IPL 2021: WT20-এর ১৫ সদস্যের ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের রিপোর্ট কার্ড দেখুন
অধিনায়ক হিসেবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গলোরে এটাই বিরাট কোহলির শেষ বছর। দ্বিতীয় মরসুম শুরু হওয়ার আগেই এই ঘোষণা করেছিলেন কোহলি। সবাই ভেবেছিল নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর খোলা মনে ব্যাট করবেন 'কিং কোহলি'। এখনও পর্যন্ত শেষ সাত ইনিংসে তাঁর রান মাত্র ১৬৮। সঙ্গে রয়েছে দুটি অর্ধ শতরান। স্ট্রাইক রেটও আহামরি নয়। তবে এর আগে তাঁর সামনে প্রথমবার আইপিএল জেতার সুযোগ রয়েছে। সোমবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে তাঁর দল। এর আগে এখনও পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ৩৬৬ রান করেছেন কোহলি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তিনি শেষবার এই ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব করবেন। এ বার দেখার বিশ্বকাপে তিনি কেমন পারফরম্যান্স করেন। কত নম্বরে ব্যাট করে বাইশ গজে তিনি ঝড় তোলেন সেটাও দেখার।
বিরাট কোহলির পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিনিই হবেন অধিনায়ক। তবে পাঁচবারের আইপিএল জয়ী মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও রোহিতের এ বাইরে আইপিএল মোটেও ভাল গেল না। ২০১৮ সালের পর এ বার লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিল মুম্বই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দারুণ ব্যাট করলেও সাদা বলের ক্রিকেটে 'হিট ম্যান' তেমন ছন্দে ছিলেন না। ১৩ ম্যাচে তাঁর রান ৩৮১। এর মধ্যে শেষ ছয় ম্যাচে মাত্র ১৩১ রান করেছেন তিনি। এহেন রোহিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কতটা সাবলীল ভাবে ওপেন করেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব।
তাঁর পঞ্জাব কিংস এ বারও ডাহা ফেল। অধিনয়ক হিসেবেও দাগ কাটতে পারেননি। তবে গত বারের মতো এই বছরেও ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন কেএল রাহুল। ১৩ ম্যাচে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক ৬২৬ রান করেছেন এই ব্যাটার। এরমধ্যে শেষ ছয় ম্যাচে এসেছে ২৯৫ রান। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে দেশের হয়ে আগেও ওপেন করেছেন। তবে এ বার তাঁকে কত নম্বরে ব্যাট করেন সেটাই দেখার।
এই মুহূর্তে বিরাট কোহলি ও কোচ রবি শাস্ত্রীর কাছে সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ফর্ম ও ফিটনেস যেন তাঁর কাছে ইতিহাস। ফিনিশার হিসেবে দলকে সাহায্য করার জন্যই এই অলরাউন্ডারকে দলে নেওয়া হয়েছিল। তবে মাঠের যুদ্ধে একেবারে ব্যর্থ হার্দিক। আর সেটাই চিন্তার কারণ। এ বার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার পর প্রথম দুটি ম্যাচে তাঁকে খেলানো হয়নি। পরবর্তী পাঁচ ম্যাচে মাত্র ৭৫ রান করেছেন হার্দিক। বোঝাই যাচ্ছে তিনি পুরোনো ছন্দে নেই। আর উইকেট নেওয়ার তো প্রশ্নই আসছে না। কারণ এক ওভারও বোলিং করেননি তিনি। তাই তাঁকে দলে রাখা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
আইপিএল-এর ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ অধিনায়ক হিসেবে রবিবার প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলতে নামবেন দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ। একাধিক সিনিয়র ও তারকা বিদেশী থাকলেও ঠান্ডা মাথায় দল পরিচালনা করছেন ২৪ বছরের পন্থ। তবে ব্যাট হাতে এখনও তেমন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেননি। এখনও পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে তাঁর রান ৩৬২। এরমধ্যে শেষ ছয় ম্যাচে মাত্র ১৪৯ রান করেছেন পন্থ। উইকেট ছুড়ে আসার প্রবণতা এখনও দেখা যাচ্ছে। তবে বিশ্বকাপে দলকে সফল হতে গেলে পন্থের ধারাবাহিক হওয়া খুবই প্রয়োজন।
গত কয়েক বছরে তাঁর জন্যই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স সাফল্য পেয়েছে। তবে এ বার দ্বিতীয় পর্বে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। প্রথম ছয় ম্যাচের স্কোর ছিল যথাক্রমে ৩, ৫, ৮, ০, ৩৩ ও ১৩। তবে শেষ ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৪০ বলে ৮২ রান করেন সূর্য। বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়াকে ভাল ফল করতে হলে সূর্যকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই হবে।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিডল অর্ডার নয়, বরং বিরাট কোহলি এই 'ডিনামাইট'কে ওপেনার হিসেবে ভাবছেন। গত বছর আইপিএল-এ দারুণ ব্যাট করার জন্য জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ঝাড়খন্ডের এই তরুণ। টিম ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে চাপিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন ইশান। কিন্তু আইপিএল-এর দ্বিতীয় পর্বে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না তিনি। প্রথম তিন ম্যাচে তাঁর রান ছিল যথাক্রমে ১১,১৪ ও ৯। খারাপ ফর্মের জন্য পরের দুই ম্যাচ তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। তবে শেষ দুই ম্যাচে দলে ফিরে বিস্ফোরক মেজাজে ব্যাট করেছিলেন ইশান। আরসিবি-র বিরুদ্ধে ২৫ বলে ৫০ রান করার পর সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৩২ বলে ৮৪ রান করেছিলেন ইশান। ফলে তিনি ও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এখন অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে।
