`স্পিড ব্রেকার` বনাম `এক্সপায়ারি বাবু`: মোদীকে ঝাঁঝালো জবাব মমতার
শিলিগুড়ির সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার উন্নয়নের 'স্পিড ব্রেকার' বলে উল্লেখ করে দাবি করেন, "দিদির গরিবদের জন্য চিন্তা নেই। গরিবি নিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন।" যার পাল্টা মোদীকে 'এক্সপায়ারি বাবু' বলে দিনহাটার সভায় কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বলেন, "এক্সপায়ারি বাবু আপনি বলেছেন, আমরা গরিবের জন্য কিচ্ছুটি করিনি! আপনি কী করেছেন? ক্ষমতা থাকলে পাবলিক মিটিং ডাকুন। একে মঞ্চে একে অপরকে উত্তর দেব।"
বাম, কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এদিন 'জগাই মাধাই' বলে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেন, "এরা একই থালার বন্ধু।" দিনহাটার সভা থেকে মোদীকে পাল্টা কটাক্ষ ফিরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটের সময় সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপিকে আমি জগাই-মাধাই-গদাই বলেছিলাম। আমার স্লোগান বলছ কেন? নিজের কিছু তৈরি কর।"
প্রধানমন্ত্রী তোপ দাগেন, "গরিবের টাকায় চিটফান্ড হয়েছে। সেই টাকা দিদি ও তাঁর সঙ্গীরা লুঠ করেছে।" নরেন্দ্র মোদীর এই দাবির প্রেক্ষিতে তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আমার সময়ে চিটফান্ড? প্রমাণ করতে না পারলে মানুষ টেনে নিয়ে জেলে ভরবে। ডোন্ট টেল লাই মিস্টার এক্সপায়ারি প্রাইম মিনিস্টার।"
ব্রিগেডের সভায় মোদী বলেন, "সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক বা মহাকাশে স্ট্রাইক, আগে মানুষের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু গত ৫ বছরে সব অসম্ভব-ই সম্ভব হয়েছে দেশের মানুষের আশীর্বাদে।" দিনহাটার সভা থেকে মোদীকে মমতার হঁশিয়ারি, "জনগণ এবার ভোটারস্ট্রাইক করবে বিজেপিকে।" মমতা বলেন, "আমরা জাতীয়তাবাদী, মোদীবাবু তুমি ফ্যাসিস্ট। ইউ আর হেটারিস্ট।"
মোদীর অভিযোগ, বাংলার মানুষকে কেন্দ্রীয় বিভিন্ন যোজনার সুফল থেকে বঞ্চিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। পশ্চিমবঙ্গের ৭০ লক্ষ কৃষকের উন্নয়নে 'ব্রেক লাগিয়েছেন দিদি'। পশ্চিমবঙ্গে 'কিষাণ সম্মান' যোজনা, 'আষুষ্মান ভারত' চালু করতে দেয়নি। মোদীর অভিযোগ উড়িয়ে মমতা দাবি করেন, রাজ্য সরকারের 'কৃষক বন্ধু' প্রকল্প টুকেছে কেন্দ্র। গরিবদের বিনামূল্যে চিকিত্সার জন্য 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্প চালু করেছে। যার ১০০ শতাংশ-ই রাজ্য সরকার দিচ্ছে।
শিলিগুড়ির সভা থেকে এদিন এনআরসি ইস্যু নিয়েও সরব হন মোদী। বলেন, "এনআরসি নিয়ে অপ্রপ্রচার চলছে। গোর্খা ভাইদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। যাঁরা শরণার্থী তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না। তাঁদের সমস্যা দূর করা হবে। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের ছাড়া হবে না।" দিনহাটার সভা থেকে মমতা পাল্টা বলেন, "এখানে এনআরসি করবে? একটা আগে পেয়ে দেখাও। এনআরসি নাম করে নমঃশূদ্র তাড়াও? বাঁচতে চাইলে মোদীকে তাড়ান।"
এদিন বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেকে দার্জিলিং ও পাহাড়বাসীর মানুষের প্রতি 'সংবেদনশীল' বলে উল্লেখ করেন। তোপ দাগেন, "চা বাগানগুলির অবস্থা ভালো নয়। আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। বেকার যুবকদের চাকরি নেই।" যার জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশ্ন, "রাজবংশীদের জন্য কী করেছেন? লজ্জা করে না? এক্সপায়ারি তুমি নাকি চা বাগান নিয়ে ভাবছ? আগে করেছিলে কিছু?"
"প্রার্থী যে-ই হোন, আমাকে ভোট দিন।" দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজেপি প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার ডাক দেন মোদী। দিনহাটার সভা থেকে পাল্টা বিজেপিকে বয়কটের ডাক দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, "প্রত্যেকটা ভোট বিজেপির বিরুদ্ধে দিন। জোড়া ফুলে ভোট দিন। দিল্লিকে দেখিয়ে দিন। মোদীকে কবর দিন। দিল্লিকে বাংলা চায় না। দিল্লি বাংলাকে চায়। এবার দিল্লি দখল করতে হবে। তাই বিয়াল্লিশে ৪২।"
ভারতীয় সেনাকে শক্তিশালী করার জন্য বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মোদীকে 'দাঙ্গাবাজ' বলে সেনার উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা পরামর্শ, "বিজেপির কথা শুনবেন না।"