কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর এবার মাত্র ৩ ঘণ্টায়, বড়দিনের আগেই চালু হচ্ছে জাহাজ
অয়ন ঘোষাল: গঙ্গাপথে এবার জাহাজে করে গঙ্গাসাগর পাড়ি। বড়দিনের আগেই শুরু হয়ে যাচ্ছে কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস। বিলাসবহুল জাহাজে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা কলকাতা থেকে পৌঁছে যাবেন গঙ্গাসাগরে। রোজ সকাল ৭ টায় মিলেনিয়াম পার্কের ঘাট থেকে এই জাহাজ ছাড়বে। সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে পৌঁছে যাবে জাহাজ। মাঝে সুন্দরবনগামী পর্যটকদের পৌঁছে দেওয়া হবে নামখানায়।
এখন গঙ্গাসাগর যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে অথবা সড়কপথে প্রথমে কাকদ্বীপের লট এইটের ঘাটে পৌঁছতে হয়। সেখান থেকে ভেসেলে অথবা লঞ্চে মুড়িগঙ্গা পেরিয়ে যেতে হয় সাগরের কচুবেড়িয়ায়। সেখান থেকে আরও কিছুটা পথ পেরিয়ে গঙ্গাসাগর কপিল মুনির আশ্রম। গড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। নদীতে ভাটা থাকলে সেটা কখনও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টাও হয়ে যায়।
কিন্তু জাহাজে করে মিলেনিয়াম পার্ক থেকে গঙ্গাসাগর মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় সাগরে পৌঁছে যাওয়া যাবে। ফিরতি পথে কচুবেড়িয়া থেকে জাহাজ ছাড়বে বিকেল ৩টে থেকে ৪টের মধ্যে। সন্ধে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে জাহাজ পৌঁছে যাবে কলকাতায়। সপ্তাহে ৭ দিনই এই পরিষেবা মিলবে। মাথাপিছু খরচ মাত্র ১০০০ টাকা। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই চালু হয়ে যাবে এই পরিষেবা। কলকাতারই এক বাঙালি মেরিন ক্যাপ্টেন মুম্বইয়ের একটি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এই জাহাজ পরিষেবা চালু করছেন। ইতিমধ্যেই এই ফেরি সার্ভিস নিয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে রাজ্য পরিবহন দফতর।
পরিবহন দফতরের কর্তারা বলছেন, বাংলাকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। গঙ্গাসাগর সহ রাজ্যের প্রায় সব পর্যটনস্থলকেই নতুনভাবে সাজানো শুরু হয়েছে। ট্যুর অপারেটরদের বৃহত্তম সংগঠন ‘দি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটর’-এর বার্ষিক সম্মেলনে সম্প্রতি রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন দেশ-বিদেশের নামকরা ট্যুর অপারেটররা। এখন বাংলায় পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ ক্রমশ উজ্জ্বল হওয়ায় এবার কলকাতা ও গঙ্গাসাগরের মধ্যে বিলাসবহুল জাহাজ সার্ভিস শুরু করতে এগিয়ে আসছে সংস্থাগুলি।
যে বাঙালি মেরিন ক্যাপ্টেনের উদ্যোগে এই পরিষেবা চালু হচ্ছে, তাঁর নাম অঞ্জন সিনহা। বর্তমানে ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার মুখ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা তিনি। অঞ্জন সিনহা জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগরের মধ্যে নদীপথে যাত্রী পরিবহনের জন্য মালয়েশিয়া থেকে একটি বিলাসবহুল জাহাজ আনছেন তাঁরা। তাতে ১৫৬টি আসন রয়েছে। জাহাজটি পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য জাহাজে টিভি ছাড়াও থাকছে দুটো বড় স্ক্রিন। যাতে সিনেমা দেখানো হবে। জাহাজের গড় গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। যাত্রীদের শুকনো খাবার ও মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হবে। জাহাজের মধ্যে শৌচাগারও রয়েছে। জাহাজের মাত্র ১.২ মিটার জলের তলায় থাকবে। তাই নদীপথে এই জাহাজ চলাচলে কোনও অসুবিধে হবে না। গত ৫ নভেম্বর জাহাজ কেনার বিষয়ে মালয়েশিয়ার সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।