INDvsNZ: ড্র হওয়া কানপুর টেস্টের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত

Tue, 30 Nov 2021-3:46 pm,

অভিষেক টেস্ট শ্রেয়স আইয়ারের চিরস্মরণীয় হয়ে রইল। প্রথম দিনের সকালে প্রবাদপ্রতিম সুনীল গাভাসকরের হাত থেকে 'টেস্ট ক্যাপ' পেলেন। বাকিটা তো ইতিহাস। দুই ইনিংসে দুরন্ত ব্যাটিংয়ের জন্য ভারতের সপ্তম ব্যাটার হিসেবে অভিষেক টেস্টেই 'ম্যাচের সেরা' হলেন এই মুম্বইকর। 

দল তখন ১০৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে। সেই সময় ব্যাট হাতে ক্রিজে এলেন শ্রেয়স। ইনিংসের শুরুতেই ফিরে পেলেন জীবন। কিন্তু এরপর বাইশ গজে শুধুই রাজত্ব করলেন ২৬ বছরের এই মুম্বইকর। থামলেন ১০৫ রানে। ২৬৭ মিনিট ক্রিজে সময় কাটিয়ে খেললেন ১৭১ বল। মারলেন ১৩টি চার ও ২টি ছয়। ফলে প্রথম ইনিংসে ৩৪৫ রান যোগ করল ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও টিম ইন্ডিয়ার অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না। এ বার দল ছিল আরও চাপে। শ্রেয়স যখন ব্যাট করতে এলেন ৪১ রানে ৩ উইকেট হারানোর জন্য নিউজিল্যান্ড টেস্টে জাঁকিয়ে বসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ময়ঙ্ক ও জাদেজা আউট হলেন। ৫১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন কোণঠাসা। তবে পাল্টা লড়াই চালিয়ে প্রথমে অশ্বিন ও পরে ঋদ্ধিকে নিয়ে লড়াই শুরু করলেন শ্রেয়স। ম্যাচের রঙ বদলে গেল। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ১২৫ বলে ৬৫ রান। মারলেন ৮টি চার ও ১টি ছয়। স্বভাবতই ম্যাচের সেরা হলেন তিনি। 

প্রথম ইনিংসে ১ রানে আউট হতেই নিন্দার ঝড় উঠতে শুরু করেছিল। কেএস ভারত কিপিং-এ নজর কাড়তেই সেটা আরও বড় মাত্রা পায়। তবে চতুর্থ দিন চাপের মুখে তাও আবার লো ও স্লো হয়ে যাওয়ার পিচের দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৬১ রান করলেন। এই ইনিংস খেলে নিন্দুকদের মুখে আপাতত সেলাই করে দিলন পাপালি। ঘাড়ের ব্যথার জন্য ঘুমোতে পারেননি। বা-পাশ করে শুতে পারছিলেন না। ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে ভারতীয় দলের ফিজিও নীতিন প্যাটেল সারাদিন তাঁর শুশ্রূষা করলেন। গরম তাপ দিয়ে পেশি নরম করার চেষ্টা করা হয়। তবুও ব্যথা ছিল। সেই ব্যথা উপেক্ষা করে দলের স্বার্থে ব্যাট করলেন তিনি। স্ত্রী দেবারতি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। বাড়িতে দুটো ছোট সন্তান। নিজেও পুরো সুস্থ নন। এমন অবস্থায় তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রল করা হচ্ছিল। তবে যাবতীয় নেতিবাচক দিককে পাত্তা না দিয়ে নিন্দুকদের কড়া জবাব দিলেন ঋদ্ধি। তাই তো ফাইন লেগের দিকে খেলে অর্ধ শতরান পূর্ণ করতেই সুনীল গাভাসকর বলে উঠলেন, 'অ্যা ফাইন ইনিংস অফ ফাইন সারভেন্ট অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট'। 

