IPL 2023: আইপিএল-এর ইতিহাসে সেরা এগারো বিতর্কিত ঘটনা! ছবিতে দেখে নিন
২০১৩ সালে রাজস্থান রয়্যালসের তিন ক্রিকেটার শ্রীসন্থ, অঙ্কিত চৌহান ও অজিত চান্ডিলাকে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তিনজনের বিরুদ্ধে স্পট ফিক্সিংয়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। শ্রীসন্থ এক ওভারে ১৪ রান দিয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল সেই ওভারের শুরুতে রুমাল চেয়ে পাঠান শ্রীসন্থ, যার ফলে বুকির কাছে সঙ্কেত যায় যে এই ওভারটিই গড়াপেটা হতে চলেছে। সেই ওভারে শ্রীসন্থ ১৩ রান দেন। শ্রীসন্থের আরও দুই সতীর্থ অঙ্কিত ও অজিতের বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগ তোলা হয়। দীর্ঘ আট বছর নির্বাসনে থাকার পর শ্রীসন্থের উপর নির্বাসন তুলে নেওয়া হয়েছে। কেরলের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন এই জোরে বোলার।
২০১৩ সালের ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্কের পর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে বিসিসিআই। সেখানেই উঠে আসে তদানীন্তন বিসিসিআই সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ মেইয়াপ্পন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচে বেটিং করেছেন। এ দিকে রাজস্থান রয়্যালসের অন্যতম মালিক রাজ কুন্দ্রাও বেটিংয়ে দোষী সাব্যস্ত হন। পরে তিনি নিজের দোষ স্বীকারও করেন। এই ঘটনার জেরে চেন্নাই ও রাজস্থান রয়্যালসকে দুই বছরের জন্য নির্বাসিত করেছিল বোর্ড। ২০১৮ সালে ফের আইপিএল খেলার সুযোগ পেয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই ও রাজস্থান।
২০০৮-২০১১ সাল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে ২০০৮ সালে তৎকালীন কোচ জন বুকাননের 'মাল্টিপল ক্যাপ্টেন্স থিওরি'-র জন্য মহারাজের সঙ্গে তাঁর বিরোধীতা প্রকাশ্যে এসেছিল। এরপরের বছর সৌরভ দলের পূর্ণ দায়িত্ব পেলেও পারফরম্যান্সের উন্নতি হয়নি। ফলে ২০১২ সালের নিলামে বেহালার বাঁহাতি অবিক্রিত রয়ে যান। এরপরেই গোটা বাংলা ও ইডেন গার্ডেন্স চত্ত্বর জুড়ে 'নো দাদা নো কেকেআর' স্লোগান উঠেছিল।
কলকাতা নাইট রাইডার্স ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে ২০১২ সালের ১৬ মে ওয়াংখেড়ের মাঠে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন শাহরুখ খান। অভিযোগ ছিল, ম্যাচ শেষের পরে মদ্যপ শাহরুখ অশ্লীল আচরণ করেন। যদিও শাহরুখের বক্তব্য ছিল, মাঠে থাকা তাঁর বাচ্চা ও পরিজনদের সঙ্গে সঠিক আচরণ করেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। সেটা ঠেকাতেই তিনি মাঠে ঢোকেন। এর ফলে পাঁচবছর শাহরুখের ওয়াংখেড়েতে ঢোকা ব্যান করে দেওয়া হয়।
সালটা ২০১৩। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএল-এর খুনখারাপি ম্যাচে কেকেআর বনাম আরসিবি। ম্যাচের দশ নম্বর ওভারে আউট হয়ে সাজঘরের ফেরার বদলে সেদিন বিরাট কোহলি এগিয়ে গিয়েছিলেন এক্সট্রা কভারের দিকে। যেখানে দাঁড়িয়ে কেকেআর-এর নেতা গৌতম গম্ভীর। বিরাট কিছু একটা বলতেই গম্ভীর তেড়ে যান তাঁর দিকে। পাল্টা মারমুখী হয়ে ওঠেন বিরাটও। কী হচ্ছে বা হতে পারে, তা বুঝতেই সময় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভর্তি দর্শক।
২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে চেন্নাই সুপার কিংসের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৮ রান। শেষ ওভারের প্রথম বলে রবীন্দ্র জাদেজার কাছে ছক্কা খেয়েছিলেন বেন স্টোকস। তবে তৃতীয় বলেই কামব্যাক করেন ইংরেজ অলরাউন্ডার। নিখুঁত ইয়র্কারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ধোনির স্টাম্প। ৫৮ রানে ফিরে যান সিএসকে সেনাপতি। সেই সময় চেন্নাইয়ের জেতার জন্য তিন বলে আট রান দরকার ছিল। মিচেল স্যান্টনারকে করা ওভারের চতুর্থ বল ছিল ফুলটস। আম্পায়ার উল্লাস গান্ধে নো বল দিলেও, দ্রুত তাঁর সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। আর এরপরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। জাদেজা প্রতিবাদ জানানোর সময় দেখা যায় ধোনি মাঠে ঢুকে এসেছেন। মেজাজ হারিয়ে একেবারে হাত-পা নেড়ে দুই আম্পায়ারের সঙ্গে জুড়ে দেন তর্ক। রাগে গজগজ করতে থাকেন 'ক্যাপ্টেন কুল'। তাঁর আচরণের জন্য বন্ধ ছিল ম্যাচ। বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের ভিন্ন রুপ দেখে চমকে উঠেছিল ক্রিকেট বিশ্ব।
