``ইরফান ও ছেলে বাবিলকে যদি আরও একবার উত্তরবঙ্গে যেতে পারতাম...``আফসোস স্ত্রী সুতপার
ইরফান খানের মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা মাস। তবুও তাঁর পরিবার ও ভক্তদের কাছে ইরফানের স্মৃতি এখনও টাটকা। মাঝে মধ্যেই ইরফানের নানান ছবি ও বিভিন্ন স্মৃতি উঠে আসে তাঁর স্মৃতি সুতপা শিকদার ও ছেলে বাবিল খানের লেখায়।
সম্প্রতি স্বামীর স্মৃতিতে বেশ কিছু কথা নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন সুতপা শিকদার। আফশোস করেছেন, শেষবারের মতো ইরফান ও ছেলে বাবিলের সঙ্গে যদি উত্তরবঙ্গের তিস্তাপারে যেতে পারতেন...
উত্তরবঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইরফানের স্ত্রী সুতপা শিকদারের ছোটবেলা। তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ''উত্তরবঙ্গের সেই দিনগুলি এখনও নস্টালজিক করে তোলে। যদি সমুদ্রের কাছে না থেকে নদীর কাছে থাকতে পারতাম...। বৃষ্টি আর ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ আমায় সেই পুরনো দিনগুলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আপনারা যাঁরা জানেন না, তাঁদের বলি, উত্তরবঙ্গ বলতে পশ্চিমবঙ্গ বোঝায় না। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, সেই অসাধারণ তিস্তা। তিস্তা শুধু নদী নয়, একটা কাহিনী। ''
সুতপা আরও লিখেছেন, ''উত্তরবঙ্গ, যেখানে অরণ্যের সুবাস, আদ্রতায় ঢাকা পড়ে। জঙ্গলের মধ্যের রাস্তা দিয়ে যখন যাবেন, তখন গাড়িটা ধীর করে দিন, ভয়ের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করে অপেক্ষা করুন, হাতিরা নিজস্ব গতিতে রাস্তা পার করবে। বাতাসে যখন ভালোবাসা ও উষ্ণতা মাখা রয়েছে, তখন জানবেন আপনি একটা বিশেষ জায়গায় রয়েছেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে দূরে চাবাগান, নদী, আর ঝর্ণা...''
ইরফানের স্ত্রী আরও লিখেছেন, ''গরমের ছুটিতে উত্তরবঙ্গে কাটতো। নদীর ধারে থাকা সেই বড় বড় পাথর। সেখানে বসে বিশ্রাম নেওয়া। সেই পাথরে প্রেমিকের হাত ধরে চুপচাপ বসে থাকা, আর সামনে দিয়ে বয়ে চলা সেই নদী, আর বাতাসে ভেসে আসা কোনও ফুলের গন্ধ... ''
সুতপা লিখেছেন, ''আমার জীবনের অর্ধেকটা সময় আমি দিল্লিতে কাটিয়েছি, তারপর মুম্বই, তবে দিল্লি আমায় সেই উত্তরবঙ্গে কাটানো শৈশবের আদ্রতা দিতে পারেনি। উত্তরবঙ্গের সেই স্মৃতি আমি চিরকাল আঁকড়ে থাকতে চেয়েছি। আমি চোখ বন্ধ করলে এখনও উত্তরবঙ্গে চলে যেতে পারি। ''
সুতপা লিখেছেন, ''১৯৯৫-এর আগে আমি কখনও মুম্বই আসিনি। তাই এখানে বৃষ্টি ভেজা নারকেল গাছ দেখলে আমার উত্তরবঙ্গের সেই অরণ্যে গন্ধ পাই। মুম্বই থেকে কোঙ্কনের দিকে গাড়ি চালিয়ে গেলেও আমার উত্তরবঙ্গের কথা মনে পড়ে। ''
সুতপা লিখেছেন, ''আমি সবসময় আমার সঙ্গীকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে যেতে চেয়েছি। ১৯৯৭ সালে মুম্বই আমার সেই ইচ্ছা কিছু পূরণ করেছে। তবে তিস্তা কী সেটা আমার সঙ্গীকে বোঝানোর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছিল। বারবার পরিকল্পনা করেও যাওয়া হচ্ছিল না, অবশেষে সেটা হয়েছিল।''
২০১৭তে আমাদের প্রযোজনা সংস্থার ছবি করিব করিব সিঙ্গল এর জন্য। যার নায়ক ছিল ইরফান আর ছিল আমাদের ছেলে বাবিল। আমরা উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলাম। এর থেকে আমার কাছে আর বড় কী হতে পাকে। আমি ঠিক যেমন ভেবেছিলাম, ওর প্রতিক্রিয়াও তেমনই ছিল। এই গল্প আবারও কখনও... ''
''ইরফান ও ছেলে বাবিলকে যদি আরও একবার উত্তরবঙ্গে যেতে পারতাম...'' কিছুটা আফসোসের সুরে লিখেছেন সুতপা শিকদার।