প্রথম ইনিংসে ৮২ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৩৫ রানে ৩ উইকেট। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিন অশ্বিনের মুকুটে যুক্ত হল আরও একটি পালক। শেষ দিনে অশ্বিন তুলে নিলেন ৪১৯ নম্বর উইকেট। আর এর সঙ্গেই দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় তিনে চলে এলেন চেন্নাইয়ের স্পিনার। অশ্বিন টপকে গেলেন হরভজন সিংকে। ভাজ্জির ঝুলিতে আছে ৪১৭টি উইকেট। অশ্বিনের সামনে এখন কিংবদন্তি কপিল দেব (৪৩৪) ও অনিল কুম্বলে (৬১৯)। শুধু তাই নয়। এ দিন আবার প্রবাদপ্রতিম বাঁহাতি স্পিনার বিষেন সিং বেদীর রেকর্ডও ভাঙলেন তিনি। এত বছর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার নজির বেদীর দখলে ছিল। তিনি ৫৭টি উইকেট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন। কিউই উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেলকে ফিরিয়ে ৫৮টি উইকেট দখল করে শীর্ষে চলে গেলেন অশ্বিন।

লাল বলের ক্রিকেটে অক্ষর প্যাটেলের স্বপ্নের দৌড় চলছেই। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে বুঝে নেওয়ার পর এ বার নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। টেস্টে ফের একবার পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি। কানপুরের গ্রীনপার্ক টেস্টে ৬২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে একাধিক নজির গড়লেন অক্ষর। টেস্ট কেরিয়ারের সপ্তম ইনিংসেই পাঁচ বার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড করে ফেললেন। এমন কীর্তি গড়ে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম বোলার হিসাবে মাইলস্টোন স্থাপন করলেন গুজরাতের বছর সাতাশের বোলার। সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে বেশি সংখ্যক পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আছে রডনি হগের। মাত্র ৬ ইনিংসে টেস্টে পাঁচবার পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন প্রাক্তন অজি জোরে বোলার। অক্ষর এখন চার্লি টার্নার (অস্ট্রেলিয়া) ও টম রিচার্ডসনের (ইংল্যান্ড) সঙ্গে এক আসনে বসলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ২৩ রানে ১ উইকেট। 

তাঁর তো গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে দাঁড়ানোর কথাই ছিল না। ঋদ্ধিমান সাহা হঠাৎ ঘাড়ে চোট পেতেই প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন সকালে মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে গেলেন 'সুপার সাব' কোনা শ্রীকর ভারত । আর কঠিন পিচে প্রথম দর্শনেই একেবারে বাজিমাত। প্রথম ইনিংসে তিনটি আউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভারত। অশ্বিনের বলে ৮৯ রানে ব্যাট করা উইল ইয়ংয়ের ক্যাচ ধরেন তিনি। বল লো হয়ে গেলেও দক্ষতার সঙ্গে গ্লাভসবন্দী করেন কোনা। এরপর অক্ষরের বলে ক্যাচ নিয়ে ফেরান রস টেলরকে। ৯৫ রানে ক্রিজে থাকা টম ল্যাথামকে দারুণ ভাবে স্টাম্প করেন তিনি। বোলার সেই অক্ষর। এছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে একাধিক বার দুরন্ত কিপিং করে সবার নজর কাড়েন কোনা।  

ভারতকে পেলেই জ্বলে ওঠেন কাইল জেমিসন। কানপুর টেস্টের পিচে টিম ইন্ডিয়ার জোরে বোলাররা সাহায্য না পেলেও জেমিসন কিন্তু উইকেট থেকে বাউন্স আদায় করলেন। প্রথম ইনিংসে ৯১ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৪০ রানে ৩ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার শুভমন গিলকে আউট করে দেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে দ্রুত ৫০ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন ২৬ বছরের ডানহাতি পেসার। 

কম যান না বহু যুদ্ধের নায়ক টিম সাউদি। ট্রেন্ট বোল্ট বিশ্রাম নিয়েছেন। নীল ওয়েগনার দলে নেই। তবে জেমিসনকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসে বোলিং করলেন। প্রথম ইনিংসে ৬৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে টিম ইন্ডিয়াকে ৩৪৫ রানে বেধে রাখলেন টিম সাউদি। পেস ও সুইংয়ের অসাধারণ মেলবন্ধনে দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৭৫ রানে ৩ উইকেট। 

 

