Jagaddhatri Puja: দেবীর আদেশ পেয়েই চন্দননগরের গঙ্গাপাড়ে সেদিন নৌকা থামালেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র...
একবার মুর্শিদাবাদের নবাবের কাছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কর বাকি পড়ে। করবাবদ দেয় অর্থ নবাবকে দিতে রাজা অক্ষম হলে নবাব রাজাকে বন্দি করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যান। কারাবন্দী থাকায় সেবছর দুর্গাপুজো করতে পারেননি রাজা। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পরে বিজয়া দশমীর দিনে ফেরার পথে নৌকায় ঘুমিয়ে পড়েন এবং সিংহবাহনা এক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান।
কী আদেশ? কার্তিক শুক্লা নবমীতে সিংহবাহনা ওই দেবী (জগদ্ধাত্রী)-র পুজোর আয়োজন করতে নির্দেশ পান রাজা। স্বপ্নাদেশমতো কৃষ্ণনগরে ফিরে ওই তিথিতে সিংহবাহনা দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজোর আয়োজন করতে শুরু করেন কৃষ্ণচন্দ্র।
তবে, অন্য একটি মতও প্রচলিত। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরেই রাজা দেখেন তাঁর হাতে বেশি সময় নেই। ফলে, চন্দননগরের গঙ্গাপাড়ের চাউলপট্টি এলাকায় নৌকা থামিয়ে পুজোর আয়োজন করতে শুরু করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। সঙ্গে থাকেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী।
এই ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর পরিচয় দিতে হয় এখানে। ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ওই অঞ্চলের তৎকালীন শাসক ফরাসিদের দেওয়ান ছিলেন। খুবই প্রভাবপ্রতিপত্তিসম্পন্ন হোমরা-চোমরা ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। সুতরাং, চাউলপট্টিতে সেদিন দুই বন্ধু মিলে শুরু করলেন জগদ্ধাত্রীর পুজো।
আরেকটি মত বলে, গৌরহাটি অঞ্চলে দাতারাম শূর ছিলেন নবাবের দেওয়ান। তাঁর মেয়ে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। পরে সেই পুজো গৌরহাটি অঞ্চলের বাসিন্দাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়। দিনে দিনে এই পুজো 'আদি মা' নামে পরিচিত হয়।
প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই সকলে মিলে করেন চাউলপট্টির 'আদি মা'য়ের পুজো। চার দিনব্যাপী চলে দেবী হৈমন্তিকার আরাধনা। পুজোর নৈবেদ্যে যে সমস্ত ফল দেওয়া হয় পুজোর পরে তা প্রসাদ হিসেবে গরিব দুঃস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়। কিছু আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিতে রোগীদের দেওয়া হয়।
এখানে সপ্তমীতে হয় ২০০ কিলো চালের ভোগ, অষ্টমীতে ৩০০ কিলো চালের খিচুড়ি ভোগ। নবমীতে পাঁচশো কিলো চালের পোলাও, একশো কিলো চালের পায়েস। বিনা পয়সায় সেই ভোগ বিলি করা হয়। এ পুজোয় এখনও হয়ে থাকে-- ধুনো পোড়া, ছাগবলি, দন্ডি কাটা। যাঁরা মানসিক করেন তাঁরা বুক চিরে রক্ত দেন।