আইপিএল-এর দ্বিতীয় পর্বে সব ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি এই অলরাউন্ডার। এমনকি সব ম্যাচে পুরো চার ওভার বোলিং করার সুযোগ পাননি জাদেজা। তবে তিনি সবসময় দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এখনও পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ২২৭ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন ১০ উইকেট। কেকেআর-এর বিরুদ্ধে ম্যাচে ৮ বলে ২২ রান করার পাশাপাশি দিল্লির বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন ২৮ রানে ২ উইকেট। রবিবার পন্থের দলের বিরুদ্ধে প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলতে নামবেন চেন্নাই সুপার কিংসের এই অলরাউন্ডার। এই ম্যাচ ছাড়াও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি কেমন পারফর্ম করেন সেটাই দেখার।
দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন 'সহেসপুর এক্সপ্রেস'। ১৪ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে এই মুহর্তে আইপিএল-এর সেরা বোলারদের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন এই জোরে বোলার। এরমধ্যে শেষ ছয় ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেট। নতুন বলে তিনি যেমন বিপক্ষের ব্যাটারদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠেছেন তেমনই ডেথ ওভারেও দারুণ সফল শামি। তাই তাঁর দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বিরাট কোহলি।
এই অভিজ্ঞ জোরে বোলারের উপর জাতীয় নির্বাচক কমিটি ভরসা করলেও নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারছেন না ভুবনেশ্বর কুমার। এখনও পর্যন্ত ১১ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৬ উইকেট। এরমধ্যে দ্বিতীয় পর্বের ছয় ম্যাচে পেয়েছেন ৩ উইকেট। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পারফরম্যান্স তো খারাপ ছিলই, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচের আগে চোট পেয়েছিলেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে এই সুইং বোলার ব্যাটারদের কি পরাস্ত করতে পারবেন? সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।
১৪ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন 'বুম বুম বুমরা'। এরমধ্যে শেষ সাত ম্যাচে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। মুম্বই লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও বুমরা নিজের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ বার তিনি বিশ্বকাপে কতটা মেলে ধরতে পারেন সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব।
দেশের হয়ে ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষবার খেলেছিলেন। এরপর ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে তিনি সুযোগ না পেলেও এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে রয়েছেন অশ্বিন। তবে দিল্লির হয়ে নিজের নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারছেন না। এখনও পর্যন্ত ১১ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৫ উইকেট। এর মধ্যে শেষ ছয় ম্যাচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। কিন্তু উইকেট না নিলেও রান কম খরচ করছেন অশ্বিন। এমনকি লোয়ার অর্ডারে সাবলীল ভাবে ব্যাট করতেও পারেন। বিরাট কোহলি তাঁকে প্রথম একাদশে রাখেন কিনা সেটাই দেখার।
অক্ষর প্যাটেল চলতি আইপিএল-এর দ্বিতীয় পর্বে ছন্দে রয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এখনও পর্যন্ত ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। এরমধ্যে শেষ ছয় ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট। মাঝের ওভারে উইকেট নেওয়ার সঙ্গে বিপক্ষের রানও আটকে দিচ্ছেন। এমনকি ব্যাট হাতেও দলকে সাহায্য করতে পারেন। শেষ ছয় ম্যাচের মধ্যে দুটিতে 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ' হয়েছেন অক্ষর প্যাটেল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা ছন্দে রয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই ক্রিকেটার। এখনও পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছেন এই স্পিনার। এর মধ্যে শেষ সাত ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী। ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আরসিবি-কে ৯২ রানে শেষ করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শোনা যাচ্ছে এই মুহূর্তে হাঁটুর চোটে ভুগছেন। তাই তাঁর ফিটনেস নিয়ে চিন্তিত ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
যুজবেন্দ্র চাহালকে বাদ দিয়ে এমআই-এর লেগ স্পিনারকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তাঁকে চার ম্যাচ খেলানোর পর, প্রথম একাদশ থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে মুম্বই শিবির। সেই চার ম্যাচে মাত্র ২টি উইকেট পেয়েছিলেন। বলও করেছেন খুবই সাদামাটা। তাঁকে আদৌ দলে রাখা উচিত হয়েছে কিনা, সেটা নিয়েই জাতীয় নির্বাচক মন্ডলীর দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।