Kshirgram Jogadya Temple: হনুমানই পাতাল থেকে দেবীকে নিয়ে এসেছিলেন বাংলার এই গ্রামে...
বলা হয়, এখানে দেবীর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি পড়েছে। এখানে যে-দেবীমূর্তি তা কষ্টি পাথরের তৈরি, রূপে তা মহিষাসুরমর্দিনী।
ক্ষীরগ্রামের মা যোগাদ্যা সম্পর্কে বহু পৌরাণিক কাহিনি ও জনশ্রুতি আছে। যখন রাম-রাবণের যুদ্ধ চলছে তখন রাবণপুত্র মহিরাবণ, রাম ও লক্ষণকে তাঁর আরাধ্যা দেবী ভদ্রকালীর কাছে বলি দেওয়ার জন্য পাতালে বন্দি করেছিল। সেখানে মহিরাবণ বধের পর হনুমান, রাম ও লক্ষণকে সঙ্গে নিয়ে পাতাল থেকে বেরোতে উদ্যোগী হলে মা ভদ্রকালী নাকি বলেছিলেন--তোমরা তো চলে যাচ্ছ, আমাকে এখানে একা ফেলে গেলে তো হবে না। আমাকে পৃথিবীর মধ্যস্থল যেখানে, সেখানে নিয়ে চলো! হনুমান সুড়ঙ্গপথে রাম-লক্ষণকে ও মা ভদ্রকালীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এই ক্ষীরগ্রামে।
বহু কাল আগে মা যোগাদ্যার পুজোয় নরবলি প্রচলিত ছিল। কথিত আছে, দেবীর নির্দেশেই বন্ধ হয় সেই নরবলি। তার পরিবর্তে মহিষবলি শুরু হয় এখানে।
এখানে দেবী সারা বছর ক্ষীরদীঘির জলে নিমজ্জিত থাকেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে দেবীকে জল থেকে তুলে পুজো করা হয়। তবে বৈশাখী সংক্রান্তির দিন সমস্ত সাধারণ মানুষ দেবীর দর্শন পান।
এদিন ভোরবেলায় মা'কে জল থেকে তোলা হয়। ক্ষীরদীঘির পারের সুসজ্জিত মন্দিরে মায়ের প্রথম পুজো হয়। এর পর ক্ষীরদীঘি থেকে একটু দূরে মায়ের মন্দিরে মা কে রেখে সারা দিন ধরে মায়ের পুজো, বলি ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন অগণিত দর্শনার্থী মায়ের দর্শন করেন পুজো দেন। রাত পর্যন্ত চলে পুজো। রাতে পুজো শেষ করে পুনরায় জলে নেমে যান মা যোগাদ্যা। পরে জ্যৈষ্ঠ মাসের ৪ তারিখে বিকেলে মা আবার জল থেকে ওঠেন। এদিন ক্ষীর দীঘির পারের মন্দিরেই মায়ের পুজো ও বলি হয়। এই দিনও হাজার-হাজার দর্শনার্থী ভিড় করেন মন্দির-চত্বরে। রাতে অভিষেক ও বিশেষ পূজার্চনার পরে দেবী পুনরায় জলে চলে যান।
কী ভাবে পৌঁছবেন এই সতীপীঠ ক্ষীরগ্রামে? হাওড়া-কাটোয়া, শিয়ালদা-কাটোয়া রুটের যে কোনও ট্রেন ধরে কাটোয়া পৌঁছে কাটোয়া থেকে বর্ধমানগামী ট্রেন অথবা বাসে করে কৈচর স্টেশন অথবা কৈচর বাসস্ট্যান্ডের নামুন। বর্ধমান থেকেও ট্রেনে অথবা বাসে কৈচর পৌঁছতে পারেন। বাসস্ট্যান্ড বা স্টেশন থেকে টোটো ধরে পৌঁছে যান সতীপীঠ ক্ষীরগ্রামে।
এখানে আপনি রাত্রিবাসও করতে পারেন। ক্ষীরদীঘির পারে মায়ের নতুন মন্দিরের সন্নিকটেই আছে যোগাদ্যা গেস্ট হাউস। মনোরম পরিবেশে এসি , নন-এসি দুধরনের ঘরই ভাড়া পাবেন। দুপুরে নতুন ও পুরনো দুই মন্দিরেই কুপন কেটে মায়ের ভোগ প্রসাদ পাওয়া যায়।