Mallika Sarabhai: দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ থেকে ভীমের দুর্যোধন বধ! `নৃত্যগাথা`-য় চাঁদের হাট!...
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কলকাতা বরাবরই সংষ্কৃতির পীঠস্থান। এই সংষ্কৃতির নতুন সংযোজন 'নৃত্যগাথা'। তিন বছরে পড়ল ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের এই ফেস্টিভ্যাল। ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং জে এল মেহতা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবারের 'নৃত্যগাথা'-য় চাঁদের হাট। মল্লিকা সারাভাই, শোভনা, অরুণা মহান্তিদের মতো দিকপাল নৃত্যশিল্পীদের অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য মিলল কলকাতার। তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে ছিল না কোনও প্রবেশমূল্য। শুধুমাত্র ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্যই ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং জে এল ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ। তাঁদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ।
প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে ছিল বিশিষ্ট ওড়িশি নৃত্যশিল্পী অরুণা মহান্তির গ্রুপের অনুষ্ঠান। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ,ভীমের দুর্যোধন বধ-- এইরকম টুকরো টুকরো মহাভারতের কাহিনি উঠে এসেছে ওড়িশি নৃত্যের ছন্দে। দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে এই পরিবেশনা। তবে প্রথম দিনের মূল আকর্ষণ ছিলেন মল্লিকা সারাভাই। তিনি স্টেজে এলেন, নাচলেন, মানুষের মন জয় করে নিয়ে চলে গেলেন। এক অনন্য নৃত্যকলার সাক্ষী থাকল কলকাতা।
মল্লিকা তাঁর পরিবেশনার নাম দিয়েছেন 'পাস্ট ফরওয়ার্ড'। চিন্তা-ভাবনার এক অভিনব মিশেল এই পরিবেশনা। ভারতনাট্যম নৃত্যের যেমন যুগ যুগ ধরে তার ফর্ম, স্টাইল ধীরে ধীরে পাল্টেছে, তেমনি ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থানও বদলেছে। পুরুষের চোখে,সমাজের চোখে নারীদের ভূমিকা কী ভাবে বদলেছে তা তিনি ভারতনাট্যমের ধারার বদলের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে এক অভূতপূর্ব আধুনিক পরিবেশনা তুলে ধরলেন। এই পরিবেশনায় যেমন ছিল পৌরাণিক কাহিনি, তেমন ছিল 'গাল্লি বয়'-এর রাপ গানের ধ্রুপদী সংস্করন। ওঁর প্রতিটা মুদ্রায় ফুটে উঠেছে নারীর যন্ত্রনা, লাঞ্ছনা।
মল্লিকা তাই সোচ্চার, তিনি স্টেজ থেকে মুক্ত কন্ঠে ডাক দিয়েছেন, 'আমাদের জাগতে হবে।এখনও এই সমাজে একটা মেয়ের বড় হয়ে ওঠা একটা ছেলের থেকে অনেক আলাদা। আমাদের মায়েরা, নিজেরা মেয়ে হয়েও তাদের ছেলে সন্তানদের যে স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেন, মেয়ে সন্তানদের বেলায় তারা খুবই রক্ষনশীল। এটা ভাঙতে হবে। আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে।'
কলকাতা বরাবরই মল্লিকার কাছে স্পেশ্যাল। জীবনের প্রথম অনুষ্ঠান এই কলকাতায়, মায়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের 'চন্ডালিকা' করতে এসেছিলেন ছোট মল্লিকা। মা ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের শিষ্যা, বাবা দিকপাল বিজ্ঞানী। মায়ের মত রবীন্দ্রনাথই মল্লিকার অনুপ্রেরণা। প্রথম গান শেখা, সেটাও রবি ঠাকুরের গান--'মধু গন্ধে ভরা'। তাই কলকাতার কাছে বার বার ফিরে আসেন পদ্মভূষণ মল্লিকা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে ছিল শোভনার ভারতনাট্যম। শোভনা নিজে একজন অভিনেত্রীও বটে। ওঁর অনুষ্ঠান মন ভরিয়ে দিয়েছে দর্শকের। শেষদিন শুভজিত দাসের 'মনসা' এবং জলসা চন্দ্র পারফর্মিং ট্রুপের "অগ্নি--দ্য বার্ড অফ ফায়ার' ছিল 'নৃত্যগাথা'-র অন্যতম সেরা পরিবেশনা। এই তিন বছরেই মানুষের মনে ছাপ ফেলেছে ভারতীয় বিদ্যাভবন আয়োজিত এই 'নৃত্যগাথা'। অপেক্ষা আবার আরেকটা বছরের।