Independence Day 2022: বর্তমান জাতীয় পতাকার সাথে একটুও মিল নেই আদি জাতীয় পতাকার। কেমন ছিল পতাকার এই বিবর্তন!
ভারতে, প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল ৭ আগস্ট, ১৯০৬ সাল, কলকাতা। তখন পতাকাতে লাল, হলুদ ও সবুজ - এই তিনটি রং ছিল। অনুভূমিকভাবে থাকা তিনটি রঙের মাঝে 'বন্দে মাতরম' লেখা থাকতো, পতাকার লাল অংশে একটি সূর্য ও অর্ধচন্দ্র আঁকা থাকতো এবং সবুজ অংশে আটটি অর্ধ প্রস্ফুটিত পদ্ম ছিল। জানা যায়, এই পতাকাটি স্বাধীনতা কর্মী শচীন্দ্র প্রসাদ বোস এবং হেমচন্দ্র কানুনগো দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পতাকাটি ১৯০৭ সালে মাদাম কামা এবং তার নির্বাসিত বিপ্লবীদের দল দ্বারা ১৯০৭ সালে প্যারিসে উত্তোলন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পতাকাতে অনুভূমিকভাবে ওপর থেকে নীচে কমলা,হলুদ ও সবুজ রঙ ছিল। কমলা অংশে পদ্মের বদলে, সপ্তর্ষি নির্দেশক সাতটি তারা আঁকা ছিল।বার্লিনে একটি সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনেও এই পতাকা প্রদর্শন করা হয়েছিল।
হোম রুল আন্দোলনের সময় ডক্টর অ্যানি বেসান্ট এবং লোকমান্য তিলক তৃতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।এই পতাকায় অনুভূমিকভাবে পাঁচটি লাল ও চারটি সবুজ অংশ পর্যায়ক্রমে সাজানো ছিল।পতাকার একটি কোণা ইউনিয়ন জ্যাক দ্বারা দখল ছিল।
১৯২১ সালে বিজয়ওয়াড়ায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন চলাকালীন, ভেঙ্কাইয়া এই পতাকাটির উপস্থাপন করেছিলেন। পতাকাটি সবুজ ও লাল- এই দুই রঙের ছিল। এই দুটি রঙ ভারতে দুটি প্রধান সম্প্রদায়, হিন্দু ও মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে ভারতের অবশিষ্ট সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে গান্ধীজি সাদা রঙ যুক্ত করতে বলেন।
গান্ধীজী ১৯২১ সালে পেঙ্গালি ভেঙ্কাইয়াকে চরকার প্রতীকসহ একটি পতাকা ডিজাইন করতে বলেছিলেন। বর্তমান পতাকার প্রাথমিক রূপদান পেঙ্গালি ভেঙ্কাইয়ার দ্বারাই হয়।
আরও কিছু পরিবর্তনের পর ১৯৩১ সালে এই জাতীয় পতাকাটি গৃহীত হয়। লাল রঙের জায়গায় চলে আসে জাফরান এবং সাদা রঙটি চলে আসে মাঝে। চরকার বদলে ২৪ টি দণ্ডযুক্ত ঘন নীল অশোকচক্র বসানো হয়। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, পতাকার প্রতীকতত্ত্ব ব্যখ্যা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যটি ছিল,'ভাগোয়া বা গেরুয়া রঙ ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতীক। আমাদের নেতৃবৃন্দকে পার্থিব লাভের প্রতি উদাসীন ও আপন আপন কাজে যত্নবান হইতে হইবে। মধ্যস্থলে সাদা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বভাবের পথপ্রদর্শক সত্যপথ আলোর প্রতীক। সবুজ মৃত্তিকা তথা সকল প্রাণের প্রাণ উদ্ভিজ্জ জগতের সহিত আমাদের সম্বন্ধটি ব্যক্ত করিতেছে। সাদা অংশের কেন্দ্রস্থলে অশোকচক্র ধর্ম অনুশাসনের প্রতীক। সত্য ও ধর্ম এই পতাকাতলে কর্মরত সকলের নিয়ন্ত্রণনীতি হইবে। এতদ্ভিন্ন, চক্রটি গতিরও প্রতীক। স্থবিরতায় আসে মৃত্যু। জীবন গতিরই মধ্যে। পরিবর্তনকে বাধাদান ভারতের আর উচিত হইবে না, তাহাকে সম্মুখে অগ্রসর হইতে হইবেই। এই চক্রটি শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের গতিশীলতার প্রতীক।'