর্যন্ত পৌঁছতেই পারছে না। একটি পার্টি অফিস কখনই সংগঠন তৈরি করতে পারে না, কর্মীরাই পারে”।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে তাঁর মত: আমি তাঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)  মতামতের সঙ্গে সহমত নাও হতে পারি, কিন্তু তিনি কখনই আমার শত্রু নন। আমার মনে হয় তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ভাল কাজ করবেন। কারণ, এই রাজ্যকে তাঁকেই বাচাতে হবে। 

বাম কর্মীদের প্রতি বর্ষীয়ান নেতার উপদেশ: মানুষ এখনও বামেদের পাশে আছে, তাঁদের আরও লড়াই করতে হবে। আশাহত না হয়ে, আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে আরও আরও লড়ে যাও।

‘কিপিং দ্য ফেইথ: মেময়ার অব এ পার্লামেনটেরিয়ান’ বই প্রসঙ্গে তিনি এক টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে জানিয়েছিলেন, “আমি কেবল কারাতের (প্রকাশ) নিন্দা করতে বই লিখেছি, এভাবে বিষয়টা না দেখাই ভাল। ১৫-১৬ বছর ধরে, তিনি দলের শীর্ষনেতা। তাঁর প্রতি আমার কোনও রাগ নেই, তবে একজন সত্ কর্মী হিসেবে যে ন্যায্য ব্যবহার আমার পাওয়া উচিত ছিল, তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

শেষ দিনেও বঞ্চিতই থাকলেন তিনি। ৮৯ বছরের জীবনে অর্ধেক সময়েরও বেশি যে সিপিআই(এম)-র জন্য কাজ করলেন, শেষ দিনেও তাঁকে ঘরে ফেরাল না সেই দল। তিনি শেষ দিন পর্যন্ত চেয়েছিলেন একজন সিপিআই(এম) কর্মী হিসেবেই মরতে। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link