গত বছর ২২ এপ্রিল ওয়াংখেড়ে ময়দানে দিল্লি ক্যাপিটালস এবং রাজস্থান রয়্যালস একে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। এই হাই স্কোরিং ম্যাচের শেষ ওভারেই যত বিতর্ক। ওবেদ ম্যাককয়ের এক ফুলটস বল আম্পায়ার নো বল না দেওয়ায় একেবারে ক্ষেপে লাল হয়ে যান ঋষভ পন্থসহ গোটা দিল্লি ডাগআউট। রাজস্থানের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে দিল্লির জয়ের জন্য ৩৬ রান দরকার ছিল। ওভারের প্রথম তিন বলে নাগাড়ে তিনটি ছক্কা হাঁকান রোভম্য়ান পাওয়েল। তবে তৃতীয় বলটি ফুলটসে পাওয়েলে কোমরের উপরের ছিল বলে দিল্লির তরফে দাবি জানানো হলেও, আম্পায়ার তা নো বল দেননি। এক সময় তো ক্ষোভে দল তুলে নিতে উদ্যত হন ঋষভ। এমনকী মাঠের মধ্যেই দিল্লির সহকারী কোচ প্রবীণ আমরেকেও পাঠিয়েও অভিযোগ জানান দিল্লির অধিনায়ক। তবে শেষমেশ লাভের লাভ কিছুই হয়নি। ১৫ রানে ম্যাচ হেরে যায় দিল্লি এবং বলটিকেও নো বল ঘোষণা করা হয়। আম্পায়ারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ও মাঠ থেকে দল তুলে দেওয়ার জন্য ঋষভ, শার্দুল ঠাকুর ও সহকারী কোচ প্রবীণ আমরে-কে নির্বাসিত করা হয়।
২০০৮ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তৃতীয় ম্যাচের শেষে ক্রিকেটাররা হাত মেলানোর সময়ে হরভজন সিং চড় মেরে বসেন শ্রীসন্থকে। ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী শ্রীসন্থ কোনওরকম প্ররোচনাও দেননি। হরভজন তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ শ্রীসন্থকে চড় মেরে বাকীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে যান। এই ঘটনায় প্রকাশ্যে ফেলেন শ্রীসন্থ। সেই ঘটনার পরে হরভজনকে বাকী আইপিএলের জন্য ব্যান করে দেওয়া হয়। এই ব্যানের বিরুদ্ধে কোনওরকম আবেদনও জানাননি হরভজন। বলা যেতে পারে আইপিএল-এর উদ্বোধনী বছরের সবচেয়ে বড় বিতর্কিত ঘটনা ছিল সেটাই।
আইপিএল যার মস্তিষ্কপ্রসূত, সেই ললিত মোদীকে ২০১০ সালে আইপিএল কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে এখনও তদন্ত চলছে। ললিতকে সরানোর পরে বিসিসিআই তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, বিডিংয়ের সময়ে রিগিং করেছিলেন ললিত মোদী। এরপরে ২০১৩ সালে ললিতকে বিসিসিআই থেকে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি সেই ঘটনার পর থেকে আর দেশেও ফিরে আসেননি ললিত মোদী।
২০১৯ সালের আইপিএল-এ সেটাই ছিল অন্যতম বড় বিতর্ক। রবিচন্দ্রন অশ্বিন বল করার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান জশ বাটলার। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে স্টাম্প ভেঙে দিয়েছিলেন তৎকালীন পঞ্জাব কিংসে খেলা এই অফ স্পিনার। দুই ক্রিকেটার তীব্র কথাকাটাকাটিতেও জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা অবাক হলেও নিয়ম মেনে বাটলারকে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়। সেই আউট নিয়ে অনেক বির্তক হয়েছিল। অশ্বিনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন একাধিক ক্রিকেট বিশেষঙ্গ। তবে বিতর্কে জড়ালেও বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক প্রাক্তনকে পাশে পেয়েছিলেন অশ্বিন। তবে এ বারের আইপিএল শুরু হওয়ার আগে অশ্বিন ও ক্রিকেট দুনিয়ার অন্য বোলাররা স্বস্তি পেয়েছেন। কারণ এই বহু বিতর্কিত 'মানকেডিং'-এর অবলুপ্তি ঘটিয়েছে এমসিসি।
গত আইপিএল-এ কলকাতা বনাম দিল্লির ম্যাচের মাঝে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন অইন মর্গ্যান এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সে সময় দুই ক্রিকেটাদের বাদানুবাদে মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসেন দীনেশ কার্তিক। দিল্লির ইনিংসের শেষ ওভারে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে আউট হন অশ্বিন। ফেরার সময় কেকেআর বোলার টিম সাউদির উদ্দেশে কিছু বলেন। সেই শুনেই মর্গ্যান এগিয়ে আসেন এবং পাল্টা উত্তর দেন অশ্বিনকে। অশ্বিনও ছাড়াও পাত্র নন। তিনিও প্রত্যুত্তর দেন মর্গ্যানকে। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। এমন সময় কার্তিক এসে সামাল দেন। দুই ক্রিকেটারকেই সরিয়ে দেন তিনি। তবে বিতর্ক সেখানেই থামেনি। ম্যাচের শেষে অশ্বিনকে খোঁচা দিয়ে ট্যুইট করেছিলেন মর্গ্যান। এর জবাবে লাগাতার ছয়টা ট্যুইট করে পাল্টা দিয়েছিলেন অশ্বিন।