Jagannath Tarka Panchanan: রবার্ট ক্লাইভ তাঁর কাছে সংস্কৃত শিখেছেন!
এই মানুষটিই নাকি ত্রিবেণীতে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন! ১৩, না ২৩-- এই নিয়ে একটু ধন্দ আছে। মোট কথা, এই সেপ্টেম্বরেই জন্ম অধুনা-বিস্মৃত কিন্তু একদা স্মরণীয়-বরণীয় সেই বিশিষ্ট বাঙালি জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের। শ্রুতিধর এই পণ্ডিতের ১৬৯৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হুগলীর ত্রিবেণীতে জন্ম।
বাবা রুদ্রদেব তর্কবাগীশ ও জ্যাঠামশায় ভবদেব ন্যায়ালঙ্কারের কাছে ব্যাকরণ ও স্মৃতিশাস্ত্র শিক্ষা তাঁর। অতি অল্প বয়সে মুখে মুখেই ব্যকরণের সূত্রগুলি শিখে ফেলেছিলেন। পরে রঘুদেব বাচষ্পতির কাছে আইনের পাঠ নেন। পরে ত্রিবেণীতে নিজে টোল খোলেন।
তাঁর অসামান্য স্মৃতিশক্তি প্রায় প্রবাদের পরিণত। সেযুগে নবদ্বীপ সংস্কৃত চর্চা ও বিদ্যার পীঠস্থান হলেও ত্রিবেণীর জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন ছিলেন পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ, যিনি নবদ্বীপের খ্যাতি একাই ম্লান করে দিতে পারতেন, দিয়েছিলেনও।
তবে তাঁর পরাজয়ের কাহিনিও আছে। একবার মহারাজ নবকৃষ্ণ দেব আয়োজিত সভায় এক নৈয়ায়িক দিগবিজয়ের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন নবদ্বীপের পণ্ডিতমণ্ডলীর নৈয়ায়িক শিবনাথ বিদ্যাবাচস্পতি। ছিলেন জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননও। কিন্তু কেউই আগত সেই নৈয়ায়িকের সঙ্গে যুক্তিতে পেরে ওঠেননি। তখন নবদ্বীপেরই আর এক পণ্ডিত বুনো রামনাথ সেখানে উপস্থিত হন। তিনিই যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সেই অতিথি তার্কিককে পরাজিত করে নবদ্বীপের মুখরক্ষা করেছিলেন।
ইংরেজরা ১৭৬৫ সালে বাংলার দেওয়ানি লাভ করলে দেশীয় বিচার পদ্ধতি ও আইন প্রণয়নের জন্যে জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের শরণাপন্ন হয়েছিল। 'অষ্টাদশ বিবাদের বিচার' তাঁর রচনা। তাঁর বিশেষ কীর্তি ন্যায় বিষয়ক 'বিবাদ ভঙ্গার্নব'। তত্কালীন হিন্দু দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থা এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমেই করা হত। নব্যন্যায়ের উপরও নানা লেখা ছিল তাঁর।
মেদিনীপুরের মহারাজ নন্দকুমার থেকে শুরু করে শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়, বর্ধমানরাজ কীর্তিচন্দ্র ছিলেন তাঁর গুণগ্রাহী। রবার্ট ক্লাইভ তাঁর কাছে সংস্কৃত শিখেছেন। এ ছাড়াও লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, হার্ডিঞ্জ, কোলব্রুক এবং এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোন্সের সঙ্গে তাঁর বিশেষ হৃদ্যতা ছিল। প্রাচ্য সংস্কৃতি বিশারদ সুপণ্ডিত জোনস বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহ করতে তাঁর কাছে যেতেন। সদর দেওয়ানি আদালতের প্রধান বিচারপতি হ্যারিংটন ছিলেন জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের অন্যতম সুহৃদ।
প্রথম সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হলে তাঁকেই প্রধান পণ্ডিতের পদে আহ্বান করা হয়েছিল। তিনি সেই পদ গ্রহণে অস্বীকৃত হলে তাঁর পৌত্র ঘনশ্যাম এই পদে আসীন হন।