সুপার ফ্লপ অজিঙ্কা রাহানে। গত অস্ট্রেলিয়া সফরে মেলবোর্নে শতরানের পর থেকে টেস্ট দলের সহ-অধিনায়কের ব্যাটে বড় রান নেই। কানপুর টেস্টের দুই ইনিংসে ভাল শুরু করলেও লম্বা সময় ক্রিজে থাকতে পারলেন না। প্রথম ইনিংসে সেট হয়ে যাওয়ার পরেও ৬৩ বলে ৩৫ রানে জেমিসনের ডেলিভারিতে বোল্ড হলেন রাহানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এল মাত্র ৪ রান। এরপরেও কি রাহানে মুম্বই টেস্টের প্রথম একাদশে থাকবেন? উঠছে প্রশ্ন। 

আর এক সিনিয়র চেতেশ্বর পূজারার বাইশ গজে খারাপ সময় চলছেই। দেশের হয়ে শুধু টেস্ট খেললেও নিজের নামের প্রতি মর্যাদা করতে পারছেন না চিন্টু। তাঁর অবস্থাও রাহানের মতো। তিনিও দুই ইনিংসে সেট হয়ে আউট হলেন। প্রথম ইনিংসে ৮৮ বলে ২৬ রানে সাউদি বলে ফেরার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ৩৩ বলে ২২ রান। এ বার তাঁকে আউট করলেন জেমিসন। তবে পূজারাকে টিম ম্যানেজমেন্ট আরও সুযোগ দিতে চায়। সেক্ষেত্রে মুম্বই টেস্টে শ্রেয়স আইয়ারকে খেলানোর জন্য পূজারাকে দিয়ে ওপেন করানো হতে পারে। 

 

ফের ওপেন করতে নেমে দুই ইনিংসে ব্যর্থ ময়ঙ্ক আগরওয়াল। রোহিত শর্মা ও কেএল রাহুল না থাকায় তাঁর কাছে বড় সুযোগ ছিল। তবে পারলেন না এই ডানহাতি ব্যাটার। দুই ইনিংসে তাঁর পাশে রান ১৩ ও ১৭। 

শুভমন গিল ফের একবার ভাল শুরু করলেন। তবে বড় রান করতে আরও একবার ব্যর্থ পঞ্জাব তনয়। প্রথম ইনিংসে ৫২ রান করে বোল্ড হলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তো দাঁড়াতেই পারলেন না। দুই ইনিংসে তাঁর স্টাম্প ছিটকে দিলেন কাইল জেমিসন। 

শেষ বেলায় ভারতের জয়ের মাঝে রুখে দাঁড়ালেন দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত রচিন রবীন্দ্র ও আজাজ প্যাটেল। ৯১ বল খেলে ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকলেন ওয়েলিংটনের ২২ বছরের অলরাউন্ডার। তাঁর ১৮ রানের অপরাজিত ইনিংসই ভারতকে সিরিজে এগিয়ে যেতে দিল না। অন্য়দিকে কঠিন পরিস্থিতিতে রচিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ২৩টি বল তিনি ধরে ধরে খেলে মাত্র ২ রান করে ম্যাচ বাঁচালেন। দিনের শেষে আকাশের অবস্থা বেশ ভাল থাকলেও ৯৮ ওভারের পরেই খেলা শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন মাঠে থাকা দুই আম্পায়ার। সেটা নিয়ে ভারতীয় দলের তরফ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষোভও দেখানো হয়েছিল। 

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত খুব অল্পের জন্য জয় অধরা। তবে কানপুরের গ্রীনপার্ক স্টেডিয়ামের কিউরেটর ও পিচ কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিলেন রাহুল দ্রাবিড়। প্রথম টেস্ট শেষ হওয়ার পর স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর শিভ কুমারের হাতে ৩৫ হাজার টাকার চেক তুলে দিলেন 'দ্যা ওয়াল'। উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার তরফ থেকে এই খবর জানানো হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত টেস্টের পাঁচদিন দুই দলের ব্যাটার ও বোলাররা বাইশগজ থেকে সমান সুবিধা পেয়েছেন। ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলে 'স্পোর্টিং উইকেট'। তাই ম্যাচ শেষ হতেই মাঠকর্মীদের হাতে এই অর্থ তুলে দিলেন দ্রাবিড়।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link