ঘুম থেকে উঠে শুনলেন চিরতরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, তারপর...
একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনলেন, ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারে বিকল হয়ে গিয়েছে! কবে থেকে চালু হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধকালীন তত্পরতায় ময়দানে নেমে পড়েছেন সমস্যার সমাধানে। কিন্তু সমস্যার জট খোলা যাচ্ছে না কিছুতেই।
যদিও এই খবর আপনি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে জানতে পারেননি। কারণ, তারা ততক্ষণে চিরনিদ্রায় ডুব দিয়েছে। আপনার স্মার্টফোনটি আর সে ভাবে স্মার্ট নেই। গেম এবং ফোন ছাড়া স্মার্টফোনটিকে আপাত দৃষ্টিতে আদ্দি কালের বারফোন মনে হচ্ছে।
এই খবরটি জানতে পেরেছেন টেলিভিশন এবং ধুলোয় মাখা পাশের বাড়ির রেডিও-র আকাশবাণীর খবর থেকে। হ্যাঁ, এদিন রেডিও সেটটা হঠাত্ করে কবর থেকে উঠে কথা বলতে শুরু করেছে।
আম বাঙালির মধ্যবিত্তের ঘরে মা-বাবাদের এই খবর নিয়ে হয়ত কোনও মাথা ব্যাথা থাকবে না। তাঁরা এখনও রেশন দোকানে লাইন দিতেই পছন্দ করেন। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলতে গেঁটে বাত নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এতদিনে যারা এটিএম কার্ডে টাকা তুলতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে বিপদ তাঁদের। কারণ, দুর্ভাগ্যবশত এটিম এদিন অনির্দিষ্টকালের জন্য অকেজো হয়ে পড়বে। আর আপনিও পারবেন না পেটিএমের মাধ্যমে ইলেক্ট্রিক বিল জমা দিতে। ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করতেও পারবেন না।
ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড আজকের পোস্ট কার্ডের মতো বাতিলের খাতায় চলে যাবে। পাশাপাশি বার্তা বিনিময়ে ফের ফিরতে পারে পোস্টকার্ডের জমানা। হয়ত, রানাররা আবার চিঠির ঝুলি নিয়ে ছুটবে।
এই মুহূর্তে প্রায় ৯০ শতাংশ ইন্টারনেট নির্ভরশীল ব্যাঙ্কিং সিস্টেম। পুরোটাই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। বিমুদ্রাকরণের সময় যে লাইনের সাক্ষী থেকেছেন সে দৃশ্য ফের ফিরে আসতে পারে।
অনলাইন কেনাকাটার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাবে। ফের সেপ্টিপিন থেকে চাল-ডাল কিনতে শঙ্কর মুদির দোকানে ভিড় জমাবেন। ফিকে হয়ে যাওয়া গড়িয়াহাট- শ্যামবাজার ফের পুরনো ছন্দে ফিরে আসবে।
আমাজন, ফেসবুক, গুগলের মতো প্রথম সারির মার্কিন সংস্থার ভবিষ্যত্ নিমিষে অন্ধকারে ডুবে যাবে। ৪৪ হাজার কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে সংস্থাগুলি।
ইন্টারনেট নির্ভরশীল কয়েক কোটি কর্মী মুহূর্তের মধ্যে চাকরি হারাবেন।
বিমান, রেল থেকে গুগল উপগ্রহ সবার সঙ্গে বিচ্ছন্ন হয়ে পড়বে যোগাযোগ।
বিটকয়েনের পিছনে আর টিকটিকি লাগাতে হবে না সরকারকে।
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ হওয়ার ফলে ট্রেনে, বাসে মুখোমুখি বসে থাকা অপরিচিতদের সঙ্গে আলাপ করতে আগ্রহী হতে পারেন। ফের ফিরতে পারে পাড়ার রকের আড্ডা।
জেনে রাখা ভাল, এখনও বিশ্বে ৪০০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।
ইন্টারনেটের দৌলতে হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছুরই পুর্নজন্ম ঘটবে।
আর একটা বিষয়, আপনার হাতে থাকবে অঢেল সময়। এরমধ্যে গুছিয়ে নিতে পারেন নিজেকে। ভাঙা সম্পর্কগুলো অজান্তে জুড়েও যেতে পারে।
আসলে এগুলো সবই ছিল আপনার স্বপ্ন। ঘুম ভেঙে দেখলেন, না সবই ঠিক আছে...ইন্টারনেট তো বহাল তবিয়তে। কিন্তু ভোরের স্বপ্ন বলে কথা, কখনও কখনও সত্যিও হয়ে যায় কিন্তু...!