পিসি-ভাইপো মিলে বাংলাকে লুঠছে, ব্রিগেডে মোদীর ভাষণ দেখে নিন ১৫টি পয়েন্টে
শিলিগুড়ির মতো ব্রিগে়ডেও বাংলায় ভাষণ শুরু করেন মোদী। জানতে চান, ''আপনারা কেমন আছেন?'' এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যাপতি, রবীন্দ্রনাথের লেখনী এবং ক্ষুদিরাম বোস, শ্রী অরবিন্দ, সূর্য সেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিপ্লবকে প্রাণ দিয়েছেন। বিপ্লব ও কবিতার মেলবন্ধন ঘটতে চলেছে নতুন ভারতে।
এমন ভিড় দেখেনি ব্রিগেড। যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। আপনাদের বেশি সময় নেব না। কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন আপনারা। আপনাদের ভালবাসা আমি মাথায় করে রাখব। আপনারা যে ভালবাসা দিচ্ছেন, সুদসমেত উন্নয়ন করে ফেরত দেব।
কলকাতা, হাওড়া, দমদম, যাদবপুর, বারাসত-সহ বাংলার প্রতিটি কোণ থেকে গত পাঁচবছর ধরে এই চৌকিদারের শক্তি বাড়িয়েছেন। তার পরিণাম, আজ আপনার সামনে বিনয়ের সঙ্গে আমার রিপোর্ট কার্ড নিয়ে হাজির হয়েছি।
আপনারা পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে গোটা বিশ্বে ভারতের জয়জয়কার হচ্ছে। আপনাদের অংশিদারিত্বের জন্য আজ ভারত যা করছে, তার স্বপ্ন দেখতাম আমরা। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক বা মহাকাশে স্ট্রাইক হোক, মহাশক্তি হয়ে উঠছে ভারত। গোটা দুনিয়া দেখছে এটা। মেক ইন ইন্ডিয়া বা ডিজিটাল ইন্ডিয়া হোক বা কলকাতা থেকে বারাণসী পর্যন্ত গঙ্গাপথ হোক, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন ভারতের বুনিয়াদ তৈরি হয়েছে। পাঁচবছরের মধ্যে এসব কার জন্য হয়েছে? এটা কেন সম্ভব হয়েছে? এইসব মোদী করেননি। এগুলো আপনাদের আশীর্বাদের জন্য হয়েছে। আপনাদের জন্য অসম্ভবও এখন সম্ভব হয়ে গিয়েছে।
স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নের ভারত তৈরি করতে এগিয়ে চলছি। ঠিক তখনই মোদীর বিরোধিতা করতে গিয়ে মা ভারতীর বিরোধিতা করছেন অনেকে। এয়ার স্ট্রাইকের প্রমাণ কারা চাইছিল? সন্ত্রাসবাদীদের মৃতদেহ দেখাও, কারা জিজ্ঞেস করেছিল? এটা পুলওয়ামায় শহিদ বাবুল সাঁতরার অপমান নয় কি? উপগ্রহ ধ্বংস করে আমরা দুনিয়ার চতুর্থ শক্তি হয়েছি। আপনারা গর্বিত কিনা! কিন্তু এত বড় ঐতিহাসিক ঘটনাকে নাটক কে বলেছিল? আপনার এই চৌকিদার যা পাঁচবছর ধরে করছে, তা পাঁচবছরে এসেছে এমনটা নয়। আমাদের জওয়ানদের এয়ার স্ট্রাইক ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ক্ষমতা আগেও ছিল। মহাকাশে উপগ্রহ ধ্বংস করার ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের আগেও ছিল। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা ছিল না। দেশহিতের আগে নিজের স্বার্থ থাকলে এমনটাই হয়।
দিদি আর ওনার সঙ্গীরা দেশবিরোধী কথাবার্তা বলছেন, কারণ ওনাদের রাজনৈতিক জমি টলে গিয়েছে। কাল কংগ্রেস একটা ভুয়ো-ইস্তাহার জারি করেছে, এই ইস্তাহারে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেনার সুরক্ষাকবচ হঠিয়ে দেবেন। ৬০ বছর দেশের ক্ষমতায় ছিল, তারা এমনটা করছে। কংগ্রেস এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেগুলি পাকিস্তানে বসে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের সহযোগিতা করবে। দেশে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছে ওরা। তোষণের রাজনীতির জন্য সন্ত্রাসবাদের প্রতি নরম অবস্থান নিয়েছে কংগ্রেস। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন কারা হঠিয়েছে? কংগ্রেস। দেশে নকশাল ও মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নামে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওরা।
বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের পাপে ভাগীদার এই তৃণমূলও। এরা সকলেই নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের বিরোধিতা করেছে। আমরাও আইন বিলুপ্ত করেছি তবে তা মানুষের ভাল করার জন্য। কংগ্রেস বীর জওয়ানদের মনোবল ভাঙতে চাইছে। দেশের সুরক্ষার মাঝে একটা দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে এই চৌকিদার। কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না মোদী।
