নেপোলিয়নের স্মৃতিসৌধের উপরে তাঁরই প্রিয় ঘোড়ার কঙ্কাল; খেপে উঠল জনতা!
এই বছরটি ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের (Napoleon) মৃত্যুর ২০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। তিনি এমনিই ইতিহাসের খুব বর্ণময় ব্যক্তিত্ব। তার উপর তাঁকে নিয়ে ফরাসিদের আবেগও খুব গভীর। কিন্তু প্যারিসের মিউজিয়মের একটি পদক্ষেপে তাঁদের সেই আবেগে ধাক্কা লেগেছে। রেগে আগুন তাঁরা।
গোলমাল বেঁধেছে নেপোলিয়নের প্রিয় ঘোড়া মারেঙ্গোকে (Marengo) নিয়ে। ফরাসি সম্রাটের সৌধের উপরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি ঘোড়ার নকল কঙ্কাল। দাবি করা হয়েছে, সেটি ওই মারেঙ্গোর অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে।
মিউজিয়ম কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, এটি একটি উচ্চমানের শিল্পকর্ম, যা বোঝা সকলের কর্ম নয়। 'মেমেনতো মারেঙ্গো' (Memento Marengo) নামের এই আর্টওয়ার্ক তৈরি করেছেন শিল্পী Pascal Convert। শিল্পী স্বয়ং বলছেন, ১৮১৫ সালে ওয়াটারলুর (Waterloo) যুদ্ধে ব্রিটিশদের হাতে বন্দী হওয়ার আগে পর্যন্ত সম্রাট নেপোলিয়ন একজন বীরের জীবনই যাপন করেছেন। তাঁর সমস্ত যুদ্ধের সঙ্গে এবং জীবনের নানা উত্থান-পতনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল মারেঙ্গো। সেই অবিচ্ছেদ্য বন্ধন বোঝাতেই এই শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়েছে।
প্রাচীন মিশর থেকে মেসোপটেমিয়া, সব জায়গাতেই প্রথা ছিল সম্রাটের প্রিয় পোষ্যকে মৃতের সঙ্গে জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়া। মনে করা হত, রাজা বা সম্রাট তাঁদের প্রিয় ঘোড়া, কুকুর বা বিড়ালকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। Pascal Convert এক্ষেত্রে সেই আবেগ ও সেই প্রথাকেই (ancient traditions) ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। লন্ডনের জাতীয় আর্মি মিউজিয়ামে (London's National Army Museum) মারেঙ্গোর দেহাবশেষ দেখে তার অনুকরণ করে এই কঙ্কাল বানিয়েছেন তিনি।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল আর্ট হিস্ট্রি ইন্সটিটিউটের প্রধান বলেছেন, সবাই হয় তো এই শিল্পকর্মের মর্ম বুঝবেন না। কিন্তু তাঁরা কোনও ভাবেই সম্রাটকে অসম্মান করতে চান না। মিউজিয়মের মধ্যে যেখানে নেপোলিয়নকে সমাহিত করা হয়েছিল, সেখানে আরও কিছু আধুনিক 'পিস অফ আর্ট' যোগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রিয় ঘোড়াকে জীবন দান করে আসলে সম্রাটকেই যেন নতুন করে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক প্যারিসের জনতার এই দৃশ্য ভাল লাগেনি।
সাধারণ মানুষকে বাদ দিলেও অন্য সকলেই যে এই বিষয়টা ভাল ভাবে নিয়েছে, তা-ও নয়। যেমন 'নেপোলিয়ন ফাউন্ডেশনে'র সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক পিয়ের ব্রাদাঁ বলেছেন, এই দৃশ্য বিকট এবং চমকে দেওয়ার মতো।