কোন নিষিদ্ধ যৌনতার মৌতাতে সেদিন শিউরে উঠেছিল রক্ষণশীলতা?
১৯২৮ সালের আইন সংশোধন করে ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ রয় জেনকিন্স অশ্লীলতা প্রতিরোধ আইন বিল আনলেন সংসদে। এই আইনে বলা হল-- একটি লেখা বা ছবি তখনই অশ্লীল বলে পরিগণিত হবে যখন তা আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে মানুষকে কুপথে চালিত করবে। তবে কোনও বই যদি সাহিত্যগুণসমৃদ্ধ হয়, তা হলে তাকে অশ্লীলতা আইনে ফেলা যাবে না। আশ্চর্য যে, মাত্র এক বছরের মধ্যেই এই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবে বিশ শতকের অন্যতম বিতর্কিত এক ইংরেজি উপন্যাস।
সেই কুখ্যাত বা বিখ্যাত বইটি হল— ‘লেডি চ্যাটার্লি’জ লাভার’। ডেভিড হার্বার্ট লরেন্স তথা ডি.এইচ. লরেন্স লিখেছিলেন ১৯২৮ সালে। যথারীতি এটি অশ্লীলতার দায়ে পড়ে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৫৯ সালের ওই সংশোধিত আইনের বলে এটি আবার দিনের আলো দেখতে পায়।
পেঙ্গুইন পেপারব্যাক’ এই আইনের ফাঁকটাই ব্যবহার করল। লরেন্সের স্বদেশ ব্রিটেনে তারা পুনঃপ্রকাশ করল বিতর্কিত উপন্যাস ‘লেডি চ্যাটার্লি’জ লাভার’। এর ঠিক আগে আমেরিকা আইনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিয়েছে বইটিকে। অতলান্তিক মহাসাগরের ওপারে ‘লেডি চ্যাটার্লি’ আর নিষিদ্ধ নয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল, স্বয়ং লরেন্স এটি দেখে যেতে পারেননি। কেননা, ১৯৩০ সালেই মারা যান তিনি।
কী আছে তাঁর বহু বিতর্কি এ বইতে, কেন তা নিষিদ্ধ, কোন নিষিদ্ধ জগতের হাতছানিতে কেঁপে উঠেছিল রক্ষণশীল সমাজ? অভিজাত বিবাহিত এক মহিলার সঙ্গে এক পুরুষের উদ্দাম, বাঁধনছাড়া প্রেমই লরেন্সের এই উপন্যাসের উপজীব্য।
স্টোরিলাইনটা অতি সংক্ষেপে এরকম: উচ্চবংশীয় স্যর ক্লিফোর্ড চ্যাটার্লি সুদর্শন সুপুরুষ, কিন্তু যুদ্ধে আহত হয়ে পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। তাঁর সুন্দরী স্ত্রী কনস্ট্যান্স রিড তথা লেডি চ্যাটার্লির সঙ্গে ক্রমশ তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। দূরত্ব শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও। এদিকে নিঃসঙ্গ লেডি চ্যাটার্লি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাঁদেরই এস্টেটের কর্মী উদ্যানরক্ষক অলিভার মেলর্সের সঙ্গে। আর তাঁদের প্রেম ও যৌনতার বিবরণেই তপ্ত এই উপন্য়াসের পাতার পাতা। সেই সময়ের নিরিখে যা অনেকটাই এগিয়েছিল।