ভুয়ো-ইস্তাহারের এক্সপায়ারি ডেট শুরুতেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তারিখ ২৩ মে। কংগ্রেসও যাবে ওদের ইস্তাহারও যাবে। দেশের জনতা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
কিছু সময় আগে একইমঞ্চে বলতে শুনেছিলাম, মোদী হঠাও, মোদী হঠাও। মোদীকে গালি দিয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজ্য থেকে নেতারা এসেছিলেন কলকাতার জলসায়। শুধু মোদীকে হঠাতে। কী অপরাধ করেছে মোদী? গরিবদের ঘর দেওয়া অপরাধ? এটা অপরাধ হলে আমি করেছি। গরিবদের শৌচালয় দেওয়া অপরাধ হলে আমি করেছি। গরিবদের রান্নার গ্যাস দেওয়া অপরাধ হলে আমি করেছি। গরিবদের বিদ্যুত্ দেওয়া অপরাধ হলে আমি করেছি। পাঁচ বছরে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে গিয়েছে।
পশ্চিমবাংলার মতো ত্রিপুরাও বামেদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে। এটাও অসম্ভব ছিল। তা সম্ভব হয়েছে। আজ ত্রিপুরা দ্রুত গতিতে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। আজ পর্যন্ত সপ্তম বেতন কমিশনের সুবিধা দেয়নি সরকার। ত্রিপুরার বাম সরকারও সপ্তম বেতন কমিশনের সুবিধা পাননি।
পাঁচবছর আগে কেউ ভেবেছিল, সাধারণ গরিবদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ মিলতে পারে। গোটা পরিবারই এখন জামানতে রয়েছে। বাংলার জনতা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, আর তোলাবাজি বা গুন্ডাগিরি চলবে না।
এমন একটা বাংলা গড়ব, যা বাম ও তৃণমূলের গুন্ডারাজ থেকে মুক্ত হবে। ৭২ বছরের গর্ত ভরেছি। ২০১৯ সালে আপনাদের ভোটে উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছি। আপনাদের ভোট সন্ত্রাসবাদকে শেষ করতে বড় ভূমিকা নেবে। ২০১৪ সালে আপনার ভোটের জন্য পুরনো প্রকল্পগুলি গতি পেয়েছিল। এবার আপনাদের ভোটে আন্তর্জাতিক পরিকাঠামো নির্মিত হবে। ২০১৯ সালে ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে শীর্ষে পৌঁছবে। ২০১৪ সালে আপনাদের ভোটের জন্য দুর্নীতিগ্রস্তরা জেলের দরজায় পৌঁছে গিয়েছে। ২০১৯ সালে আপনাদের ভোটে দুর্নীতিগ্রস্তরা জেলের ভিতরে ঢুকবে। ২০১৪ সালে আপনাদের ভোটের জন্য মজবুত বুনিয়াদ তৈরি করেছি, ২০১৯ সালে এক নতুন ভারত তৈরি হবে। স্বামী বিবেকানন্দ দেশের উত্থানের আহ্বান করেছিলেন। বলেছিলেন, আগামী ৫০ বছর ভারত মাকে নিজের আরাধ্য করে নাও। সেই মন্ত্র গ্রহণ করেছিলেন বিপ্লবীরা। স্বাধীনতার পর ৫০ বছর এই দেশ স্বামীজির মন্ত্রে চলতে পারলে গোটা দুনিয়ায় শীর্ষে চলে যেত দেশ। ভারত মা শীর্ষ আসনে থাকতেন।
গণতন্ত্রের আড়ালে দেশে চলত পরিবারতন্ত্র। গণতন্ত্রের বয়স তো এই দেশে মাত্র ১৫-১৬ বছর। ৭২ বছরে এমন অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম নিয়ে কেন উন্নতদেশগুলির পাশে নেই দেশ! আমাদের কাছে প্রতিভা, পরিশ্রমী ও প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব ছিল না। ৫৫ বছরের পরিবারতন্ত্র পরিশ্রমী মানুষের গলা টিপে ধরেছে। ভোটব্যাঙ্কের জন্য গরিবদের স্বপ্ন ধ্বংস করেছে পরিবারতন্ত্র। জাতপাতের বিষ ছড়িয়েছে। সেনার শৌর্যে দালালির গ্রহণ লাগিয়েছে। বাংলাও আজ পরিবারতন্ত্রের বোঝায় চাপা পড়ে গিয়েছে। পিসি-ভাইপো মিলে লুটে খাচ্ছেন।
বাংলার মাটি দেশভক্তদের। ইংরেজদের থেকে মুক্তি দিয়েছিল। গণতন্ত্রকে মজবুত করার কাজ করবে দেশ। আমার উপরে অনেক ঋণ এই মাটির। জীবনের একটা সময় সব কিছু ছেড়ে একটা স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এই বাংলার মাটিই আমায় আদেশ দিয়েছিল, দেশের সেবাই আমার জীবন। রামকৃষ্ণ মিশনের আত্মাস্থানন্দ আমায় লালন-পালন করেছিলেন। তাঁর আদেশে আমি এই সেবার দুনিয়ায় চলে এসেছে। জীবনের সবকিছু উত্সর্গ করেছি দেশমাতৃকার জন্য। যতক্ষণ না গরিবের স্বপ্ন পূরণ করি, শান্তিতে থাকব না।
মেধার জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে। পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। সেনার আধুনিকীকরণ করতে হবে। আত্মনির্ভর করতে হবে। ৭২ বছরের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। আগামী ৫ বছর আমাদের এটাই সংকল্প। আমাদের একটাই চিন্তা, দেশের উন্নতি ও গরিবদের উত্থান। আমাদের পাশে রয়েছে চৌকিদার।